শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : গভীর সাগরে গিয়েছিল মাছ শিকারে, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কবলে পড়ে ভেঙ্গে যায় ট্রলারের পাখা। তারপর ইঞ্জিন বিকল হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ভাসতে থাকে সাগরে। ছেড়ে দেয় বেঁচে থাকার স্বপ্ন, কিন্তু শেষমেষ ৯৯৯ এ কলের মাধ্যমে ১৮ জেলেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় কোস্টগার্ড জাহাজ ‘মনসুর আলী’।
উদ্ধার করা এফবি মায়ের দোয়া নামের ফিশিং ট্রলার সহ ১৮ জেলেছে শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর কোস্টগার্ড স্টেশনের জেটিতে আনা হয়।
যেখানে কথা হয় এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের জেলে ইমাম হোসেনের সাখথ। তিনি জানান, ৪ বছর ধরে সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করছেন। যা বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালান। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কবলে পড়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন বাঁচার স্বপ্ন। ট্রলারের পাখা ভেঙ্গে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় সাগরে ভাসছিলেন ঘন্টার পর ঘন্টা। জীবন যায় যায় অবস্থায় মনে পড়ে জরুরী সেবা ৯৯৯ এর কথা। অবশেষে ৯৯৯ এ কল দেয়ার ৪৮ ঘন্টা পর রাত ২ টার দিকে তাদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড জাহাজ মনসুর আলী।
ট্রলারটির মাঝি বাচাঘোনার এলাকার রুহুল আমিন বলেন, কক্সবাজার শহরের মাঝির ঘাট থেকে এফবি মায়ের দোয়া ট্রলার মাছ শিকারে সাগরে যায় ১৪ নভেম্বর। কক্সবাজার থেকে ১০০ কিলোমিটার গভীর সাগরে মাছ শিকার করে ১৮ জেলে। কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, সঙ্গে উত্তাল সাগর। উপকূলে ফিরে আসার পথেই ভেঙ্গে যায় পাখা, তারপর ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কবলে তুমুল বাতাস, বিশাল ঢেউয়ের আঘাত ও ঝড়ো হাওয়া পড়ে ১৮ জেলের জীবন।
রুহুল আমিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সাগর ভয়াবহ হয়ে উঠে। জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরব সেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ রহমতে, রাখে আল্লাহ মারে কে এক বচন রয়েছে; ঠিক তেমনি আল্লাহ আমাদেরকে বাঁচিয়েছেন। লাখো শুকরিয়া আল্লাহ কাছে, আর ধন্যবাদ জানায় কোস্টগার্ডকে। সঠিক সময়ে দিয়ে তারা আমাদের উদ্ধার করেছেন।
জেলেদের অবস্থা জানতে পেরে তাদেরকে উদ্ধার করার জন্য ট্রলার নিয়ে সাগরে গিয়েছিলেন ট্রলার মালিক খুরুশকুল এলাকার মোস্তাক আহমদ। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফিরে আসতে হয় কূলে। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলেরা উদ্ধার হওয়ায় ধন্যবাদ জানান তিনি।
রাত ২টার দিকে উদ্ধার করলেও তাদেরকে কক্সবাজার উপকূলে আনা হয় শনিবার সকাল ১০টায়। কোস্টগার্ড কক্সবাজার স্টেশনের ইনচার্জ লে. কমান্ডার এম সালমান সিদ্দিকী স্বাধীন বলেন, গত ১৪ নভেম্বর এফ বি “মায়ের দোয়া’’ নামক একটি ফিশিং ট্রলার কক্সবাজারের মাঝির ঘাট হতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে গমন করে। একপর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি এর প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সমুদ্রে ভাসতে থাকে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে কোস্টগার্ড স্টেশন কক্সবাজার, ইনানী ও কোস্ট গার্ডের নিয়মিত টহল কার্য “অপারেশন সমুদ্র প্রহরায়” নিয়োজিত কোস্ট গার্ড জাহাজ মনসুর আলী এর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নুর মোহাম্মদ তারিক আজিজ এর নেতৃত্বে উত্তাল সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়।
“অভিযান চলাকালীন শনিবার রাত ০২টায় কক্সবাজার লাইট হাউজ থেকে আনুমানিক ২১ নটিক্যাল মাইল গভীরে সমুদ্র এলাকা হতে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে থাকা এফ বি মায়ের দোয়া নামক ফিশিং ট্রলারসহ ১৮ জন জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং খাবার সরবরাহ করা হয়। অতঃপর কোস্টগার্ড জাহাজ কর্তৃক জেলেসহ ট্রলারটিকে কক্সবাজার উপকূলে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে, কোস্টগার্ড কর্তৃক ফিশিং বোটের মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জেলেদের মালিকপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয় বলেও জানায় কোস্টগার্ড কর্মকর্তা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply