রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন
রামু প্রতিনিধি : রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের বহুল বিতর্কিত ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও পরিবারের একাধিক সদস্যদের নামে বন্দোবস্তমুলে খতিয়ান সৃজন করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ নিজের নামে বন্দোবস্ত নেয়ার পাশাপাশি নিজের পিতাকে মৃত দেখিয়ে মায়ের নামে, স্বামী পরিত্যক্ত দেখিয়ে বোনের নামে পৃথক বন্দোবস্ত মামলামূলে ৩টি খতিয়ান সৃজন করেছেন। এছাড়াও ইতিপূর্বে হাবিব উল্লাহর পিতা ছালেহ আহমদও নিজের নামে ৬০ শতক জমি বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। একটি পরিবারের একাধিক সদস্যে নামে ৪টি খতিয়ানে ১ একর ২০ শতক জমি বন্দোবস্ত নেয়ার খবরে সর্বত্র তোলপাড় হয়েছে। এরমধ্যে রামুর সর্ববৃহৎ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের দখলে থাকা বিপুল জমিও বন্দোবস্ত নিয়ে জবর-দখল করেছেন হাবিব উল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির এ জমি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলাও বিচারাধিন রয়েছে। এ নিয়ে রামু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মৌলানা শামসুল হক ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর রামু থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন।
এদিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও পরিবারের একাধিক সদস্যদের নামে বন্দোবস্তমুলে খতিয়ান সৃজন করার গুরুতর অভিযোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন- কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা টিলাপাড়া ৮ নং ওয়ার্ডের মৃত ওমর আলীর ছেলে জলিল কাদের। অভিযোগটি তদন্ত করে সম্প্রতি এসব খতিয়ান বাতিলের জন্য সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে রামু উপজেলা ভূমি অফিস।
অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে- হাবিব উল্লাহর দাদা মোজাহের মিয়ার নামে উখিয়ারঘোনা মৌজায় বিপুল জমির রেকর্ড প্রচার আছে। এরপরও হাবিব উল্লাহ নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের ভূমিহীন সাজিয়ে বিপুল জমি বন্দোবস্ত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাবিব উল্লাহ ও তার স্ত্রী ইয়াছমিন আকতার বিএস ১২৯২ নং দাগে বন্দোবস্ত মামলা নং ৯/২০১৬-২০১৭ মূলে ২০ শতক জমি বন্দোবস্ত নেন। যার খতিয়ান নং ১/১২৮৮।
হাবিব উল্লাহ তার বোন নাছিমা আকতারকে স্বামী পরিত্যক্তা দেখিয়ে বিএস ১২১৮/৩ দাগে ৯/২০১৬-২০১৭ বন্দোবস্ত মামলামূলে ১/১২৮৪ নং খতিয়ান সৃজন করে ২০ শতক জমি বন্দোবস্ত নেন।
হাবিব উল্লাহ তার মা রাশেদা বেগমের নামে ৮/২০১৬-২০১৭ নং বন্দোবস্ত মামলামূলে বন্দোবস্ত নেন আরো ২০ শতক জমি। যার খতিয়ান নং ১/১২৮৯।
এরআগে হাবিব উল্লাহর পিতা ছালেহ আহমদ এবং মাতা রাশেদা বেগমের নামে বিএস ১১৫১ নং দাগে ১২৫/২০০০-২০০১ নং বন্দোবস্ত মামলামূলে বন্দোবস্ত নেন ৬০ শতক জমি। যার খতিয়ান নং ৫৮৩।
চলতি বছরের ২৯ জুন কক্সবাজার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে এসব বন্দোবস্ত বাতিলের আবেদন রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কাছে প্রেরণ করা হয়।
এরআগে এ নিয়ে রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক দেযা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- বিএস ১২১৮, ১২৯২, ১১৫১ সহ অপর কিছু দাগাদির আন্দর ৪.১৭ একর ভূমি নিয়ে ২য় সাব জজ আদালত কক্সবাজার এ অপর ১০৫/১৯৯৭ নং মামলা দায়ের করা হয়। বিজ্ঞ আদালতের ২০০৪ সালেল ২০ এপ্রিলের আদেশে মূল মোকদ্দমা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশী জমি অন্য কারো বরাবরে বন্দোবস্ত প্রদান না করার জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচার আছে। তদন্তে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- এসব জমি বন্দোবস্তগ্রহীতারা ভূমিহীন নন। এসব জমি ২/৩ বছর ধরে গৃহীতারা ভোগদখলে থাকলেও এসময়ের পূর্বে রামু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটি নালিশী জমি ভোগ দখলে ছিলেন। এজন্য অভিযোগকারি জলিল কাদেরের আবেদন বিবেচনার জন্য সুপারিশ করা হয় এ তদন্ত প্রতিবেদনে।
এলাকাবাসী জানান- হাবিব উল্লাহ জমি বন্দোবস্ত নেয়ার জন্য নিজের বোনকে স্বামী পরিত্যাক্তা বলে তথ্য, নিজের পিতাকে মৃত বলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। সম্প্রতি তার পিতা ছালেহ আহমদ প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন। এভাবে মিথ্যা দিয়ে একজন জনপ্রতিনিধি কিভাবে এলাকার কল্যাণে কাজ করবেন। তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক জিআর মামলা রয়েছে। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি মামলায় হাবিব উল্লাহ অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তার নানা অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। সেই সাথে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের এবং পরিবারের একাধিক সদস্যদের নামে নেয়া বিপুল সরকারি জমির বন্দোবস্ত বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন সর্বস্তরের জনতা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply