সাহিত্য

শহীদুল্লাহর নিয়োগে বাধা দেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

ভুঁইয়া ইকবাল

১৯২১ এর ১লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম চালু হয়েছিল। তার কয়েক মাস আগে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী উপাচার্য পি জে হার্টগকে লেখা এক চিঠিতে ঢাকায় যোগদানের অভিপ্রায়ে যে সব কারণ উল্লেখ করেন তার অন্যতম (my pleasure to being associated with yourself) পাঠকের মনে পড়বে শাস্ত্রী মহোদয়ের বিখ্যাত রচনা “তৈল”।
সূচনা লগ্নে সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগে সংস্কৃতের শিক্ষক পদ ছিল দুটি, বাংলায় একটি। শহীদুল্লাহ তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের গবেষণা সহকারী। তিনি ঢাকায় রিডার পদে আবেদন করেন। তখন বাংলায় ওই পদ না থাকায় শাস্ত্রী তাকে লেকচারার পদে নিয়োগ দেন (তখন লেকচারার ও রিডারের মধ্যবর্তী সিনিয়র লেকচারার পদ ছিল না। শহীদুল্লাহ রিডারের বেতন ভাতা দাবি করেন।
বিভাগীয় অধ্যক্ষ শাস্ত্রী তখন শহীদুল্লাহর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে উপাচার্যকে এক চিঠিতে লেখেন, শহীদুল্লাহকে বর্ধিত বেতনে নেওয়া যাবে না। বরং ঢাকা কলেজের সংস্কৃতের লেকচারার অক্ষয়কুমার দত্তগুপ্তকে নিযুক্ত করা হোক। শাস্ত্রী কারণ দেখান দত্তগুপ্ত ঢাকাইয়া মানুষ এবং ঢাকার ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত শহীদুল্লাহর ব্যক্তিগত নথিতে শাস্ত্রী মশাইয়ের অশাস্ত্রীয় মন্তব্য: [অক্ষয়কুমার ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র নামে এক নোট বইয়ের লেখক] is a good Bengali writer and a good critic. He is very popular among the students of Dacca. মনে হয় তখন থেকেই আঞ্চলিকতার বীজ রোপিত হয় হার্টগের বাগানে শাস্ত্রীদের প্রয়াসে। Very popular among the students of Dacca- এই কথার ভিত্তি কী? কোনো জরিপ হয়েছিল কি?
শিক্ষক নিয়োগে ছাত্রদের টেনে আনার সেই কী সূচনা? ১৯৭২ সালে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় নিয়োগ দানের জন্যে মনোনয়ন দেয়া হলে কী প্রতিক্রিয়া হয় সেই স্মৃতিচারণ করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান: “ একদল ছাত্র অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপাচার্যের বাড়ি চড়াও হলো, নির্বাচক মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের বাসায় গিয়েও তার খোঁজ করলো। আরেকজন সদস্য সৈয়দ আলী আহসানকে ফোন করে গালমন্দ করবো কেউ কেউ, জানতে চাইলো আমি কেন আমার স্ত্রী বিধবা করতে চাই। ”( সূত্র: আনিসুজ্জামান, বিপুলা পৃথিবী, প্রথমা প্রকাশন ২০১৫, পৃ-৫২) সেকালের ছাত্রশিক্ষকদের মনে পড়বে কয়েকজন শিক্ষকের প্ররোচনায় ওই সশস্ত্র ছাত্রদল শিক্ষক নিয়োগে এভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল।
উপাচার্যকে লেখা হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর চিঠি থেকে মনে হয় ‘বাবু চেঞ্জেস হিজ মাইন্ড’। তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে শহীদুল্লাহর নিয়োগে বিরোধিতা করেন। বিরোধিতায় ব্যর্থ হলেও পরে তিন বছর কর্মকালে তিনি শহীদুল্লাহর প্রতি বিরুপ ছিলেন না।

( লেখাটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে সংগৃহিত )

tawhid

Recent Posts

টেকনাফের পাহাড়ে জেল ফেরত যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের পাহাড়ে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ১০ দিন আগে ‘জেল ফেরত’ এক যুবকের…

17 hours ago

টেকনাফে ৭ লাখ টাকা মালামাল নিলামে সর্বোচ্চ ডাককারি স্থল বন্দরের বিশিষ্ট আমদানি ও রপ্তানি কারক সিআইপি ওমর ফারুক

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের শুল্ক গুদামের সরকারি ৭ লাখ টাকা নানা পণ্য ৬ লাখ ৯০…

2 days ago

টেকনাফের নিকটবর্তী মিয়ানমারের ‘লালদিয়া’ নিয়ন্ত্রণে তীব্র সংঘাত : গুলি আসছে স্থলবন্দর ও আশে-পাশের এলাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের লালদিয়া নিয়ন্ত্রণে তীব্র সংঘাত চলছে। নাফনদীর টেকনাফের জালিয়ারদিয়া…

2 days ago

কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাসেদকে গ্রেপ্তার করা…

2 days ago

রামুতে বড় ভাই হত্যা মামলায় ছোট্ট ভাই গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : রামুতে বড় ভাই হত্যা মামলায় ছোট ভাই আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫।…

2 days ago

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ এক রোহিঙ্গা আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার আশ্রয় শিবিরে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে এপিবিএন…

2 days ago