শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

সংকটাপন্ন নদীর জীবন, ২৩ দিন ধরে বন্ধ খাওয়া-দাওয়া

বিশেষ প্রতিবেদক : নদী একটি সিংহী’র নাম; চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সিংহ-বেষ্টনীতে নদীর সঙ্গী সম্রাট। সম্পর্কে দম্পতি হলেও ঝগড়া-বিবাদেই কাটত দুটির সময়। সম্প্রতি দু’দফা নদীর গলা ও পেটে কামড় বসিয়ে দেয় সম্রাট। সেই থেকে আলাদা কক্ষে একাকী কাটছে নদীর জীবন। তার জীবন এখন সংকটাপন্ন। ২৩ দিন ধরে মুখে কিছুই তুলছে না নদী। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, সম্ভবত নদীকে আর প্রাণে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

নদী; অসুস্থ অবস্থায় বেষ্টনীর খাঁচায় শুয়ে আছে। কোনোভাবেই চলাফেরা করতে পারছে না। তাই খাঁচায় অনেকটায় জীবন যায় যায় অবস্থায় দিন পার করছে। বেষ্টনীতে সঙ্গী নদীর এমন অবস্থা দেখে চারপাশে ঘুরপাক করছে সম্রাট। তবে নদীর কাছে যেতে পারছে না। এমন অবস্থায় জন্য দায়ী সম্রাট; বেষ্টনীতে পরপর দু’বার নদীকে আঘাত করেছে সে।

সিংহ বেষ্টনীতে নদী সম্রাট ও রাসেল টুম্পা জুটিকে গেল ১২ বছরের বেশি সময় ধরে লালন-পালন করছেন পার্কের প্রাণী সংরক্ষক আখতারুজ্জামান খান। নদীর এমন অবস্থা দেখে কষ্ট পাচ্ছেন তিনিও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের প্রাণী সংরক্ষক কর্মী আখতারুজ্জামান খান বলেন, প্রায় ২২ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নিয়োজিত রয়েছি। আর ১২ বছরের বেশি সময় ধরে সম্রাট-নদী জুটি ও রাসেল-টুম্পা জুটিকে দেখভাল করছি। এদেরকে প্রতিদিনই সকাল ৬টায় এসে পরিচর্যা করি, এরপর খাবার খাওয়ানোর কাজ করি। কিন্তু এখন নদীর অবস্থা থেকে খুবই খারাপ লাগছে। কারণ নিজের সন্তানের মতো করে লালন পালন করেছি। এখন অসুস্থ দেখে খুবই কষ্ট পাচ্ছি।

সরজমিনে দেখা যায়, নদীর শরীর দুর্বল, ওজনও কমছে। তীক্ষ্নদৃষ্টিতে তাকানো নদীর মুখ হাঁ করলেও হুংকার কিংবা গর্জন করার শক্তি-সামর্থ্য নেই। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর মুখের নিচে গলায় সম্রাটের কামড়ের ক্ষত চিহ্ন বাড়ছে। আর প্রতিদিনই দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের আরেক প্রাণী সংরক্ষক কর্মী মো. সাইফুর রহমান বলেন, নদীর সঙ্গী হিসেবে কক্ষে রাখা হয় সম্রাটকে। কিন্তু সময়টা দুজনের ভালো যাচ্ছিল না। গেল ২ ফেব্রুয়ারি নদীকে আঘাত করে সম্রাট। এরপর চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলা হয় নদীকে। কিন্তু আবার ১৯ ফেব্রুয়ারি পুনরায় নদীর পেট ও গলায় কামড় বসিয়ে দেয় সম্রাট। তাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে নদী। এরপর থেকে নদীকে পৃথক আরেকটি কক্ষে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ২৭ মার্চ থেকে নদী খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। শুধুমাত্র মাঝে মধ্যে সামান্য পানি পান করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন বলেন, অসুস্থ সিংহীর (নদীর) উন্নত চিকিৎসার জন্য একাধিকবার মেডিকেল বোর্ড বসানো হয়। সিরাম ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে সিংহীর শরীরে ‘ভাইরাল ইনফেকশন’ পাওয়া গেছে, যার লক্ষণ ভালো নয়। চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল মেডিকেল বোর্ড সিংহীকে অবশ করেছিল। ফলে তার চেতনা ফিরে আসতে সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এরপর নমুনা সংগ্রহ করার জন্য পুনরায় অবশ করা যাচ্ছে না। কারণ, তার শরীর দুর্বল। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চেতনা ফিরে না এসে মৃত্যুর শঙ্কা আছে।

বর্তমানে সিংহীটির অবস্থা সংকটাপন্ন। দিন দিন অবনতি ঘটছে। গত ২৭ মার্চ থেকে সিংহী পানি ছাড়া অন্য খাবার মুখে তুলছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তত্ত্বাবধায়ক) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, নদীর অবস্থা সংকটাপন্ন, দিন দিন অবনতির পথে, সম্ভবত তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। তারপরও নদীকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।

চকরিয়া উপজেলার ডুলহাজারায় ২ হাজার ২৫০ একর আয়তন বনে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। ২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি ২ হাজার ২৫০ একর আয়তনের ডুলাহাজারার বনে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এর আগে ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। বর্তমানে পার্কে জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, বাঘ, ভালুক, সিংহ, হরিণ, লামচিতা, শকুন, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১টি প্রাণী আছে। এগুলো আবদ্ধ অবস্থায় আছে। উন্মুক্তভাবে আছে ১২৩ প্রজাতির ১ হাজার ৬৫টি প্রাণী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুইসাপ, সজারু, বাগডাশ, মার্বেল ক্যাট, গোল্ডেন ক্যাট, ফিশিং ক্যাট, খ্যাঁকশিয়াল ও বনরুই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888