শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রধান বিচারপতির প্রত্যাশা ও দেশবাসীর প্রত্যাশা অভিন্ন

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট

দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে অবকাশ শেষে সুপ্রিমকোর্ট খোলার প্রথম দিনে রীতি অনুসারে প্রধান বিচারপতির বিচারকক্ষে সংবর্ধনা জানানো হয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন। পরে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ, প্রধান বিচারপতির পরিবারের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অনুষ্ঠান বর্জন করে আদালতের বাইরে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। সংবাদটি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ৯ অক্টোবর প্রথম পৃষ্টায় ’বিচার বিভাগ যেন রাজনীতিকরণ না হয়’ শিরোনামে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে।

উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ’আমি চাইব বিচার বিভাগ ও বিচারালয়কে যেন কোনভাবেই রাজনীতিকরণ করা না হয়’। প্রধান বিচারপতি দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করে বলেন, ’আমাদের বিচারব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে একটি দীর্ঘমেয়াদি জুডিসিয়াল প্ল্যান তৈরি করতে চাই’। তিনি আরো বলেন, এখানে বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিত এবং মেধাপুষ্ট দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই কেবল সুবিচারের লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে,তবেই বিচার বিভাগের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে। আমাদের সুপ্রিম কোর্টের অঙ্গন পারস্পরিক সহনশীলতা,সহমর্মিতা ও ভালোবাসায় আলোকিত হোক,এটিই আমার প্রত্যাশা’। প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি কথা একটু অপ্রিয় হলেও বলতে চাই,কোনো বিষয়ে ভালোভাবে না জেনে বা যথেচ্ছভাবে বিচারক ও আদালত সম্পর্কে কটু মন্তব্য মোটেই সভ্যতার ইঙ্গিত বহন করে না’। বিচারকের রায়ের সমালোচনা করার অধিকার বাকস্বাধীনতার একটি অংশ বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। উল্লেখিত সংবাদে প্রকাশিত প্রধান বিচারপতির প্রত্যাশা ও বক্তব্য বার বার পড়েছি,গভীরভাবে পূর্বাপর ভেবে দেখেছি, চিন্তা করেছি। কিন্তু নিম্ন আদালতে আইন পেশার গত ৪৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো আশার আলো না দেখে হতাশ হচ্ছি। এ ব্যাপারে কোনো আশাবাদী মন্তব্য করতে না পেরে শুধু নিজের অসহায়ত্ব অনুভব করছি।

দেশের প্রধান বিচারপতির সুপ্রিম কোর্টে প্রথম দিন,সংবর্ধনার দিন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অনুষ্ঠান বর্জন করে আদালতের বাইরে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার খবরও একই সংবাদে প্রকাশ হওয়ায় দেশের নিম্ন আদালতগুলোতে আইন পেশায় নিয়োজিত অর্ধলক্ষাধীন আইনজীবী ও ন্যায় বিচার প্রত্যাশী দেশের কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় জনগণ প্রধান বিচারপতির অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচিকে মারাত্মক অশনি সংক্ষেত মনে করে উদ্বিগ্ন হবেনই। দৃশ্যতঃ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে ও হীন দলীয় স্বার্থে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে এমন আত্মঘাতি বিভাজনের সংস্কৃতি তৈরী হলেও রাজনৈতিক নেতাদের উগ্রতা,ব্যর্থতা, হীনমন্যতা ও স্বার্থপরতার কারণে আপত কোন সমাধানের পথ না দেখে আমজনতা চরম হতাশ ও গভীর উদ্বিগ্ন। তারপরও জনগণ উচ্চ আদালত অঙ্গনের অবস্থা কেন এমন ঝগড়াটে ও অশান্ত হলো,এর সমাধান কিভাবে হতে পারে তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে আলাপ আলোচনা,তর্ক-বিতর্ক করছেন। সকলে একমত যে সবকিছুকে দলীয়করণ ও রাজনীতিকরণ প্রবণতা থেকেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবীদের একতার বুকে ছুরিকাঘাত ও আদালতের ভাবগম্ভীর নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির মাথায় কুঠারাঘাত করা হয়েছে।

দলীয়করণ ও রাজনীতিকরণ কখন থেকে শুরু হয়েছে তা নিয়েও ভিন্ন মত থাকতে পারে। তবে আমার যতটুকু মনে আছে আমি ১৯৯১ সালে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ও কক্সবাজার জেলার পাবলিক প্রসিকিউটার ছিলাম। এরশাদ সরকার বিরোধী সফল আন্দোলন শুরু করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি এডভোকেট শামসুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে আ,লীগ, বিএনপি, জামাতসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক আইনজীবীরা সরকারের বিরুদ্ধে একাত্ম হয়েছিলেন। আন্দোলনরত তিন জোটের নেতাদের মধ্যে কিছু ব্যাপারে ঐক্যমত হয়েছিল এরশাদ সরকারের পতনের পর যে দলই নির্বাচিত হউক না কেন দেশ রাষ্ট্র কোন নীতির ভিত্তিতে কিভাবে পরিচালিত হবে তার একটি রূপরেখা প্রস্তুত করা হয়েছিল যাতে আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বাক্ষর করেছিলেন বলে জনশ্রæতি আছে। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করার পরই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম গঠনের মাধ্যমে দলীয়করণ ও রাজনীতিকরণ শুরু করা হয়। তারপর আওয়ামী লীগও করেছে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ বা অন্য নামে। জামাতও করেছে। এখনও সেই দলীয়করণ ও রাজনীতিকরণ প্রবণতা এবং আইনজীবী সমিতি ও পবিত্র আদালত অঙ্গনে উগ্র রাজনৈতিক বিভাজনের সংস্কৃতি অব্যাহত আছে। আমি নিম্ন আদালতের একজন ছোট আইনজীবী হিসেবে তখনই এই দলীয়করণ,রাজনীতিকরণের প্রতিবাদ করে এই রাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বিচার বিভাগ তথা দেশ জাতির মারাত্মক ক্ষতি করবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করে পত্রিকায় কলাম লিখেছিলাম। নিন্দুকেরা বলেন মওদুদ,নাজমুল হুদা,সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী গং যাদের কুপরামর্শে দলীয়করণ নীতি শুরু করা হয়েছিল তারা সকলেই খালেদা জিয়াসহ আইন-আদালতকে দলীয়করণ ও রাজনীতিকরণের কুফল ভোগ করেছেন,ভিকটিম হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রায় ৬৫হাজার আইনজীবীর মধ্যে প্রায় দশ হাজার হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে উকালতি করেন। সাধারণতঃ তাদের মধ্য থেকেই বিচারপতি,অ্যাটর্নি জেনারেল,অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হয়ে থাকেন। দেশের প্রায় বিশ হাজার আইনজীবী দলীয়করণ প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত বলে অনুমান করা হয়। তাদের বিবেক সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। বাকী প্রায় ৪৫ হাজার আইনজীবী আওয়ামী লীগপন্থী বিভিন্ন আইনজীবী পরিষদ,জাতীয়তাবাদী আইনজীবী দল বা সম্প্রতি গঠিত ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের সাথে সরাসরি জড়িত নন। বাংলাদেশের দলীয়করণমুক্ত প্রায় ৪৫ হাজার মুক্ত বিবেকের স্বাধীন আইনজীবী তথা দেশবাসীর প্রত্যাশা ও প্রধান বিচারপতির প্রত্যাশার এক ও অভিন্ন, ’বিচার বিভাগ ও বিচারালয়কে যেন কোনভাবেই রাজনীতিকরণ করা না হয়’। কিন্তু নির্মম সত্য হলো রাজনৈতিক দলগুলো যারা যখন ক্ষমতায় ছিলো তারা বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণ করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল । রাজনীতিকরণ হতে আর বাকী কোথায় আছে? এখন প্রশ্ন হল কিভাবে নিম্ন আদালত প্রাঙ্গন থেকে উচ্চ আদালত অঙ্গন রাজনীতিমুক্ত করা যাবে?

নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ,ছবিসহ র্নিভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা,স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স তৈরী করা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান দাবী,নেতা-নেত্রীদের বক্তৃতার প্রধান বিষয় ও জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল। ক্ষমতায় গিয়ে সুযোগ পাওয়ার পরও কোন রাজনৈতিক দল তা করে নাই কেন? রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয় দাবীগুলো অনির্বাচিত, অরাজনৈতিক সরকারকে করতে হলো এবং তা আবার সকল রাজনৈতিক দলগুলো বিনা-প্রতিবাদে গ্রহন করে নিল কেন? এখন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? বিচার বিভাগ ও বিচারালয়কে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করবে কে বা কারা ?

লেখক : একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা, সাবেক পিপি ও সাবেক সভাপতি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888