শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
নুপা আলম : বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভরপর্যটন মৌসুমে পর্যটক শূন্য বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, গেলো এক সপ্তাহে কক্সবাজারের পর্যটনের সবখাতে পাঁচ’শো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। এসময় লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকে সাগরতীর। একই সঙ্গে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে জন্য বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমন হয়। এক পর্যটনের ভরমৌসুম হলেও কক্সবাজারে পর্যটকের দেখা নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েচে। যার কারণে বিপাকে সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক, ঘোড়াওয়ালা ও কিটকট ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১০টার সরেজমিন সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটক শূন্য কক্সবাজার সৈকত। চারদিকে সুনশান নীরবতা। ব্যস্ততা নেই সৈকতের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক-ওয়াটার বাইক চালক ও ঘোড়াওয়ালাদের। একই সঙ্গে বালিয়াড়িতে খালি পড়ে আছে কিটকটগুলো।
সৈকতপাড়ের ফটোগ্রাফার ইব্রাহীম বলেন, এবার পর্যটন মৌসুমে ভাল ব্যবসা হবে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখি ভর মৌসুমে পর্যটক শূন্য। গেলো ৫ দিন সৈকতে আসছি আর যাচ্ছি কোন আয় হচ্ছে না। কারণ হরতাল ও অবরোধের কারণে সৈকত এখন পর্যটক শূন্য।
বিচ চালক রহিম উল্লাহ বলেন, দুর্গাপূজার আগে প্রতিদিনই ৪ হাজার টাকা আয় করেছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় হামুন, বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধের কারণে গেলো এক সপ্তাহ ধরে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার সৈকত। যার কারণে বিচ বাইক নিয়ে সৈকতে এসে বসে আছি। পর্যটক না থাকায় ব্যবসা হচ্ছে না।
কিটকট ব্যবসায়ী আব্দু সবুর বলেন, বালিয়াড়িতে ২০ টি চেয়ার রয়েছে। গত ৫ দিনে ধরে ২০০ টাকার বেশি আয় করতে পারেনি। হরতাল-অবরোধে আমাদেরকে একদম শেষ করে দিয়েছে।
সৈকতপাড়ে রয়েছে সহ¯্রাধিক বার্মিজ পণ্যের দোকান। পর্যটক শূন্যতার কারণে ব্যস্ততা নেই এসব দোকানদারদেরও। তারা বলছেন, পর্যটন মৌসুমে শুরুতেই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের আচার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গেলো এক সপ্তাহ আগেও প্রতিদিনই ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার আচার পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন পর্যটক নেই বেচাবিক্রিও নেই। দোকান খুলে বসে আছি, সকাল থেকে এক টাকারও আচার বিক্রি করতে পারেনি।
ছাতা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন দুলাল বলেন, ছাতা মার্কেটে ২০০ মতো দোকান রয়েছে। এসব দোকানে প্রতিনিধি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বার্মিজ পণ্য বেচাবিক্রি হতো। কিন্তু এখন বেচাবিক্রি একদম নেই বললেই চলে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধে পর্যটক না থাকায় ব্যবসা হচ্ছে না। প্রতিদিনই ৩ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।
কক্সবাজারে রয়েছে ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস ও কটেজ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যটক না থাকায় নেমে এসেছে নীরবতা। আর বিএনপি-জামায়াতের হরতাল ও অবরোধে কক্সবাজারের পর্যটনখাতে প্রতিদিনই শতকোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে কক্সবাজারের পর্যটনখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় কক্সবাজার এখন পর্যটক শূন্য। যার ফলশ্রæতিতে কক্সবাজারের পর্যটনের সবখাতে প্রতিদিনই গড়ে ১০০ কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।
সেলিম নেওয়াজ আরও বলেন, হরতাল ও অবরোধ এভাবে অব্যাহত থাকলে আমরা ব্যবসায়ীরা একদম শেষ হয়ে যাব। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন হরতাল ও অবরোধের মতো কোন কর্মসূচি যাতে আর না দেয়।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply