শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের শাহেদুজ্জামান বাহাদুর। যাকে এলাকাবাসি ‘বন্দুক বাহাদুর’ হিসেবে চিনেন। আর এই ঘটনার নেপথ্যে হচ্ছেন শাহেদুজ্জামান বাহাদুর নামের কথায় কথায় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া কিছু ভিভিও এবং ছবির সূত্র ধরে এলাকাবাসির সাথে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদকের হাতে আসা ভিডিও এবং ছবিতে দু’নলা লম্বা বন্দুক হাতে একটি সুপারি বাগানে একজনকে ধাওয়া করছেন শাহেদুজ্জামান বাহাদুর নামের এই ব্যক্তি। যার এক পর্যায়ে যিনি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন তাকে গালিগালাজ করছেন। অপর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একটি গ্রামের বাজারে পিস্তল হাতে হেঁটে যাচ্ছেন একই ব্যক্তি।
এসব ভিডিও এবং ছবির সূত্র ধরে নিশ্চিত হওয়া গেছে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনকারি ব্যক্তি শাহেদুজ্জামান বাহাদুর। তিনি রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম গোয়ালিয়া পালং এলাকার বাসিন্দা। আর সুপারির বাগানের ভিডিওটি গত ২৫ সেপ্টেম্বরে দুপুরের আর পিস্তলের ছবিটি একই দিন বিকালে ধারণ করা।
ভিডিও দেখুন : https://www.facebook.com/Coxsbazartimes24/videos/6982313818466646
এলাকাবাসি জানিয়েছেন, এক সময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত মো. শাহেদুজ্জামান বাহাদুর গত ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। নৌকা প্রতীকের কাছে হেরে গেলেও তৈরি করেন একটি নিজস্ব বাহিনী। রোহিঙ্গা যুবকদের এনে এলাকায় নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এলাকার মানুষজনকে হুমকি ধমকি, মামলায় জড়ানোসহ নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে অস্ত্র হাতে প্রায়শ প্রকাশ্যে ঘোরে বেড়ান তিনি। এর আগে ২০২০ সালের ১৪ জুলাই অস্ত্রের মহড়ার ছবি ভাইরাল হয়ে উঠে। ওই সময়ের উত্তেজিত জনতা তার বসত-বাড়ি ঘেরাও করলে পুলিশ বাড়ি থেকে অস্ত্র ও ৬২টি রাউন্ড গুলি উদ্ধার করলেও কৌশলে বাহাদুর পালিয়ে যায়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ওই ঘটনায় মামলা হয়নি। কথিত আছে, আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতার সুপারিশে রক্ষা পান তিনি।
২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টার দিকে ধারণ করা সুপারি বাগানের ভিডিও’র বিষয় এলাকার ভুক্তভোগী মোহাম্মদুল হক জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টার দিকে ৭/৮ জন স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীসহ শাহেদুজ্জামান বাহাদুর লম্বা বন্দুক নিয়ে তার উপর হামলা চালায়। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে মারধর করে। এসময় তার সাথে থাকা ওবাইদুল হক ও আবু তাহেরকেও মারধর করে তারা। এসময় ফাকা গুলিবর্ষণ করে। তাদের চিৎকারে স্থানীয় জনতা এসে তিনজনকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ১১ অক্টোবর রামু সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে রামু থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ওবাইদুল হক জানান, কোন কারন ছাড়া তাকেও মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে মারধর করে। প্রায় সময় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা, জমি জবর-দখল, মানুষকে ভয় প্রদানে এলাকায় বন্দুক বাহাদুর আতংক বিরাজ করছে।
হামিদুর রহমান জানান, বন্দুক বাহাদুরের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তার কাছে বেশ কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র রয়েছে।
খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ছৈয়দ আলম সুলতান জানান, বাহাদুর একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তিনি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জমি জবর দখলসহ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাস কায়েম করে আসছে।
খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ জানান, তার বিরুদ্ধে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মরহুম শাহ আলমের হাত কাটা, রামু ও কক্সবাজার মডেল থানায় একাধিক সন্ত্রাসী ও বিস্ফোরক মামলা থাকা পারও সে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীকে গাল-মন্দ করে এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করে যাচ্ছে। তার কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের দাবী জানান তিনি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে নানা মাধ্যমে অস্ত্র সহ রামুর এক ব্যক্তির ছবি ও ভিভিও তার কাছে পৌঁছেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আর এ ঘটনায় আদালতে যে মামলার কথা শুনা যাচ্ছে। তা যথাযথভাবে তদন্ত করে আদালতের নিদের্শ মানতে রামু থানার পুলিশের বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত মো. শাহেদুজ্জামান বাহাদুরের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভিডিওতে থাকা অস্ত্রটি অস্ত্র না, একটি লাঠি বলে দাবি করেন। আর পূর্ব শক্রতার জের ধরে একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply