শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকদিন ধরে ঘুরছে একটি ছবি। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, এক বৃদ্ধা ও অপর এক নারী হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় শুয়ে আছে মাটিতে। আর অনেকে ছবিটি পোস্ট করে লিখেছেন, এইভাবে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তাদের বসত ঘর এবং দখল করে নেওয়া হয়েছে জমি।
ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার ( ২২ এপ্রিল ) কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে মৌলভীর কাটা এলাকায়।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটেছে বলে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভূক্তভোগী নারী রশিদা খাতুন (৮৫)। অথচ ঘটনার এক সপ্তাহের পরও থানায় মামলা নথিভূক্ত হয়নি। আটক হয়নি ঘটনায় জড়িত কেউ।
তবে পুলিশ বলছে, ঘর ভাংচুর করে জমি দখলের সত্যতা পেয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
ভূক্তভোগী নারী রশিদা খাতুন (৮৫) রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে মৌলভীর কাটা গ্রামের মৃত আলী মিয়ার স্ত্রী।
রশিদা খাতুন বলেন, একই এলাকার মো: ইউনুচ, আমানুল্লাহ প্রকাশ লেবু দুই ভাই মিলে দীর্ঘদিন ধরে ঘরসহ তার বসত ভিটা জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। গত শুক্রবার ( ২২ এপ্রিল ) বিকেল থেকে দুই ভাই মিলে ভাড়াটে সন্ত্রাসী এনে তাদের উপর হামলা চালায়। ওইদিন বিকাল থেকে সারারাত তাকে ও মেয়ে দিলদার বেগমের চোখ, মুখ ও হাঁত বেধে বাড়ী থেকে কিছু দূরে ক্ষেতের জমিতে ফেলে রাখে। এসময় হামলাকারিরা তার ঘর ভেঙে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল দূরে ফেলে দিয়ে বসত ভিটাটি জমি দখল করে নেয়। এমন কি জমিটিতে যে আগে কোন বসত ঘর ছিল তার কোন চিহ্নও রাখেনি।
ঘটনার বিষয়ে মেয়ে দিলদার বেগম রামু থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন বলে জানান ভূক্তভোগী এ বৃদ্ধা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুই মাদ্রাসা পড়ুয়া নাতনী জোবাইদা ও বুলবুল আক্তার খোলা আকাশের নিচে বইপত্র ও ঘরের কিছু আসবাবপত্র নিয়ে কান্নাকাটি করছেন।
নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া বুলবুল আক্তার বলেন, বই পত্র সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম। আমরা কি এমন বড় দোষ করেছি যে আমাদের ঘর বাড়ি ভেঙে ফেলে আমাদের খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মৌলভী হাসেম সরোয়ারী ও ঠান্ডা মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গায় বৃদ্ধা রশিদা খাতুন তার পাঁচ মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে নিয়ে এই ঘরে থাকতেন। তাঁর কোন ছেলে সন্তান নেই। এমন অসহায় বৃদ্ধাকে হাত-মুখ বেঁধে তার ঘর ভেঙে জমি দখল করে নেওয়াটা মানা যায় না।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইউনুচ বলেন, এমন পাশবিক ও অমানুষিক ঘটনা তিনি জীবনে এলাকায় দেখেননি। একজন দরিদ্র বৃদ্ধা মহিলার ঘর ভেঙে জমি দখল করে নেয়াটা অমানবিক। এ বিষয়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানকেও অবহিত করেছেন।
ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্তদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে রামু থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাখার বিষয়টি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখতে পারেন। তবে ঘর ভাংচুর ও জমি দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজের কাছে এজাহার কপি রয়েছে। তাকে এজাহারটি নিয়ে থানায় আসতে বলা হয়েছে। এজাহার পাওয়ার পর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
.coxsbazartimes.com
[…] […]