শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িকে সরকার একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ডেপলামেন ইনসেটিভ’ এর আওতায় নিয়ে এসেছে। তার জন্য সংসদে একটি আইনও পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত আইনটি সেখানে পাস হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
তিনি বলেছেন, প্রকল্প পরিদর্শন, সার্বিক অগ্রগতি দেখা ছাড়াও এখানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জেটি, সড়ক ও জাহাজ চলাচলের বিষয়ে একটি সমন্বয় সভা হয়েছে। যেখানে সকল স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নিজদের মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং করণীয় বলেছেন।
বৃহস্পতিবার মাতারবাড়ির কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দর পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এসব কথা বলেন।
তিনি সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম থেকে নৌ পথে মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দরের একটি জেটিতে পৌঁছেন। সেখানে পৌঁছার পর তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এসময় তিনি প্রকল্প পরিদর্শনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন।
তার সঙ্গে ছিলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান সহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকরা।
পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব বলেন, মাতারবাড়ির উন্নয়ন প্রকল্পটি বিশাল উন্নয়ন যজ্ঞ। এই প্রকল্পের কাজ যথাযত এবং দ্রæত শেষ করার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের সাথে সাথে স্থানীয়দের দক্ষ করতে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলতে বলা হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠার কাজও চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা অবহিত করেছেন। এটি প্রতিষ্ঠা হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে এই প্রকল্পে কাজ করতে পারবেন।
পরিদর্শনকালে ৬০ দিনের কয়লা মজুদ, ডিসেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন মূখ্য সচিব। তিনি বলেন, মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সড়কের ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজও দ্রæত করা হবে। এর জন্য জমি অধিগ্রহণ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া যৌথভাবে চলছে।
তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ির উন্নয়ন একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে। যা জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে থেকে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধিনে। এটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষই ব্যবস্থাপনা করেন।’
এসময় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড- সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, এখন পরীক্ষামুলক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যা জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। আগামি ডিসেম্বর থেকে বানিজ্যিকভাবে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এর পর বিকালে মূখ্য সচিব কালারমারছড়ায় এসপিএম প্রকল্প পরিদর্শনে যান।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন থেকে মাতারবাড়ি চ্যানেলের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারি প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এর সাথে বুধবার চট্টগ্রামে এই আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর সম্পন্ন হয়।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বন্দর অডিটোরিয়ামে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড -সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলের কাছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর চ্যানেল হস্তান্তর করেছেন।
এখন থেকে মাতারবাড়ি চ্যানেলের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ, এ চ্যানেলে যাতায়াতকারী সমুদ্রগামী জাহাজের পোর্ট ডিউজ, বার্থ হায়ার চার্জ, পাইলটিং, টাগ চার্জ, বার্থিং-আনবার্থিং ও অন্যান্য চার্জ চট্টগ্রাম বন্দর আদায় করবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আদায় হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।
হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
সভায় জানানো হয়েছে, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল হস্তান্তর বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে মাতারবাড়ি চ্যানেল চট্টগ্রাম বন্দরকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সরকারের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে সিপিজিসিবিএল মাতারবাড়ি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার প্রস্থ, ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার একটি চ্যানেল খনন করেছে।
মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বর্ধিত করে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। নির্মিত চ্যানেল ও হারবার নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার জন্য সিপিজিসিবিএল উত্তরে ১ হাজার ৭৫৩ মিটার ব্রেকওয়াটার, দক্ষিণে ৭১৩ মিটার ব্রেকওয়াটার এবং উত্তরে ১ হাজার ৮০৩ মিটার রিভেটমেন্ট (পাথরের দেয়াল) নির্মাণ করেছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply