বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

সৈকতে ‘প্লাস্টিক বর্জ্য’ নিয়ে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ প্রদর্শনী

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্লাস্টিক বর্জ্য যা প্লাস্টিক দূষণে রূপ নিয়ে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে মারাত্মক হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতির কারণ হিসেবে দূষণের তালিকায় জোরালোভাবে যে নামটি আলোচিত হয়, তা হলো প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতোটাই বাড়ছে, যার কারণে জলজ প্রাণী, খাদ্য শৃঙ্খল ও মানুষের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগনকে সচেতন করতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ নামে শুরু হয়েছে ভিন্নধর্মী এক প্রদর্শনী।

বুধবার সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সী গাল পয়েন্টে গিয়ে দেখা মিলেছে ভিন্নধর্মী সেই প্রদর্শনীর। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য ‍দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিক দূষণের কারণে ক্ষতিকর নানা দিক। যেখানে তৈরি করা হয়েছে মানুষের আবাসস্থল বাসাবাড়ী ও আবাসিক হোটেল। সেখান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফোয়ারার আকারে বেরিয়ে ভূমিতে, জলাশয়ে বা সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে; যা জাহাজের মতো করে ভাসতে থাকে। সামুদ্রিক মাছ, প্রাণী, গাংচিল তাদের খাবার মনে করে তা গ্রহন করে যা পরবর্তীতে হজম হয়না। যার কারণে অকালে মারা যায় নিষ্পাপ প্রাণী ও পাখিগুলো। বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় যত্রতত্র প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এইভাবেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে দর্শনার্থীদের দেখানো চেষ্টা করা হয়েছে নীরবে-অগোচরে, অজান্তে প্লাস্টিক কিভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে।

কক্সবাজার সৈকতের বালির উপর নির্মিত হয় পাঁচটি ভাস্কর্য। যার মধ্যে রয়েছে বাড়ি, জাহাজ, কাছিম, সামুদ্রিক কোরাল ও গাংচিল। প্লাস্টিকের কারণে এসব প্রাণীর ভয়াবহ অবস্থা দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছে এবং সচেতন হবার প্রতিজ্ঞা করছেন।

এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। বিদ্যানন্দের বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন জানান, “কক্সবাজারে শীত মৌসুমে সারাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসে। এই সময় পর্যটকরা যেন যত্রতত্র প্লাস্টিক না ফেলেন এবং প্লাস্টিক রিসাইকেল নিয়ে সচেতন হন, এই বিষয়ে সচেতন করতেই মূলত এই আয়োজন। বিদ্যানন্দ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হলেও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে পাশে পেয়েছে বলে সম্ভব হয়েছে এমন ভিন্নধর্মী আইডিয়া বাস্তবায়ন করা। আশা করছি, বিনোদনের পাশাপাশি মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনে এই প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

আগত পর্যটক কামরুল হাসান বলেন, প্লাস্টিক এভাবে আমাদের ক্ষতি করছে আগে তো কোনদিন এভাবে চিন্তা করেনি। এখন বালিয়াড়িতে এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি, প্লাস্টিক মারাত্মক ক্ষতিকর।

আরেক পর্যটক ইয়াছিন আরা চুমকি বলেন, আমরা সৈকতে বেড়াতে এসে প্লাস্টিক বোতল, চায়ের কাপ কিংবা খাবারের প্যাকেট যত্রতত্র বালিয়াড়িতে ফেলে দি। কিন্তু চিন্তা করেনি, এই প্লাস্টিক সমুদ্র গিয়ে সমুদ্র দূষণের পাশাপাশি সামুদ্রিক প্রাণীসহ জীব বৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করি। এখন থেকে এসব অভ্যাস পরিত্যাগ করব, যা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিখতে পারলাম।

বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে সৈকতের সী গাল পয়েন্টে বেলুন উড়িয়ে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ নমুনা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। এসময় তিনি একটি প্লাস্টিক জমা দিয়ে প্রদর্শনী স্থানে প্রবেশ করেন এবং পুরো প্রদর্শনী ঘুরে ঘুরে দেখেন।

এর আগে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, বড় বড় প্লাস্টিকের টুকরো ও পরিত্যক্ত জালে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে কাছিমের মৃত্যু হয়। মরে পড়ে থাকা মাছ কিংবা গাংচিলের পেটে ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল আর টুকরোগুলো বলে দেয় আমাদের অসচেতনভাবে ফেলে দেওয়া যত্রতত্র প্লাস্টিক সামগ্রীর দূষণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থান। ফলে নির্মমভাবে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য। এই কাজটি করার ক্ষেত্রে উপকরণ হিসেবে নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করে দর্শনার্র্থীদের দেখানো চেষ্টা করা হয়েছে। প্লাস্টিক কিভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন করছে। মূলত পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনাথীদের সচেতন করতে এই আয়োজন করা হয়েছে।

আর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় বর্জ্যগুলোর খাল, নালা, নদী হয়ে সর্বশেষ আশ্রয় হচ্ছে সমুদ্রে। প্লাস্টিকের মতো অপচনশীল উপকরণের দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা, মাটির উর্বরতা হ্রাস, সামুদ্রিক মাছ ও প্রানীর জন্য হুমকির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্লাস্টিক জাতীয় পন্য ব্যবহারে আরও বেশী সংযমী, সচেতন ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বনে জনগনকে উদ্ভুদ্ধ করতেই ভিন্নধর্মী এই প্রদর্শনী।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সী গাল পয়েন্টে চার মাস ব্যাপী চলবে ‘প্লাস্টিক সমুদ্র’ এর নমুনা প্রদর্শনী। ব্যবহার করা একটি খালি প্লাস্টিক বোতল মূল্য হিসেবে জমা দিয়ে প্রবেশ করা যাবে এই প্রদর্শনী দেখতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888