শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ অপরাহ্ন
বিগত ৩০ নভেম্বর ২০২৩ বিকাল ৪.৩০ঘটিকার সময় কক্সবাজার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দীনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি(বিমস) এর উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ও কক্সবাজার জেলার বিচার বিভাগের সমন্বয়ে বিচারক-আইনজীবীদের মেডিয়েশন বিষয়ক এক অভুতপূর্ব কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত মেডিয়েটর বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের মাননীয় বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল। অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের গুজরাট ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক অপূর্বা প্যাটেল ও বিমসের মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক ইউসরা আইও হাসুনা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিমসের চেয়ারম্যান সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট এস এন গোস্বামী এবং মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অ্যাক্রিডিটেড মেডিয়টর ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট নওশাদ ইফতেখার। কর্মশালায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোঃ নূরে আলম, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোঃ আবু হান্নান,অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৫ম আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা,কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান, এডভোকেট মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী ও সুপ্রীমকোর্টের সহকারী এ্যটর্নি জেনারেল এডভোকেট আনিচ উল মাওয়া প্রমূখ।
প্রধান অতিথি বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল বলেছেন,প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা মামলাজট নিরসন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে। সেই বিকল্প হতে পারে একমাত্র মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা। তিনি আরো বলেন, কোনো নতুন মামলা গ্রহন না করে বর্তমানে বিচার বিভাগে যে মামলার পাহাড় জমে আছে সেগুলো নিস্পত্তি করতেই ২৫/৩০ বছর লেগে যাবে। আবার আরবিট্রেশনেও বিরোধ বা মামলা নিস্পত্তি করতে ২/৩ বছর সময় লেগে যায়। আরবিট্রেশনে খরচ বেশী। একমাত্র মেডিয়েশনের মাধ্যমে কম সময়ে,কম খরচে বিরোধ নিস্পত্তি করা যায়। তাই বিচার ব্যবস্থায় মেডিয়েশনের প্রয়োগ এখন সময়ের দাবী। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে মেডিয়েশনের জন্য আলাদা আইন করা হয়েছে। মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে পৃথিবীর অনেক দেশ মামলাজট নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে নতুন রিফর্ম করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,সব বিট্রিশ আইনে এখনও বিচার চলছে এটা ভাবতে অবাক লাগে। সরকারের প্রতি দ্রæত মেডিয়েশন আইন করার জন্য আহŸান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, সুপ্রীমকোর্ট কয়েকটি সার্কুলারের মাধ্যমে মেডিয়েশন প্রয়োগ করার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া সুপ্রীমকোর্টে মেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিচারক-আইনজীবী মিলে এই মেডিয়েশন পদ্ধতিকে এগিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বিগত ২১ মার্চ ২০২১খ্রিঃ তারিখ অধস্তন দেওয়ানী আদালতসমূহ কর্তৃক ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ৮৯এ,৮৯সি ধারা এবং অর্থ ঋণ আদালত আইন,২০০৩ এর ২২ ধারা, ২০০১ সালের আরবিট্রেশন এক্টের ২২(১) ধারায় এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন,২০০৬ এর ২১০ ধারাসহ অন্যান্য আইনে বর্ণিত মধ্যস্থতা সংক্রান্ত বিধানাবলী প্রতিপালন প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলার জারী করেছে। কক্সবাজারের দেওয়ানী আদালতসমূহের সিনিয়র এডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান সেই সার্কুলার সম্পর্কে আইনজীবীদের যথাযথভাবে জানানো হয় নাই বলে অসন্তোষ্টি প্রকাশ করেন। এডভোকেট আকতার উদ্দিন হেলালী দেওয়ানী মামলা দায়ের করার আগেই মধ্যস্থতার মাধ্যমে একটি বিরোধ নিস্পত্তির কথা উল্লেখ করে প্রশংসিত হন। সেদিনের কর্মশালা ছিল মেডিয়েশন বিষয়ক, যা সম্পূর্ণ দেওয়ানী মামলা সংক্রান্ত।
আমার ৪৫বছর উকালতি জীবনে মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা সংক্রান্ত প্রথম একটি কর্মশালায় উপস্থিত হয়ে দেশী বিদেশী বিচারপতি,বিচারক,আইনজ্ঞ,আইনজীবীদের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ,আন্তরিক ও দিলখোলা বক্তব্য শুনে একটু আবেগাচ্ছন্ন হয়েছিলাম। মেডিয়েশন সংক্রান্ত কাজের জন্য আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক প্রাপ্ত বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালকে কাছে পেয়ে আমি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষন করে মনের কথা বললাম, বাংলাদেশে আদালতসমূহে মামলাজটের মধ্যে ফৌজদারী মামলার সংখ্যাই বেশী। কিন্তু ফৌজদারী মামলা সংক্রান্তে মধ্যস্থতা করার সুযোগ আছে খুব কম। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির দ্বিতীয় তপশীলে উল্লেখিত আপোষযোগ্য অপরাধের মামলাগুলোই ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী আপোষে নিস্পত্তি করা যায়। ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে কেবল মাত্র কার্যবিধিতে আপোষযোগ্য হিসেবে উল্লেখিত ধারার অপরাধের মামলাগুলোই মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা করার সামান্য সুযোগ আছে। তাই বর্তমানে ফৌজদারী কার্যবিধির তপশীলে অ-আপোষযোগ্য অপরাধের মামলাগুলোও সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ মেডিয়েশনের বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে যাতে দ্রæত আপোষ নিস্পত্তি করতে পারে সেই মর্মে নতুন মেডিয়েশন আইন করলে তাতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করি।
লেখক : একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা, সাবেক পিপি ও সভাপতি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply