মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

অপহৃত শিশুর হদিস নেই ৪ দিনেও, ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি : ৫ রোহিঙ্গা গ্রেফতার

টেকনাফ প্রতিবেদক : টেকনাফ উপজেলার হ্নীলায় অপহৃত মাদ্রাসা পড়–য়া শিশু শিক্ষার্থী ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ (৬) চারদিন পরও উদ্ধার হয়নি। এর মধ্যে পুলিশ অপহরণ ঘটনায় ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্য সহ চক্রের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যেই অপহৃত শিশুর পরিবারে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে চক্রটি। এনিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছে শিশুর স্বজনরা।

বুধবার বিকালে এ তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি।

গ্রেপ্তাররা হল- টেকনাফ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ খানের স্ত্রী উম্মে সালমা (২৪), একই ক্যাম্পের বাসিন্দা লায়লা বেগম, কোবরা বেগম ও মোহাম্মদ হাশেম এবং উদ্ধার করা অটোরিকশার চালক নাছির উদ্দিন (২৬)। এরা সকলেই রোহিঙ্গা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

অপহৃত শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ (৬) টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব পানখালী এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা (রাঃ) মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। গত ৯ মার্চ দুপুরে ক্লাশ শেষে বাড়ী ফিরছিল আবু হুরাইরা (রাঃ) মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থী ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ। মাদ্রাসার কিছুটা দূরে পৌঁছলে পথিমধ্যে তাকে থামিয়ে বোরকা পরিহিত এক নারী দুর্ঘটনায় মায়ের মাথা ফেটে যাওয়ার কথা জানায়। পরে হাসপাতালে মাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ’কে ওই নারী অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় ভূক্তভোগী শিশুর মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের পর গত ১০ মার্চ মামলাটি নথিভূক্ত করেন।

ওসমান গনি বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অপহৃত শিশু ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ এর মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অপহরণ ঘটনার কাজে ব্যবহৃত অটোরিকশাটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। পরে গত ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাছির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পরবর্তীতে সিসিটিভির ফুটেজ ও গ্রেপ্তার অটোরিকশা চালকের স্বীকারোক্তি মতে গত ১২ মার্চ টেকনাফ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ অপহরণকারি চক্রের আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

ওসি বলেন, “গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে উম্মে সালমা বুধবার ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে বুধবার (১৩ মার্চ) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্য মতে জড়িত অন্যদেরও ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।”

ভূক্তভোগী শিশুর মা নুরজাহান বেগম বলেন, কারা, কি কারণে তার সসবদানকে অপহরণ করেছে তা জানেন না। তবে মঙ্গলবার রাতে তার সন্তানকে ছেড়ে দিতে মোবাইল ফোন কল করে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। পরে বিষয়টি তিনি পুলিশকে অবহিত করেছেন।

এদিকে ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার ও অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্রকে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানান ওসি ওসমান গনি।

এদিকে, গত ৫ ফেব্রæয়ারি কক্সবাজার সদর থেকে অপহৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রাশিকুল ইসলাম (১৫) কে এখন উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও এর মধ্যে র‌্যাব এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‌্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী
জানিয়েছেন, ২ মার্চ রাতে উখিয়া উপজেলার থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরা হলেন, উখিয়ার ১২ নম্বর ক্যাম্পের আলী হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৩৪), একই ক্যাম্পের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে আমিন উল্লাহ (১৯) ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরী পাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. তারেক (১৮)।

গত ৫ ফেব্রæয়ারি চকরিয়া ফাঁসিয়াখালি দারুল উলুম মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাশিকুল ইসলাম নিখোঁজ হন উল্লেখ করে র‌্যাব ১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, সম্প্রতি নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মা কক্সবাজার সদরের নাছিমা ইয়াসমিন একটি অভিযোগ করেন। যেখানে বলা হয়েছে, চকরিয়া ফাঁসিয়াখালি দারুল উলুম মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীতে পড়ূয়া তার বড় ছেলে রাশিকুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে ছুটিতে বাড়ি আসে গত ৫ ফেব্রæয়ারি। ওই দিন বিকালে তার ছেলে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ছেলেকে নিকটতম আত্মীয় স্বজন ও সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুজি করেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে গত ৭ ফেব্রæয়ারি অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে জানায় যে, রাশিকুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে দুই লক্ষ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হবে। এরপর একাধিক মোবাইল নম্বরে অপহরণকারীদের পর্যায়ক্রমে একাধিকবারে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়া হয়। এরপর পুনরায় আরও দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে চক্রটি। এব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করা হয়েছে। যার নং ৭৬১, তাং ১০/০২/২০২৪।

অভিযোগটি র‌্যাব পাওয়ার পরপরই নানাভাবে কাজ শুরু করে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তি সহ নানা সহযোগিতায় ২ মার্চ রাতে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ১টি স্মার্ট ফোন, ১টি বাটন ফোন ও ১টি রবি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়। আটকরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছে মো. তারেক কৌশলে রাশিকুল ইসলামকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওখান থেকে পরিকল্পনা মোতাবেক একটি সিএনজি যোগে টেকনাফে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ অপহরণ চক্রটির অপর এক সদস্যের নিকট হন্তান্তর করে। ওই ৫ ফেব্রæয়ারি রাতেই এই শিক্ষার্থীকে মিয়ানমারে পাচার করে দেয়া হয়। ওই অপহৃত শিক্ষার্থী এখন মিয়ানমারের জিন্মি।

এব্যাপারে মা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করে ৩ জনকে কক্সবাজার সদর থানায় সোপর্দ করে। এরা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে থাকলেও উদ্ধার হয়নি এ শিশুটি।

এনিয়ে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ এর মার্চ শুধু মাত্র টেকনাফে কেন্দ্রিক অপহরণের ঘটনা ঘটে ১০১ টি। যার মধ্যে ৫১ জন স্থানীয় এবং ৫০ জন রোহিঙ্গা। যেখানে ৪৬ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888