শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদের ২৯৪ নম্বর আসনটি কক্সবাজার ১। কক্সবাজার জেলার ৪ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি গঠিত হয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নিয়ে।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার এক আসনটি বর্তমান ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩০২ জন। যেখানে চকরিয়া উপজেলার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩০২ জন আর পেকুয়া উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার। এই ২ উপজেলায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা হবে ১৫৮ টি।
চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার এই আসনটি নানা কারণে বিএনপি-জামায়াতের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা পরবর্তি ১১ টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন মাত্র ২ বার। এ ছাড়া একটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আরেকটি জোট গত নির্বাচনে একবার জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্য হয়েছেন।
যার মধ্যে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামীগের প্রার্থী শামশুদ্দিন আহমদ চৌধুরী, দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৯ সালে বিএনপির মাহমুদুল করিম চৌধুরী, তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির এ এইচ সালাহউদ্দিন মাহমুদ, চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ১৯৮৮ সালে আওয়ামীলীগের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল গণি, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের এনামুল হক মঞ্জু, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ১৯৯৬ সালের ফেব্রæয়ারি ও জুন, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ, নবম সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালে সালাহউদ্দিন আহমদের স্ত্রী বিএনপির হাসিনা আহমেদ, দশম সংসদ নির্বাচনে ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয পার্টির মোহাম্মদ ইলিয়াছ এবং সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগের জাফর আলম সংসদ সংসদ নির্বাচিত হন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এসে এবার শুরু হয়েছে নতুন সমীকরণ ও যোজন বিয়োজনের খেলা। বহুল আলোচিত এই আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। যেখান থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, সালাহ উদ্দিন আহমেদ আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ৩ বার প্রতিদ্বন্ধীতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। ওই নির্বাচনে ৭২ হাজার ৫৯৪ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি’র সালাহ উদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগের সালাহ উদ্দিন আহমেদ পেয়েছিলেন ৫০ হাজার ৮২৯ ভোট। নির্বাচনটিতে উল্লেখ যোগ্য ভোটে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন জামায়াত প্রার্থী এনামুল হক মঞ্জু। তিনি পেয়েছিলেন ২৭ হাজার ৫৪ ভোট।
২০০১ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০২ ভোটে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির সালাহ উদ্দিন আহমদ। ওই নির্বাচনে ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭৪ হাজার ২৯৭ ভোটে দ্বিতীয় হয়েছিলেন আওয়ামীলীগের সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটিতে বিএনপির সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিবর্তে প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। ওই নির্বাচনে বিএনপির হাসিনা আহমেদ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫১২ ভোটে নির্বাচিত হন। আর আওয়ামীলীগের সালাহ উদ্দিন আহমেদ পান ১ লাখ ২১ হাজার ১১১ ভোট।
এর পরের ২ টি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাননি সালাহ উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু এবার এসে আবারও তাকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। ফলে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আওয়ামীলীগের এবারের প্রার্থী নিয়ে যেন কৌতুহলের শেষ নেই।
কেননা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন এই আসনটিতে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ১৩ জন প্রার্থী । তার মধ্যে আওয়ামীলীগের সালাহ উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমকে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
এ আসনটিতে মনোনয়ন পত্র দাখিলকারি অপর ১১ প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও আবদুল আউয়াল মামুন, জাতীয় পার্টির এ. এইচ. সালাউদ্দীন মাহমুদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, জাতীয় পার্টির হোসনে আরা, এমপি জাফরের পুত্র তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন, আওয়ামীলীগের সাবেক নেতা শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ, শফিকুল ইসলাম, কমর উদ্দীন ও শাহ নেওয়াজ চৌধুরী।
এর মধ্যে নানা বিবেচনায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এই আসনটি থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন। তিনি জানিয়েছেন, দলের চেয়ারম্যান কক্সবাজার ১ এবং তিনি মহাসচিব হিসেবে কক্সবাজার ৩ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। জনগণের কল্যাণ করতে এবং একটি প্রতিদ্বন্ধীতামুলক নির্বাচনের জন্য তারা প্রার্থী হয়েছেন।
এই আসনের জাতীয় পার্টির (জেপি) এ. এইচ. সালাউদ্দীন মাহমুদ ও জাতীয় পার্টির হোসনে আরা মুলক আওয়ামীলীগের জোটগত আসন পেতে প্রার্থী হয়েছেন। দুই জনই জোটগত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত এ আসনটি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত প্রার্থী সংসদ সদস্য জাফর আলম। তিনি জানান, সুষ্ঠু ভোটে তিনি নির্বাচিত হবেন এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবেন।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা আলমগীর চৌধুরী জানান, এ আসনটিতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন। সাধারণ নেতা-কর্মী ও ভোটাররা তার পক্ষে। তিনিই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। গত ৫ বছরের দলীয় কোন্দল, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরোধ, সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জন সহ নানা অভিযোগ থাকায় জাফর আলম মনোনয়ন পাননি। ইতিমধ্যে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেছেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইতিমধ্যে জাফর আলম সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। নির্বাচনেও তাঁর চরিত্র বদল হয়নি। একের পর এক হামলা, ভাংচুর ও নেতা-কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। যা উচিত না। এটা প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যে এই দুই প্রার্থীকে আচরণবিধি লংঘনের দায়ে তলব করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচন পূর্ব নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্গনজনিত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে দুই প্রার্থীকে।
বৃহস্পতিবার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর নৌকা প্রতিকের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদ প্রার্থীতা পাওয়া উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হারবাং ইনানী থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে চকরিয়া পৌর বাসটার্মিনাল এলাকায় জনসমাবেশ করে। এতে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা লঙ্গিত হয়েছে। একইভাবে বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম ২৭ নভেম্বর নেতাকর্মীদের নিয়ে সিস্টেম চকরিয়া কমপ্লেক্স এর সামনে জনসমাবেশ করেন। যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা লঙ্গন।
আদেশে আগামী ৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টার মধ্যে দুই প্রার্থীকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply