বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

দেশবাসী প্রকৃত নির্বাচন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার চান

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট

বাংলাদেশের ছাত্রদের অতি শান্তিপূর্ণ কোটা বিরোধী আন্দোলন স্বল্প সময়ে নজিরবিহীন রক্তক্ষয়ের মাধ্যমে ছাত্রজনতার গণবিস্ফোরণে রূপ নিলে এক দফা পদত্যাগের দাবীতে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। এই দেশে ১৯৫২ সালের, ১৯৬২সালের, ১৯৬৯ সালের, ১৯৯০ সালে গণআন্দোলন মানুষ দেখেছেন। সবগুলো আন্দোলনেই মূলত ছাত্রদের অংশগ্রহন ছিল বেশী। নারী, শিশু, বুড়ো, শ্রমজীবী মানুষের নির্ভয়ে স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন এই বারের মত কখনও ছিল না। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনীর বাঙ্গালীদের ওপর নির্বিচার গণহত্যা শুরু করলে নিরস্ত্র জনগোষ্ঠী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করলে তাতে ছাত্রজনতার সাথে নারী-শিশু, কৃষক-শ্রমিক,ব্যাঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন, লাখ লাখ বাঙ্গালী শহীদ ও আহত হয়েছিলেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, কে বা কারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সে বিতর্ক ৫৩ বছর পরেও চলমান আছে।

বিগত ১৫ বছরের অধিক সময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লাগাতার হামলা-মামলা, জেলজুলুম, হত্যা-গুম ও আয়নাঘরের ভয়ভীতির সংস্কৃতি তৈরী করে ভোটারবিহীন নির্বাচন, ভুয়া নির্বাচন,পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে চালানো স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্রজনতার নিরস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে শত শত নির্ভিক ছাত্রজনতা শহীদ হয়েছেন। এখনও প্রকৃত শহীদ ও আহতের সংখ্যা গণনা করে চুড়ান্ত করা হয় নাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাসকে যেমন নির্লজ্জ ও অপরাধজনকভাবে দলীয়করণ ও পরিবারকরণ করা হয়েছিল,২০২৪ সালে নির্ভিক ছাত্রদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ছাত্রজনতার দেশীয় স্বৈরাচার বিরোধী দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও হীন স্বার্থে দলীয়করণ করার অপচেষ্টা দেখে আমজনতা স্তম্বিত,অসন্তোষ্ট। এটা অনস্বীকার্য যে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে সকল বিরোধী দলের সক্রিয় সমর্থন ছিল,অবদান ছিল। বিএনপি মিডিয়ায় প্রকাশ করছে তাদের কতজন শহীদ হয়েছেন। জামাত-শিবিরও তাদের কতজন কর্মী শহীদ হয়েছেন তার সংখ্যা প্রকাশ করছেন। অন্যান্য বিরোধী দলগুলোও তাদের কতজন কর্মী শহীদ হয়েছেন বা আহত হয়েছেন তা জোর গলায় প্রচার করছেন। জনগণ বিরোধী নেতাদের মেধাবী ও কৌশলী আচরণের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, কথাগুলো ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রকাশ করার জন্য। বিগত ১৫ বছর ধরে বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন,গণতন্ত্র,মানবাধিকার,ন্যায় বিচার ও সুশাসন দাবী করার কারণে জেল-জুলুম,হত্যা-গুম সহ নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিরোধী দলগুলো লাগাতার আন্দোলনে ছিল, কখনও সরব,কখনও নিরব বা কখনও গরম, কখনও নরম হলেও। কিন্তু বিরোধী দলের ডাকে সাড়া দিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ব্যতীত সাধারণ মানুষ ১৫ বছর ধরে রাস্তায় নামেন নাই। তারাও ক্ষমতায় থাকার সময় হামলা-মামলা,দলীয়করণ,লুটপাট,দুর্নীতি,অর্থ পাচার করেছেন তা আওয়ামী লীগ আমলের মত ব্যাপক আকারে না হলেও। তারা আবার আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে আগের মত অপশাসন ও দুর্নীতি,অর্থ পাচার করার জন্য আন্দোলন করছে সেই সন্দেহের কারণে বা অনাস্থা ও বিশ্বাসহীনতার কারণে আমজনতা রাস্তায় নামেন নাই, জনগণ তা বলছেন। কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের বা সমন্বয়কদের দলীয়করণ বা ঘুষ-দুর্নীতির মত খারাপ পূর্ব ইতিহাস না থাকায় সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আস্থা,বিশ্বাস স্থাপন করে বন্যার ¯্রােতের মত ২০২৪ এর ছাত্রজনতার গণআন্দোলনে রাস্তায় নেমেছেন। ছাত্রদের বিশ্বাস করেছিলেন বলেই সাম্প্রতিক বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে নারী-শিশুসহ দেশের সর্বস্থরের জনগণ কোটি কোটি টাকা চাঁদা তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। জনগণের এই আলোচনা,কল্পনাজল্পনা কি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন,অবিশ্বাসযোগ্য?

অবশেষে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলছেন,আমরা শহীদদের দলীয় নামে ভাগ করতে চাই না। শহীদরা জাতির সম্পদ, ইজ্জতের চুড়ান্ত সীমায় তাঁদের রাখতে চাই। প্রত্যেক শহীদ পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে সরকারী চাকুরী প্রদান করতে হবে। কথাগুলো দেশবাসীকে স্বস্তি দিচ্ছে,আশাবাদী করছে।

দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলো তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা করতে ড.মুহাম্মদ ইউনুস সরকারের প্রতি দাবী জানাচ্ছে। সময়সীমা বেধে দিচ্ছেন কেউ ছয় মাস,কেউ এক বছর কেউ দেড় বছর বা দুই বছর। মনে রাখতে হবে বর্তমান সরকার জনসমর্থিত ও বৈধ সরকার। পতিত স্বৈরসরকার দ্বারা বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত,নির্যাতিত ড. ইউনুস বিদেশে থাকার সময় ছাত্রজনতার আহŸানে সাড়া দিয়ে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজী হয়েছিলেন, তাতে দেশের একজন লোকও দ্বিমত করেন নাই। সুপ্রীমকোর্ট মতামত দিয়েছেন কথিত নির্বাচিত সরকার পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলে এই ধরনের অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন সম্পূর্ণ বৈধ। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত, পদায়ন করা দিনের ভোট রাতে করতে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা, আমলা, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির বর্তমান কর্মকর্তাদের স্বপদে বহাল রেখে অবাধ, নিরপেক্ষ,সুষ্ঠু নির্বাচন কি প্রত্যাশা করা যায়? যারা লাগাতার ১৫বছর ক্ষমতায় ছিল তাদের হাজার হাজার কোটি লুন্ঠিত টাকা, যারা তারও আগে ক্ষমতায় ছিল তাদেরও কোটি কোটি লুন্ঠিত টাকা জমা আছে। রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে ব্যবহার করে ব্যাংক ঋণের নামে বা আমদানী-রপ্তানীর অজুহাতে লক্ষ কোটি টাকা পাচারকারী ব্যবসায়ীরা বা দলীয়করণের মোড়কে জনগণের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা সাবেক আমলারা আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভোটারদের নগদ টাকা দিয়ে আগের মত কিনতে চাইলে কোন দেশপ্রেমিক, সৎ রাজনীতিবিদের পক্ষে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে সফল হওয়া কি সম্ভব? বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন কি প্রকৃতপক্ষে সম্ভব? পতিত স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা ছলে,বলে,কৌশলে আবার সরকার গঠনের সুযোগ পেলে সংবিধান লংঘন করে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিযোগে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের নেতা ও সহযোগীদের বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করবে না?

বিগত আমি-ডামি পাতানো নির্বাচনের সময় আমরা দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় লিখেছিলাম এই নির্বাচনের ফলে পবিত্র জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের একটি ক্লাব হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের পর হয়েছিলও তাই। রাজনৈতিক দলগুলো দেশে গণতন্ত্র পুণপতিষ্ঠা চায়। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অভ্যন্তরিণ গণতন্ত্র কি চালু আছে? জামায়াত ও কমিউনিষ্ট দলগুলো ব্যতীত সব দলই প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর মত। দলীয় প্রধান দ্বারা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা নিযুক্ত হন, কর্মীদের দ্বারা নেতা নির্বাচিত হন না। তাতেও নগদনারায়ন, দুর্নীতি হয় বলে ব্যাপক জনশ্রæতি আছে। দলীয়করণকৃত বিচারক ও আইন কর্মকর্তারা সরকারের চাহিদা অনুযায়ী মামলার বিচার পরিচালনা ও রায় প্রদান করেন। তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া বিচারক মোতাহার হোসেন ও প্রধান বিচারপতি এস,কে,সিনহার পত্রিকায় প্রদত্ত সাক্ষাৎকার আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপের নমুনার প্রমাণ দেয়। দলীয়করণ করা বিচারক, আইন কর্মকর্তা ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দিয়ে ন্যায় বিচার কখনও আশা করা যায় না। দেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি তাঁর অভিভাষণে যথার্থ বলেছেন দেশে শাসনের আইন নয়, প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

লেখক : একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা, সাবেক পিপি ও সভাপতি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888