রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ পৌর আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় ২ নেতাকে মারধরের ঘটনাটি পারিবারিক ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন উখিয়া-টেকনাফের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি।
তিনি বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে মারধর করেননি। যাদের মারধরের কথা বলা হচ্ছে, তারা ( ইউছুপ মনু ও ইউছুপ ভূট্টো) আমার আপন মামাতো ভাই ও মামাতো ভগ্নিপতি। টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলা কমিটির নেতাদের সামনে তারা (মারধরের শিকার ব্যক্তি) শোভন আচরণ করেছে। এতে সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ কারণে রক্তের আত্মীয় হিসেবে আমার ভাই ও ভগ্নিপতিকে শাসন করেছি। ”
সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, “ আওয়ামী লীগের টেকনাফ পৌর কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অন্তত আড়াই বছর আগে। মাত্র দুইটি ছাড়া অন্যসব ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিলও সম্পন্ন করতে পারেনি পৌর কমিটি। ওয়ার্ড কমিটির নেতারা পৌর কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন বর্ধিত সভায়। পৌর কমিটির নেতারা ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে আসছিল। ”
এ নিয়ে টেকনাফ পৌর কমিটির দুই নেতা ও তার দুই আত্মীয় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সামনে অশোভন আচরণ করায় শাসিয়েছেন বলে দাবি করেন আব্দুর রহমান বদি।
শনিবার মুঠোফোনে এসব কথা বলেন তিনি।
্য শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠিত টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি ও তার ভাইসহ সমর্থকদের হাতে দুই নেতা মারধরের শিকার হওয়ার কয়েকটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় নেট দুনিয়াসহ সর্বমহলে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
ভূক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকালে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের হল রুমে আয়োজিত পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ইফতারের আগ মুহুর্তে এ ঘটনা ঘটেছে।
মারধরের শিকার ব্যক্তিরা হলেন, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইউছুপ মনু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ ভূট্টো।
বদির সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কে এদের মধ্যে ইউছুপ মনু মামাতো ভাই এবং ইউছুপ ভূট্টো মামাতো বোনের স্বামী।
সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, সভা মঞ্চের আসন থেকে দাঁড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শাহ আলম রাজা কাউকে লক্ষ্য উত্যক্ত বাক্য বিনিময় করছেন। এসময় সভায় উপস্থিত কয়েকজন নেতাকর্মিও তার (শাহ আলম রাজা) সঙ্গে উত্তেজিত স্বরে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে সভা মঞ্চ থেকে উঠে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি কক্ষটি থেকে বেরিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই কয়েকজন লোককে সঙ্গে বদি সভা কক্ষে প্রবেশ করেন।
এরপরই বদির ছোট ভাই আব্দুর শুক্কুর পৌর কমিটির নেতা ইউছুপ মনু’র উপর হামলে পড়ে। এসময় আরও কয়েকজন সম্মিলিতভাবে ইউছুপ মনুকে এলোপাতাড়ী কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে হামলাকারিদের সঙ্গে যোগ সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিও। পরবর্তীতে তিনিও ( বদি ) ইউছুপ মনুকে মারধর চালান।
এসময় ইউছুপ মনুকে বাঁচাতে আসেন টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ ভূট্টো ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মাহমুদুল হক। এতে হামলাকারিরা তাদেরও মারধর করতে দেখা গেছে ভিডিও চিত্রে।
ভূক্তভোগী ইউছুপ মনু বলেন, শুক্রবার বিকালে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের হল রুমে পৌর আওয়ামী লীগের পূর্ব-নির্ধারিত বর্ধিত সভা ছিল। এতে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পৌর কমিটির নেতাকর্মিদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে ওয়ার্ড কমিটির নেতাদের মতামত প্রধান্য দেন।
“ এ নিয়ে আমি সভায় প্রতিবাদ জানালে সাবেক সাংসদ বদি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এতে তার (বদি) সঙ্গে আমার মধ্যে বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বদি মঞ্চ থেকে নেমে হল রুমের বাইরে যান। কিছুক্ষণ পর বদি তার ভাই আব্দুর শুক্কুর ও ভাগ্নে নুর মোহাম্মদ ওরফে লাস্টটিপ সহ কয়েকজন সমর্থক ক্যাডারদের নিয়ে হলরুমে প্রবেশ করেন। এরপরই আমার উপর তারা সম্মিলিতভাবে ঝাপিয়ে পড়ে এলোপাতাড়ী কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে শুরু করেন। ”
মারধরের শিকার স্থানীয় এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “ এসময় আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন টেকনাফ পৌর কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ ভূট্টো ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মাহমুদুল হক। এতে হামলাকারিরা তাদেরও ( ভূট্টো ও মাহমুদুল) ব্যাপক মারধর চালায়। ঘটনায় আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ”
এ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য বদি ও তার সমর্থকদের হাতে মারধরের শিকার ইউছুপ ভূট্টোও বলেছেন একই কথা।
ইউছুপ ভূট্টো বলেন, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন নিয়ে সাবেক সাংসদ বদি ও ইউছুপ মনুর মধ্যে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বদি ও তার সমর্থকরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সামনেই সভাস্থলে ইউছুপ মনুকে ব্যাপক মারধর করতে শুরু করে। এতে ইউছুপ মনুকে বাঁচাতে গেলে আমার উপরও তারা হামলা চালায়। ”
বর্ধিত সভায় সম্মেলন ও কাউন্সিল প্রস্তুতি নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী।
জাবেদ ইকবাল বলেন, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য জেলা কমিটির নেতাদের উপস্থিতিতে পূর্ব-নির্ধারিত বর্ধিত সভা ছিল শুক্রবার। এতে সম্মেলন প্রস্তুতি নিয়ে বাক-বিতন্ডার জেরে বদি ও তার সমর্থকদের হাতে পৌর আওয়ামী লীগের দুই নেতা মারধরের শিকার হয়েছেন।
এসময় সভা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির নেতা ও সহ সভাপতি শাহ আলম রাজা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ইউনুস বাঙ্গালী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরসহ জেলা-উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতারা।
ঘটনার ব্যাপারে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি বলেন,
ঘটনার ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক কমিটির নেতা ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রণজিত দাশ বলেন, সভায় উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ভিন্ন মতামত দিয়ে বার বার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন পৌর কমিটির সহ সভাপতি ইউছুপ মনু। এই বাধাদানকে কেন্দ্র করে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সঙ্গে তার (ইউছুপ মনু) কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসায় তারা (জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা) সভা কক্ষ থেকে বিরিয়ে যান।
“ পরবর্তীতে আমরা (জেলা কমিটির নেতারা) জানতে পারি, আমাদের অনুপস্থিতিতে হলের ভেতরে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এরপর বিরোধীয় উভয়পক্ষকে নিয়ে সভাস্থলে ঘটনার ব্যাপারে একটি সমাধান দেওয়া হয়েছে। এসময় আগামী ১০ মে টেকনাফ পৌর কমিটির সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজনের তারিখ ঘোষণাদেওয়া হয়েছে। ”
তবে সভাস্থলে যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে সেটা খুবই দু:খজনক বলে মন্তব্য করেন জেলা আওয়ামী লীগের এ নেতা।
রণজিত বলেন, “ আমরা চাইনা ভবিষ্যতে এ ধরণের কোন ঘটনা আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটুক। তারপরও ঘটনার ব্যাপারে যদি কারো কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় সেটার ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply