শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত ‘আখরি স্টেশন’ দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন। যেটির উপর ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানি উর্দু চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়েছিল। পরিচালক ছিলেন সুরুর বারাবাংকভি যিনি একই সাথে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্যও লিখেন এবং প্রযোজনাও করে ছিলেন। চলচ্চিত্রটিতে মুখ্য ভূমিকায় হারুন এবং রানি ছিলেন। শবনম-রাজ্জাক ছিলেন সহ-ভূমিকায়।
চলচ্চিত্রটি জামিল একজন তরুণ প্রকৌশলী পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়েতে বদলী হয়ে এসেছেন। রেলওয়ে স্টেশনে একজন মানসিক ভাবে অসুস্থ তরুণী প্রায়শ ঘোরাফেরা করে। জামিল জানতে পারে যে তার মানসিক অসুস্থতার পেছনে কাহিনী আছে। তরুণীর বিয়ে বাতিল হয়ে যায় পূর্বে কারণ তার পিতা বরপক্ষের দাবী করা যৌতুক দিতে ব্যর্থ হয়। তার পিতা মারা যায় এবং সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আর পুরো চলচ্চিত্রটির আখরি স্টেশন দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় অবস্থিত এই স্টেশনটি ১৯৩১ সালে নির্মাণ শেষ হয়েছিল। সেই স্টেশনটি আর আখরি স্টেশন থাকল না। এখন থেকে আখরি স্টেশন সমুদ্র শহর কক্সবাজার।
প্রকল্পের নথির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেগা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরবর্তীতে অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় বেশ কিছুদিন প্রকল্পটি থমকে থাকার পর ২০১৫ সালে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়। দোহাজারি-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় তমা কনসট্র্যাকসন্স কোম্পানি ২৬৮৮ কোটি টাকা এবং চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিইসসিসি ও দেশীয় ম্যাক্স কনসট্র্যাকসন্স ৩৫০২ কোটি টাকায় যথাক্রমে : এক ও দুই নম্বর লটের কাজ পায়। পরবর্তীতে ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
যা উদ্বোধন হচ্ছে ১১ নভেম্বর, শনিবার। যেটা কক্সবাজারকে বদলে দেবে এবং সমুদ্র শহর বাসি উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে।
কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের বলেন, স্বপ্নের রেল এখন পর্যটন শহর কক্সবাজারে। দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন এই রেলপথ আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। এজন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কক্সবাজারের একজন নাগরিক হিসাবে আমার অভিমত এই রেল পথ বাংলাদেশের উন্নয়নে যুগান্তকারি ঘটনা। বৃটিশ, পাকিস্তানের সুদীর্ঘ সময় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অর্ধশত বছরে যা হয়নি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার তা করে দেখালেন।
তিনি বলেন, এই রেল পথ কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পযর্টন কেন্দ্র হিসাবে পরিপূর্ণতা দেবে। বিদেশী পর্যটক আনতে সহায়ক হবে। শুধু শীতকালে নয়, বর্ষা সহ সারা মৌসুম পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণে উৎসাহিত হবে। কক্সবাজার এলাকায় উৎপাদিত পণ্য: মাছ, শুটকি, লবণ, পান, সবজি সহ নানা পণ্য পরিবহণে সুযোগ বাড়বে। বিদেশে রপ্তানির সুযোগ বাড়বে। কক্সবাজার সহ দেশের অর্থনীতিতে আমুল পরিবর্তন আসবে। এই রেল পথ মিয়ানমার, চায়না সহ এই অঞ্চলের সাথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের হাব হবে। আন্তর্জাতিক ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ব্যাপক হারে বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, এই রেল স্টেশনটি কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিবর্তন আনে নি। এই কক্সবাজারকে বদলে দেবে অস্বাভাবিকভাবে। এটির কারণে কক্সবাজার জেলা হয়ে উঠবে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন শিল্পের বিকাশ, এ জেলার অর্থনৈতিক পরিবর্তন, শিল্পের বিকাশ ঘটবে। কক্সবাজার হয়ে উঠবে আর বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, মৎস, লবণ, শুটকি, সবজি সহ নানান শিল্পের জন্য সহায়ক হবে এই রেল যোগাযোগ। যে নয়টি স্টেশন রয়েছে, সেসব উপজেলাতেও কর্মচঞ্চলতা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বাড়বে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply