শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জের ধরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় আবারও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শনিবার রাতে থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। টানা কয়েকদিন শান্ত থাকলেও নতুন করে গোলাগুলির শব্দ শোনেছেন বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের মানুষ। একই সঙ্গে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি শনিবার দিনভর শান্ত থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত আবারও মিয়ানমার অভ্যন্তর হতে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
সীমান্তের ওপারে অব্যাহত সংঘাতময় পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আশংকা জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি টানা সপ্তাহ ধরে শান্ত থাকলেও রবিবার ভোর ৪ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে থেমে থেমে এসব গুলি বর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। ওখানে কি হচ্ছে তা পরিষ্কারভাবে বলা যাচ্ছে না। ফলে সীমান্তের মানুষের মনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যার পর সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ জালিয়াপাড়ার পূর্বেপাশে মিয়ানমারের পর পর কয়েকটি মর্টার শেলের বিকট শব্দে কেঁপে শাহপরীর দ্বীপ। পরে রাতের বিভিন্ন সময়ের পর রবিবার ভোর রাত পর্যন্ত থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলার সীমান্তে কোনো ধরনের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে বিকট শব্দ আর শোনা যায়নি। টানা তিনদিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার বিকাল ও ভোর রাতে এবং শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে আবারও গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসায় সীমান্তে বসবাসকারি বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্কে দেখা দিয়েছে।
তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে সাবরাং ইউনিয়ন এর বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মংডু শহরের ফাদন চা, নুরুল্লাহপাড়া, কাদির বিল ও শায়রাপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে রাতভর ৪০/৪৫ টি মর্টার শেল ও থেমে থেমে গুলি বর্ষণ হয়েছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, শনিবার দিনভর হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে কাঞ্জরপাড়া, খারাংখালী ও উনচিপ্রাং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে থেমে গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ ভেসে আসে। এতে সীমান্তবাসীরা রাতভর আতংকে কাটিয়েছেলে।
তবে রবিবার ভোর থেকে হোয়াইক্যং সীমান্তের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান, স্থানীয় এ ইউপি সদস্য।
স্থানীয়দের ধারণার বরাতে মোহাম্মদ আলম বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী নবী হোসেনের লোকজন মিয়ানমার সীমান্ত অভ্যন্তরে আত্মগোপনে রয়েছে। ধারণা করার হচ্ছে, শুক্রবার সকালে মিয়ানমারের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো তাদের মধ্যে ঘটনা হবে পারে। সীমান্তের ওপাড়ে এখনও যুদ্ধ চলমান আছে। ফলে সেখান থেকে এখনও গোলাগুলির বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এতে সীমান্ত এলাকায় চিংড়ি খামারের শ্রমিকরা কাজে যেতে ভয় পাচ্ছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপির) চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, টানা কয়েকদিন শান্ত ছিল সীমান্ত। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া ও খারাংখালী সীমান্তে নাফ নদীর ওপাড়ে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনছেন স্থানীয় লোকজন। তারা বিষয়টি আমাকে জানালে আমিও ইউএনও’কে অবহিত করেছি।
শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়ার আব্দুল গনি ও জাফর আলম বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দের আওয়াজ শোনা যায়নি। এতে অশান্ত পরিবেশ ও ভয়ভীতি অনেকটা কেটে উঠছিল। এমন সময় সন্ধ্যার পর থেকে একের পর একটি বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে শাহপরীর দ্বীপ। এতে করে সীমান্তে বসবাসকারি মানুষগুলো আতঙ্কে গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এসময়ে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে শুক্রবার রাত শনিবার ভোর রাতে কয়েকটি সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল। এরপর শনিবার দিনভর সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত হোয়াইক্যং এবং শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বিকট শব্দ শোনা গেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তর সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এপরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির অনেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে । ছোট ছোট দলে রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ইতিমধ্যে রুখে দিয়েছে বিজিবি।
এদিকে, সীমান্তে চলমান সংঘাতে জের ধরে ঘুমধুম সীমান্তবর্তী ৫ টি সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি মাথায় এনে মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে স্কুল গুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ বিষয়ে আজ-কালের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply