শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) বিদ্যুৎখাতে ব্যবহারের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপরেও অসহনীয় চাপ তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে অবিলম্বে প্রস্তাবিত এলএনজি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও টার্মিনাল বাতিল করে সমপরিমাণ অর্থ সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
সোমবার কক্সবাজারের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলএনজি সম্প্রসারণ : সমস্যা ও করনীয়’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই আহবান জানান।
সংসপ্তক, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্ম জোটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রতি বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি আমদানি করা হয়। এর একটা বড় অংশ চলে যায় এলএনজি আমদানিতে। চালু থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের ঘাটতি থাকার পরও বিগত চার বছরে সরকার ১১টি এলএনজি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। এর চারটি নির্মাণাধীন ও সাতটি নির্মাণ কাজ শুরু করার অপেক্ষায় আছে।
সভায় বক্তারা বলেন, গ্যাসের ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুটি বেসরকারি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয় যার সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতিদিন সাড়ে চার লাখ ডলার দিতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে ৭৯.৩৩ টাকা ব্যয় হলেও বিদ্যুৎখাতে বিক্রি করা হচ্ছে ১৪.৭৫ টাকায়। ফলে প্রতিঘন মিটারে লোকসান হচ্ছে ৬৪.৫৮ টাকা। এলএনজি সরবরাহ না করতে পারলে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে। বিদ্যুৎ না পেলেও সরকার কেক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদেরকে ১৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলে ক্যাপাসিটি চার্জও বাড়ছে হুহু করে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবার পর এলএনজি ও পেট্রোলিয়ামের সরবরাহ ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, এ অবস্থায় নতুন এলএনজি টার্মিনাল ও এলএনজি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে তা দেশের অর্থনীতির গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি প্রতিবছর প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার জ্বালানি আমদানির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপরেও অসহনীয় চাপ তৈরি হচ্ছে। জাতীয় বাজেটের উপর জ্বালানি আমদানি ও ক্যাপাসিটি চার্জের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও শিক্ষার মতো অতি জরুরিখাতে বরাদ্দ কমছে।
সভায় মুল প্রবন্ধে বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোটের সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, উৎপাদন, পরিবহণ ও ব্যবহার-প্রক্রিয়ায় এলএনজি দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ৯৫০ গ্রামকার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে নির্গত হয়, যা প্রায় কয়লার কাছাকাছি। অপরদিকে, সৌর বায়ু শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে নির্গমন হয় না বললেই চলে। এছাড়া সৌর বায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য কোনো জ্বালানি দরকার হয়না, যা প্রতিবছর কমপক্ষে দুই বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়না বিধায় বিদেশে পাচারের সম্ভাবনা ও শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে।
তাই আলোচনা সভায় বক্তারা অবিলম্বে প্রস্তাবিত এলএনজি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও টার্মিনাল বাতিল করে সমপরিমাণ অর্থ সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ করার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সংসপ্তকের প্রধান নির্বাহী লিটন চৌধুরী, মুক্তি কক্সবাজার এর প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে, নোঙর এর প্রধান নির্বাহী দিদারুল আলম রাশেদ, এসকেএমডির প্রধান নির্বাহী বাহলুল আলম, উন্নয়নকর্মী রাফিয়া সুলতানা, পরিবেশকর্মী মো. ইলিয়াস, মিজানুর রহমান বাহাদুর, মাহবুব আলম প্রিন্স, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক নুপা আলম, সাংবাদিক নুরুল আমিন সিদ্দিকি প্রমূখ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply