শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে ফের জলদস্যুদের তান্ডব শুরু হয়েছে। সাগরের গুলিরদ্বার পয়েন্টে ৪টি ট্রলারে লুটপাটের পাশাপাশি গুলিবর্ষণ ও কুপিয়েছে আহত করেছে ১০ জেলেকে।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে আহত জেলেদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও বাকিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আহতরা হলেন বাঁশি মাঝি (৩৮), আলি হোসেন (৫০), আব্দুল্লাহ (৩৫), মোহাম্মদ (৩৫), রহিম (৩০), জাগির হোসেন, নছর উল্লাহ, শামসু আলম, জাহাঙ্গির আলম ও পুতু মিয়া। তাদের সবাই মহেশখালীর কুতুবজোম জেলে।
এদিকে ট্রলার মালিকের দাবি; সাগরে ফের জলদস্যুদের বেপেরোয়া হয়ে উঠেছে; তাদের নিমূল করা না হলে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ করে দিতে হবে।
আহত জেলেরা জানায়, সাগরে ৬ দিন আগে মাছ শিকারে গিয়েছিল মহেশখালীর কুতুবজোমের বেশ কিছু ট্রলার। সাগরে জেলেরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাছ শিকার করছিল। কিন্তু হঠাৎ মঙ্গলবার রাতে সাগরের গুলিরদ্বার পয়েন্টে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হানা দেয় জলদস্যুরা। প্রথমে আতংক ছড়ানো জন্য গুলি করে দস্যুরা। এরপর অস্ত্রের মুখে একে একে ২টি ট্রলারের জেলেদের মারধর, কুপানোসহ লুটপাট করে নেয় টাকা, মাছ ও তেল। নষ্ট করে দেয় ট্রলারের ইঞ্জিন। তারপর বুধবার সকালে তারা অন্যান্য ট্রলারের সহায়তা এফবি রাফান ও মায়ের দোয়া ট্রলারের ২৭ জেলে ফিরে আসি কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে। পরে ট্রলার মালিকরা আহতদের নিয়ে যায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।
এফবি রাফান ট্রলারের জেলে এমতাজুল হক বলেন, জলদস্যুদের ২টি ট্রলার এসে ধাওয়া করে। এসময় তারা ইটও মারে। পরে আমাদের ট্রলার থামানো জন্য গুলি করে। একপর্যায়ে ট্রলারে ধরে আমাদেরকে ব্যাপক মারধর করে। বিশেষ করে, ট্রলারের মাঝিকে মাথায় আঘাত করে ও পিঠে বেশি জখম করে। তাদের হাতে ৫-৬টি দেশিয় অস্ত্র, বেশ কিছু কিরিচ ও লোহার রড় ছিল। তারা মোট ২০ থেকে ২৫ জন জলদস্যু ছিল।
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের জেলে ফরিদ আলম বলেন, মারধর তো করেছে। সঙ্গে টাকা পয়সা, খাদ্য সামগ্রী, তেল, মাছ ও জাল লুট করে নেয়। এছাড়াও ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট করে দেয়। এরপর লাঠি দিয়ে আমাদেকে বেশি মারধর করেছে। পরে সকালে অন্যান্য ট্রলারের সহায়তা কষ্ট করে কক্সবাজার ঘাটে আসি।
আহতদের জেলেদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। তাকে ভর্তি দেয়ার পাশাপাশি বাকি ৯ জন জেলেকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।
কক্সবাজার সদর সদর হাসপাতালের আরএমও শাহীন আব্দুর রহমান বলেন, জলদস্যুরা দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত ১০ জন জেলেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সবার গায়েই আঘাত রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে বাঁশি মাঝি নামের এক জেলের অবস্থা গুরুতর। তাকে ভর্তি দেয়ার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কারণ তার মাথায় আঘাত করা হয়েছে এবং পিঠেও ব্যাপক আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।
আর জলদস্যুদের শিকার হওয়ার এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মালিকের আমীর হোসেনের দাবি; ফের সাগরে জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জলদস্যুর গেল মাসের ৫ তারিখ একটি ট্রলারে হামলা চালিয়ে এক জেলেকে ট্রলার থেকে ফেলে দিয়েছে। ওই জেলেকে এখনো পাওয়া যায়নি। আর এখন আমার ট্রলারসহ ৪টি ট্রলারে হানা দিয়ে জেলেদের মারধর করার পাশাপাশি সবকিছু লুটপাট করেছে। জলদস্যুরা নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে। বিশেষ কুতুবদিয়া, মহেশখালীর সোনাদিয়া, কালারমারছড়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এলাকার জলদস্যু এসব করছে।
ট্রলার মালিক আমীর হোসেন আরও বলেন, জলদস্যুরা দ্বারা হামলার শিকার হওয়ার ৪টি ট্রলারের মধ্যে ২টি ট্রলার কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোমের ও বাকি ২টি সদরের খুরুশকুল এলাকার।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply