বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আরও ঘনিভূত হয়ে পরিণত হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ঘণ্টায় একশ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ উপকূলের ৩১০ কিলোমিটারের মধ্যে।
ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বাড়ায় সংকেতও বাড়িয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। স্থানীয় হুঁশিয়ার সংকেত নামিয়ে দেশের চার বন্দরে দেখাতে বলা হয়েছে ‘বিপদ সংকেত’।
উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে শক্তি আরো বাড়িয়ে মঙ্গলবারই ‘হামুন’ পরিণত হতে পারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। তবে উপকূলে পৌঁছানোর আগে ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে এর শক্তি।
বুধবার দুপুরের দিকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের আকারে হামুন ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে 8৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ ছয় ঘণ্টায় এ ঘূর্ণিবায়ুর চক্র ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার গতিতে এগিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ আরও শক্তিশালী হয়ে হামুন পরিণত হতে পারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ওই অবস্থায় থাকতে পারে কয়েক ঘণ্টা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ কিছুটা দুর্বল হয়ে হামুন ফের প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ধীরে ধীরে আরো শক্তি হারিয়ে বুধবার ভোরের দিকে পরিণত হতে পারে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে।
ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস বলছে, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার বিকালের দিকে খেপুপাড়া ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। তখন বাতাসের শীক্ত থাকতে পারে ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার।
‘হামুন’ পরিণত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে; বন্দরে বিপদ সংকেত
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারও বুধবার বিকালের পর হামুনের উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনার কথা বলেছে। তবে তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপকূল অতিক্রম করার সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র থাকতে পারে চট্টগ্রামের ওপর।
আর বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ বুধবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-ট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিবাড়ের প্রভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাগর। উপকূলীয় অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি রয়েছে সোমবার থেকেই।
পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার বদলে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় সংকেত ব্যবস্থায় ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত মাত্রার দিক থেকে সমান, সংখ্যায় পার্থক্য হয় ঝড় বন্দরের কোন দিক দিয়ে যাবে তা বোঝানোর জন্য।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এরং অদুরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা/বাড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে ।
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগেও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমি ধস হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply