রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক রক সিটিতে হওয়া ‘বার্নিং ম্যান’ উৎসবের আদলে কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপি ‘বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল’।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল নাচগানে জমজমাট এই উৎসবে মুগ্ধ ১১ দেশের বিদেশি পর্যটকরা। উৎসব ঘিরে আয়োজন করা হয় জমকালো আয়োজন।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নিরিবিলি প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে বিকেল ৫টায় বালুচরে শুরু হয় সানসেট ও মুন ইটিং পার্টির আয়োজন। যেখানে তৈরি হয় ডিম আকৃতির মঞ্চ। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিদেশি শিল্পীদের চলছে পরিবেশনা। এ সময় মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে নাচের আসর। একই সঙ্গে সৈকতের আকাশে উড়ানো হয় ঘুড়িও।
সৈকতে কথা হয় ২০১৭ সালে মিস বাংলাদেশ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় শিরোপাধারী জেসিয়া ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল কক্সবাজারে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। এই ধরণের আয়োজন বিশ^ দরবারে উপস্থাপন করা খুবই প্রয়োজন। এক পাশে পাহাড়ের সারি, অন্য পাশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত। এর মধ্যে সাগরতীরে বসে আন্তর্জাতিক মানের একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান উপভোগ করা সৌভাগ্যের ব্যাপার। পর্যটনশিল্পের বিকাশে এ রকম উৎসব আরও বেশি বেশি হওয়া উচিত।
সেখানে কথা হয় রাশিয়া থেকে আসা পর্যটক লিজিয়া লিংকা নামের এক তরুণের সঙ্গে। জীবনে প্রথমবার তিনি বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছেন। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের কথা শুনে তিনি ঢাকা থেকে কক্সবাজারের মারমেইডে ছুটে এসেছেন। তিনি বলেন, বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল বেশ উপভোগ করছেন তিনি। নেচে-গেয়ে বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য ছিল দারুণ।
এদিকে সূর্যাস্তের পর নান্দনিকভাবে নির্মিত কাঁকড়াসদৃশ মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক উৎসব। সেখানে ৩ পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে আসা ম্রো, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, তরুণীরা পরিবেশন করেন ছাতানৃত্য ও বোতলনৃত্য। আর কক্সবাজারের রাখাইন তরুণীরা পরিবেশন করেন থালা নৃত্য। সাগরতীরে বসে আন্তর্জাতিক মানের ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ ভ্রমণপিপাসুরা।
সপরিবার উৎসব উপভোগ করেন কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল। তিনি বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশে এই ধরণের আয়োজন বড় ভূমিকা রাখছে। বিদেশি পর্যটক টানতে এ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন আরও করা উচিত।
উৎসবে অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, হাঙ্গেরিসহ ১১টি দেশের বিদেশি পর্যটক। সঙ্গে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী। উৎসবে চলছে রকমারি খাবারের আয়োজন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রদর্শিত হবে এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব বুসানের সেরা পুরস্কারজয়ী ‘বলী, দ্য রেসলার’।
বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের আয়োজক সামিহা আলম চৌধুরী বৃষ্টি বলেন, উৎসবে ১১টি দেশের অন্তত ১১০ জন বিদেশি পর্যটকসহ অন্তত ৪০০ জন অংশ নিয়েছেন। সমুদ্রতীরে নিরিবিলি পরিবেশে আনন্দ-উল্লাস করতে পেরে সবাই খুশি। কক্সবাজারের পর্যটনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই আয়োজন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের এই উৎসব চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের বø্যাক রক সিটির বার্নিং ম্যান প্রজেক্টের আদলে মারমেইড বিচ রিসোর্টের এই আয়োজন সাজানো হয়েছে।
সামিহা আলম চৌধুরী বৃষ্টি আরও বলেন, নাচগানের পাশাপাশি ফায়ার শোসহ নানা অ্যাকটিভিটি দর্শকদের মাতিয়ে তুলছে। রোমাঞ্চকর নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন অংশগ্রহণকারীরা। শিল্পকর্ম, স্থাপনা এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েও নতুন এক অভিজ্ঞতা উপভোগ করছেন সবাই। উৎসবের কিউরেটর হিসেবে যুক্ত রয়েছেন খ্যাতিমান জাপানি ফেস্টিভ্যাল আর্কিটেক্ট এবং লাইটিং ডিজাইনার জিরো এন্দো।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বার্নিং ম্যান’ উৎসব যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার ব্ল্যাক রক সিটির মরুভূমিতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, উদ্যোক্তা ও দর্শকেরা একত্র হন। সৃজনশীলতা, মুক্ত পরিবেশ এবং স্বাধীনতা—এগুলোই হচ্ছে উৎসবের মূলমন্ত্র। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল সেই একই প্রেরণায় আয়োজিত হচ্ছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply