শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজার জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত বছরের পর বছর বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে স্বয়ং সভায়। সভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ বলেছেন, সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনেকটা অকার্যকর ভূমিকায় চলে গেছে। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ সিদ্ধান্ত সমুহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে সভায়। সভায় জেলায় তিন দিনে চার খুন, যানজটের ভয়াবহ পরিস্থিতি, মাদক বেচা-কেনা, ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা বের হয়ে শ্রমবাজার দখল, পার্সপোর্ট করতে গিয়ে চরম হয়রানী, কিশোর গ্যাং এর বিচরণ, উন্নয়ন প্রকল্প ও এনজিওতে ভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের চাকুরি প্রদানের কারণে জেলার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়।
রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের শহিদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা আইন শৃংখলা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ।
সভায় পুলিশ সুপার মো হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আবু সুফিয়ান, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদি সহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।
সভায় কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের বলেন, কক্সবাজার জেলার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এখানো রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে শ্রম বাজার দখল, যান বাহনের চালক হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য কর্মে নিয়োজিত হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয়রা বেকার হচ্ছে দিন দিন। একই সঙ্গে স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভের। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে এবং এনজিওদের চাকুরি ক্ষেত্রে ভিন্ন জেলার মানুষ চাকুরি পেলেও জেলার মানুষ হচ্ছে বেকার। এই ভারসাম্যহীনতা কারণে অপরাধ বাড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি তার জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, জেলায় সম্প্রতি সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। চার খুন সহ নানা সংঘাত মানুষের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে রমজানের এই সময়ে তীব্র যানজটের কারণে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সভায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী পার্সপোর্ট করতে গিয়ে হয়রানীতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা কেবল মাত্র কক্সবাজার জেলায় নয়; বিভিন্ন জেলায়ও ভোটার হওয়ার প্রমাণ ইতিমধ্যে হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারে পার্সপোর্ট করতে গিয়ে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে পার্সপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অনেক কাগজ-পত্র জমা দিতে হচ্ছে। যা খুবই অবমানজনক। একজন মানুষকে রোহিঙ্গা নহে মর্মে সনদ সংগ্রহ করে জমা দেয়া লজ্জাকর ঘটনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল ও চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদি সভায় কক্সবাজারের মহাসড়কে যানবাহন রোধ করে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করার কথা বলে প্রতিকার চেয়েছেন।
সভায় পুলিশ সুপার মো হাসানুজ্জামান চাঁদাবাজি বন্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়া হয়। সভায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অভিযান জোরদার, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখতে কার্যকর উদ্যোগ, শহরের যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সম্বনয়ে সভা করে ব্যবস্থা গ্রহণ, কিশোর গ্যাং রোধে অভিযান জোরদার করে অভিভাবকদের অবহিত করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। সভায় জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের যে সব প্রতিষ্ঠান চাকুরি দেবে তার লাইন্সেন বাতিল, চাকুরি দাতা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, যানবাহনের চালক হেলপার করা হলে ওই যানবাহন বন্ধ ঘোষণার করা হবে।
সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত বছরের পর বছর বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলে তা কার্যকরে উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেয়া হয়। এছাড়াও সভায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, মাদক পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ রাখা সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসেনর উদ্যোগে প্রস্তুতিমূলক সভার আয়োজন করা হয়।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply