শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমার থেকে শতভাগ বাকিতে বাংলাদেশে আনা হয় মাদকের চালান। যে সব মাদক নির্ধারিত এজেন্টের কাছে বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করে জমানো হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা যা বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয়কর্মীদের মাধ্যমে টেকনাফের সংঘবদ্ধ হুন্ডি কারবারিদের কাছে পাঠায়। আর হুন্ডি কারবারিরা টেকনাফের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রামের খাতুরগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দেন। যে টাকা ডলারে রূপান্তর হয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া হয়ে পৌঁছে যায় মিয়ানমারের অবস্থানরত মাদকের ডিলারদের কাছে।
শুক্রবার ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গহীন পাহাড়ে পরিচালিত অভিযানে ইয়াবা, আইস ও অস্ত্র সহ আটক ২ মাদক কারবারি র্যাব ১৫- কে এসব জানিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে র্যাব ১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য স্বীকার করেন র্যাব অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন।
আটকরা হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ওয়াব্রাং এলাকায় বসবাসকারি আবদুল কাদেরের ছেলে মো. রফিক আহমেদ (৪০) ও মৌলভীপাড়ায় বসবাসকারি নুর আলমের ছেলে ফরিদ আলম (২৮)।
র্যাব জানিয়েছে, দুই জনই মিয়ানমারের নাগরিক হলেও স্থানীয়ভাবে বসবাস করেন এবং মাদক চোরাকারবারির অন্যতম হোতা ও ইয়াবার গডফাদার খ্যাত নবী হোসেনের অন্যতম সহযোগী।
এ অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ইয়াবা, ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ২টি ওয়ান শুটার গান এবং ৪ রাউন্ড কার্তুজ।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, গোপন সংবাদে রঙ্গিখালীর গহীন পাহাড়ে রাত ২ টা থেকে ভোর পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ইয়াবা, আইস ও অস্ত্র সহ আটক করা হয় ২ জনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে রফিক ছোট বেলায় তার পিতা-মাতার সাথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এবং ওয়াব্রাং সুইচপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করে। প্রথমে নাফনদীতে মাছ ধরা শুরু করলেও পরে স্থানীয় ও মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। রফিকের চাহিদা মত মাদকের চালান প্রথমে নবী হোসেনের মাধ্যমে এনে রঙ্গিখালির গহীন পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ৬/৭ দিনের জন্য মজুদ করে। পরে তার সিন্ডিকেটের সহযোগীরা মজুদকৃত মাদকের চালান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নির্ধারিত এজেন্টদের নিকট সুবিধাজনক সময়ে সরবরাহ করতো। মাদকের চালান সরবরাহের পর তারা পাহাড়ী আস্তানা ত্যাগ করতো। পরে নতুন চালান এনে নতুন আস্তানা তৈরি করে এই প্রক্রিয়ায় সরবরাহ অব্যাহত করতো।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন জানান, রফিক জানিয়েছে তার নেতৃত্বে পাশ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যবসায়ী সিকদারপাড়া এলাকার আইয়াজ এবং নাকফুরা এলাকার সলিম ও জুনায়েদের নিকট মাদকের চাহিদা করা হতো। চাহিদা মোতাবেক পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে নিয়ে আসা মাদক তার নির্ধারিত এজেন্টের নিকট বিক্রয় এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ বার্মাইয়া রফিক তার এক নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। একইভাবে ক্রয়কৃত মাদকের মূল্য বাবদ ক্যাশ টাকা তার ঐ নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট প্রেরণ করতো। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উক্ত টাকা বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয়কর্মীদের মাধ্যমে টেকনাফস্থ কতিপয় হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নিকট পাঠাতো। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রাপ্ত টাকা টেকনাফস্থ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করতো। পরবর্তীতে এই টাকা ডলারে রূপান্তর করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া হয়ে হাত বদলের পর মিয়ানমারের মাদক ব্যাবসায়ীদের হাতে পৌঁছাতো। গ্রেফতারকৃত রফিক মাদক ব্যবসার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ এবং বাংলাদেশের মাদক ব্যাবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও মূল সমন্বয়কারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করতো। রফিকের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক’সহ ৩টি মামলা রয়েছে।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, ফরিদ আলম এই রফিকের অন্যতম সহযোগী। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তার নেতৃত্বে পরিচালিত মাদক সিন্ডিকেটের বেশকিছু সদস্যের বিস্তারিত তথ্যাদি ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের আটকে র্যাবের অভিযানিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে অপর এক অভিযানে শুক্রবার সকালে টেকনাফের হাবিরপাড়ার সৈয়দুর রহমানের বসত ঘরে ৫ শথ বোতল ফেনসিডিল সহ ২ জনকে আটক করেছে র্যাব।
আটকরা হলেন, ওই এলাকার আলিচাঁনের ছেলে সৈয়দুর রহমান (৪৯) ও তাঁর ভাই আজিজুর রহমান (৪৪)।
র্যাব অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, এদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে সাগর পথে টেকনাফে ফেনসিডিল আনতো। উভয়া অভিযানের ব্যাপারে মামলা করে আটক ৪ জনকে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply