শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতারণামূলক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার সত্যতা না পাওয়ায় মামলার বাদি ও তদন্তকারি পিবিআই এর পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
মঙ্গলবার কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী এ নির্দেশ প্রদান করেন।
গত ২০২০ সালে লতিফা বেগম নামের এক নারী মোঃ রায়হান নামের এক যুবককে আসামি করে দায়ের করা সি.আর-৪৯/২০২০ (টেকনাফ) নম্বর মামলার চার্জ শুনানীর জন্য ধার্য্য দিন বিচারক এ আদেশ প্রদান করেন। আদেশের কপি টেকনাফ থানা ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। এই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই-এর এএসআই আবু তাহের।
আদালতের আদেশনামায় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল লতিফা বেগম নামের এক নারী মোঃ রায়হান নামের এক যুবককে আসামি করে দায়ের করা সি.আর-৪৯/২০২০ (টেকনাফ) নম্বর মামলা দায়ের করেন। প্রতারণামূলকভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে মামলাটি আদালতে দায়ের করা হয়েছিল। মামলাটির চার্জ শুনানীর জন্য ধার্য্য ছিল মঙ্গলবার। এতে আসামীপক্ষ দাবী করেন, বাদী লতিফা বেগম ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিচয়ে ছেনুয়ারা বেগম নাম ধারণ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আসামী মোঃ রায়হানের বিরুদ্ধে স্বামী হিসেবে যৌতুক দাবীর অভিযোগে সি.পি-৩৪৮/২০১৯ নং মামলা দায়ের করলে তদন্তান্তে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উক্ত মামলা খারিজ করা হয়। অতঃপর একই বাদী বাংলাদেশী নাগরিক পরিচয়ে লতিফা বেগম নামে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি.আর-৪৯/২০২০(টেকনাফ) নং মামলা দায়ের করলে অভিযোগ শুনানীর পর্যায়ে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট আসামীপক্ষ বর্ণিত বিষয়টি উপস্থাপন করে। বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী সংশ্লিষ্ট নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষ বরাবর অত্র বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য আদেশ প্রদান করলে ক্যাম্প ইনচার্জ, নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প আসামীর পরিচয় গোপন বিষয়ে সত্যতা পান মর্মে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বর্ণিত মামলার বাদী লতিফা বেগম উক্ত শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা পরিচয়ে ছেনুয়ারা বেগম নাম ধারণ করে সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে। তাছাড়া বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বর্ণিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বাদীর নিয়োজিত আইনজীবী জনাব মোঃ হারুন অর রশিদের বক্তব্য শ্রবণ করেন। উক্ত বিজ্ঞ আইনজীবীও জানান যে, সি.আর-৪৯/২০২০(টেকনাফ) নং মামলার বাদী লতিফা বেগম এবং সিপি-৩৪৮/১৯ নং মামলার বাদী ছেনুয়ারা বেগম একই ব্যক্তি হন এবং তিনি দুটি মামলায় ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। অতঃপর বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বাদীকে ব্যাখ্যা প্রদান করার নির্দেশ দিলে বাদী লতিফা বেগম তার জন্ম সনদ ও তার মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দাখিল করেন। উক্ত দলিলদ্বয় পর্যালোচনায় বাদী লতিফা বেগমকে বাংলাদেশী নাগরিক মর্মে আপাতঃ দৃষ্টে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশী নাগরিক সম্পর্কিত লতিফা বেগম নামীয় কাগজপত্র থাকার পরও কিংবা লতিফা বেগম বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ার পরও ছেনুয়ারা বেগম নাম ধারণ করে রোহিঙ্গা পরিচয়ে শরণার্থী ক্যাম্প থেকে সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করায় বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী সংশ্লিষ্ট টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উক্ত বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন। অধিকন্তু সিআর-৪৯/২০২০ নং মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনে বাদী লতিফা বেগমকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিও সংস্থার ভোলন্টিয়ার হিসেবে চাকুরীরত মর্মে উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তে বাদীর প্রকৃত পরিচয় উদঘাটনে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং বাদীর রোহিঙ্গা পরিচয় উদঘাটন না করে ভিন্নরূপ তদন্ত করায় উক্ত বিষয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অবগতির জন্য আদালত কর্তৃক আদেশের কপি প্রেরণ করা হয় এবং আসামী মোঃ রায়হান-কে সিআর-৪৯/২০ নং মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply