বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারে ৫ বছরে এইডস আক্রান্ত ৭৯৩ জন, মারা গেছে ১২০ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারে বছরান্তে এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশংকাজনক হারে। সেই সাথে বাড়ছে আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যাও। এতে পর্যটনের প্রধান কেন্দ্র হওয়ায় এই রোগটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা।

এইডস রোগীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও ) ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজে যৌনকর্মি হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে রোহিঙ্গা তরুণীদের। তাদের সঙ্গে অনিরাপদ মিলনে বাড়ছে এইডসের সংক্রমণ। এতে বছরান্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মধ্যে আশংকাজনক হারে সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের দেওয়া তথ্য মতে, বিগত ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় মোট এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৪৮১ জন এবং চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পরবর্তী পাঁচ বছরে ৭৯৩ জন। এতে বিগত ৫ বছরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনের কাছাকাছি।

এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে বিগত ৫ বছরে পূর্ববর্তী ৫ বছরের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে দ্বিগুনের বেশী। এতে বিগত ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জন এবং পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১২০ জন।

জেলায় এইডস আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশেরই বসবাস উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। বিগত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, মোট আক্রান্ত ১ হাজার ২৭৪ জনের মধ্যে ১ হাজার ১০৩ জন রোহিঙ্গা এবং ১৭১ জন স্থানীয় বাংলাদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ৫১৩ জন, নারী ৭৫৭ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জেলায় বছরান্তে এইডস আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আর সেটা স্থানীয় বাসিন্দা এবং রোহিঙ্গা নাগরিক উভয়ের ক্ষেত্রেই। তাতে বিগত ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আক্রান্ত স্থানীয় বাসিন্দার সংখ্যা ছিল ৭৪ জন। পরবর্তী ৫ বছর অর্থাৎ ২০২৪ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ জন। এছাড়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আক্রান্ত রোহিঙ্গা নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৪০৭ জন। আর পরবর্তী ৫ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬৯৬ জন।

এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান বলেন, “ কক্সবাজারে এইসআইভি আক্রান্তের হার বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। প্রতিবছরই বাড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিগত ৫ বছরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের তুলনায় দেড় থেকে দুইগুনের বেশী। “

তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক এইসআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জেলার যেখানেই আক্রান্ত হোক পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য আক্রান্তদের জেলা সদর হাসপাতালে সেবা নিতে আসতে হয়।

এদিকে এইসআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসা ও সেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার জেরে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকের আগমনের পর থেকে কক্সবাজারে প্রতিবছরই বাড়ছে এইডস আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা। এইসআইভি বিস্তারের প্রধানতম কারণ, রোহিঙ্গাদের মধ্যে রোগটি সম্পর্কে অসচেতনতা ও অনিরাপদ যৌন মিলন।

তবে এইসআইভি নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজে অন্তত ৫ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়ত রয়েছে। তারা অনিরাপদভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটক এবং স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে। এছাড়া শহরের লালদীঘির পাড় কেন্দ্রিক কিছু সসংখ্যক আবাসিক হোটেলেও যৌনকর্মিদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। তাদের অনেকে এইসআইভি বহন করছে; এটা তারা জানেই না।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলা ও প্রতিরোধে কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা ভুঁইয়া বলেন, “ মিয়ানমার এইডস রোগের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ঘরে ঘরে এ রোগের সংক্রমণরোধে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। “

এছাড়া জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর এর সহযোগিতায় এইসআইভি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এইসআইভি সংক্রমণের উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি নিয়ে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন, এইডস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচার ও কাউন্সিলিং ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888