শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রাম মহানগরের একসময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীর উপর হামলা ও অপহরণ করর মূল হোতা তিনি। অথচ সেই মোয়াজ্জেম মোর্শেদই কক্সবাজারের নৌকার মাঝি।
আসন্ন ইউপি নির্বাচনে রামু উপজেলার রশিদ নগরের ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তিনি। তিনি রশিদ নগরের নৌকার কান্ডারী হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা।
এনিয়ে ফেসবুকেও সমালোচনা ঝড় চলছে। এবিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক নুরুল আজিম রণি বলেন, মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রামের ভয়ংকর এক আতংকের নাম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ও মহানগরে শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ওই ক্যাডারের হাতে একসময় নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির লোকজন মার খেত। তার অত্যাচারে সাধারন শিক্ষার্থীরা কলেজেও যেত পারতনা। তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপিত মাহামুদুল করিমকে অপহরণ করে টর্চার সেলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায় শিবির ক্যাডাররা। সেদিন ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মোয়াজ্জেম মোর্শেদ সহ তিনজন শিবির ক্যাডারকে আটক করে। পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়েই চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে কক্সবাজার যায় ওই ক্যাডার।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহামুদুল করিম বলেন, আমি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হই। সেসময় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রাম কলেজ শিবির অন্যতম নীতি নির্ধারক ও ক্যাডার ছিলেন। আমি কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার কারণে মোর্শেদ আমাকে কয়েকদফা সরাসরি হুমকি দেয়। কিন্তু তার হুমকি না মানায় প্রথমে ২০১১ সালের জুলাইতে আমার উপর হামলা করে তুলে নিয়ে আমার পা ভেঙ্গে দেয়। সেখানে আমাকে প্রচন্ড মারধর করে আমার বাবা মায়ের ঠিকানা নেয়। পরে আমার বাবামাকেও হুমকি দেয় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ। তাদের কারণে আমি কলেজে নিয়মিত যেতে পারতামনা। কিন্তু ২০১৩ সালে ২৯ অক্টোবর আমি পরীক্ষা দিতে গেলে বিকাল ৫ টার দিকে আমাকে হল থেকে তুলে নিয়ে যায় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ও তাঁর দলবল। প্রথমে আমাকে তারা তৎসময়ে নির্মানীধীন স্টাফ ভবনে নিয়ে মারধর করে। এরপর সেখানে লোক জমায়েত হতে শুরু করলে আমারে সোহারাওয়ার্দী হলের তখনকার পরিত্যক্ত হিন্দু হোস্টলে নিয়ে আমার আঙ্গুলের নখতুলে আমাকে গুরুত্বর জখম করে মূমুর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখে। পরে কয়েকটি থানার পুলিশ পুরো হল ঘেরা করে আমাকে উদ্ধার করে । এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ সহ তিনজনকে আটক করে।
তিনি আরো বলেন, রশিদ নগরে নৌকা প্রতীক পাওয়া মোয়াজ্জেম মোর্শেদ আমার উপর হামলাকারী শিবির ক্যাডার। বিষয়টি কতটা দু:খজনক বলে বুঝাতে পারব না। এদিকে একসময়ে শিবির ক্যাডার নৌকার মনোয়ান পাওয়ায় ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় চলছে।
এনিয়ে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা ও কক্সবাজার শহর কৃষক লীগের যুগ্ম আহবায়ক শাহাদাত হোসাইন ফেসবুকে লিখেছেন “রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের নৌকার মাঝি মোয়াজ্জেম মোর্শেদ সেদিন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হককে শিবিরের কর্মীদের নিয়ে হত্যা চেষ্টার উৎসবে মেতেছিল, আজ নৌকার মাঝি কেমনে হলো? ধিক্কার জানাই যারা তাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে তাদের,,, চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হোস্টেলে থাকা শিবিরের ক্যাডার যদি নৌকার মাঝি হয়, এটা আওয়ামীলীগের জন্য অশনি সংকেত নয়কি? ”
এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক সাধারন সম্পাদক নুরুল আজিম রনির দেয়া ফেসবুক পোষ্ট ৮২টি শেয়ার হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন “চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশুনা করার সময় ছিল শিবিরের দায়িত্বশীল নেতা। কলেজে ছাত্রশিবিরের রাজত্ব চলাকালে মাহমুদুল করিমকে (বর্তমান কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি) ধরে নিয়ে গিয়ে টর্চার সেলে চালায় নির্যাতন। কলেজ শিবিরমুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে নিজ জেলা কক্সবাজারে ফিরে যায়। এরপরেই দূর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার থেকে ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে পুন:জন্ম হয়। আর সে পরিচয় গ্রহনের কয়েকবছরের মধ্যেই রামু উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য নৌকার মনোনয়ন পেয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে; স্থানীয় নেতারা দুই চার বছরের রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখে কাউকে পছন্দ হলে —তাকে বোন বিয়ে না দিয়ে নৌকার জন্য সুপারিশ করবে কেন?”
এবিষয়ে রশিদ নগরের নৌকার কান্ডারী মোয়াজ্জেম মোর্শেদ বলেন, আমি ২০১০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বের হয়েছি। তাই এর পরে কি হয়েছে সেখানে আমার জানা নেই। আমি মাহামুদুল করিম নামের কা্ওকেই চিনিনা। ওই কলেজে কেউ মোর্শেদ নামে আমাকে চিনে না। সেখানকার সকলে আমাকে জিনান নামে ডাকত।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার কলেজে অনার্স পরার সময় আমি ছাত্রলীগ করেছি। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের প্রথম কমিটি আমার । এছাড়া ২০১৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু আইন ও ছাত্র পরিষদের এডভোকেট নোমান ও নাজিম কমিটির কক্সবাজার জেলা সভাপতি আমি। কাজেই একটি মহল আমার জয় ঠেকাতেই পরিকল্পিত অপপ্রচার চালাচ্ছে।
রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া, আমি দীর্ঘদিন ছাত্রলীগে ও যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। মোর্শেদ নৌকা প্রতীক পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি তার নামই শুনিনি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামুর রশিদ নগরের মঞ্জুর মোর্শেদের ছেলে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ২০১৭ সালে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদে ৬ষ্ঠ ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়। তবে সেখানে কখনো তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেনি। কিন্তু জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আসার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম সাদ্দাম হোসাইনকে খালাত ভাই দাবী করে নিজেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সংযুক্ত করার চেষ্টা করে।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস.এম সাদ্দাম হোসাইন বলেন, মোয়াজ্জেম মোর্শেদ আমার খালাত ভাই নয়। আমার পাশের ইউনিয়নের ছেলে। আমি সভাপতি হওয়ার পর তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার আপ্রান চেষ্টা করে। আমার নামে বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার ফেস্টুনও দেয়। কিন্তু আমি খবর নিয়ে জানতে পারি তিনি অতীতে কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িতে ছিল না। বরং শিবিরের ক্যাডার হিসাবে বিভিন্ন সেময়ে কাজ করেছে বলে প্রমান পাই। পরবর্তীতে আমি তার সাথে সকল ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। এছাড়া দলীয় প্রোগ্রামেও তার আসা নিষিদ্ধ করি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply