শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

প্রদীপকে বিধি মতে কারাগারে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামী টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে বিধি অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার বিকালে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলাটির দ্বিতীয় দফায় তৃতীয় দিনে পঞ্চম সাক্ষির জবানবন্দি ও জেরা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।

মামলায় পঞ্চম সাক্ষি হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী মসজিদের মুয়াজ্জিন নুরুল আমিন।

তদন্ত প্রতিবেদনে নুরুল আমিনকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, তিনি (নুরুল আমিন) মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। এমনকি আদালতে স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে নিজেকে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন।

এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত মামলার প্রথম দফায় সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষি ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত। এছাড়া রোববার থেকে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দফায় তৃতীয় দিন পর্যন্ত জবানবন্দি দিয়েছেন আরো তিনজন সাক্ষি। এতে মামলায় আরো ৭৮ জন সাক্ষির জবানবন্দি গ্রহণ বাকি রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজেন ভ্যান করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।

পিপি ফরিদুল বলেন, সকাল ১০ টা ১৪ মিনিটে আদালতে বিচার কাজ শুরু হয়। এতে মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দফায় তৃতীয় দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষি হিসেবে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী মসজিদের মুয়াজ্জিন নুরুল আমিন জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এ পর্যন্ত ৮৩ জন সাক্ষির মধ্যে পাঁচজনের জবানবন্দি এবং আসামিদের আইনজীবীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

“ সকাল ১১ টা ১৯ মিনিটে নুরুল আমিনের জবানবন্দি প্রদান শেষ হয়। এরপর আসামিদের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। দুপুর ২ টায় আদালত বিচার কাজ ১ ঘন্টার জন্য বিরতি দেন। পরে আবারো বিচার কাজ শুরু তাকে আইনজীবীরা জেরা শেষ করেন বিকাল ৫ টায়। ”

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “ সিনহা হত্যা ঘটনার তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন মামলায় রেফারেন্স উল্লেখ করার আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবীর বক্তব্যটি বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে প্রাসঙ্গিক না হওয়ায় আদালত সেটি বিবেচনায় নেয়নি। ”

“ তবে ওসি প্রদীপের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে বিধি অনুযায়ী যে ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন তাকে ( প্রদীপকে ) তা প্রধানের জন্য জেল সুপারকে ব্যবস্থা নিতে আদালত আদেশ দিয়েছেন ” বলেন, ফরিদুল।

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী জানান, বুধবার মামলায় দ্বিতীয় দফায় শেষ দিনে ষষ্টতম সাক্ষির জবানবন্দি গ্রহণ করবে আদালত।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সিনহা হত্যা ঘটনার পরদিন ছিল ঈদুল আযহা। আকাশে চাঁদ উঠার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী বায়তুল নুর জামে মসজিদের ছাদে অবস্থান করছিলেন মুয়াজ্জিন নুরুল আমিন। এসময় মসজিদের ছাদ থেকে তিনি ( নুরুল আমিন ) ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন।

“ ঘটনাটি মসজিদ ছাদ থেকে নুরুল আমিন যেভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন আদালতে সেইভাবে উপস্থাপন করেছেন” বলেন, বাদীপক্ষের এ আইনজীবী।

আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নুরুল আমিন নিজেকে ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী মসজিদের মুয়াজ্জিন পরিচয় দিয়ে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবীরাও সেটা আদালতে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।

“ কিন্তু সাক্ষি জেরার সময় যেটা প্রমান হয়েছে, প্রকৃত অর্থে নুরুল আমিন ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন তিনি নন। এমনকি তিনি (নুরুল আমিন) মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম পর্যন্ত জানেন না। ”

আসামির এ আইনজীবী বলেন, “ মূলত শামলাপুর যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে তিনি সেটার বাসিন্দা এবং মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। আদালতে আমরা বলেছি, যেহেতু সে ( নুরুল আমিন ) বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এবং সেখান (ক্যাম্প) থেকে বের হতে গেলে অনুমতির দরকার পড়ে। কোন তার নাই এবং সে দেখাতেও পারেনি। তাই আদালতে যা বলেছেন, সবটাই মিথ্যা। ”

মামলায় পঞ্চম সাক্ষি নুরুল আমিন বিদেশি নাগরিক হয়েও আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন এটার কোন আইনগত অধিকার নেই বলে দাবি করেন রানা দাশগুপ্ত।

তবে আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবীর এ বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত পোষন করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

জাহাঙ্গীর বলেন, “ নুরুল আমিন বাংলাদেশি নাগরিক। তারপরও তর্কের খাতিরে বলি, রোহিঙ্গা নাগরিক হলেও তার (নুরুল আমিন) কি কোন চোখ নেই। আইনে তো একটা মার্ডারের ঘটনা দেখতে নিষেধাজ্ঞা নেই। আসামির আইনজীবীরা জেরার খাতিরে জেরা করে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছেন। ”

“ নুরুল আমিন তো সাক্ষি দিয়েছেন হলফ পূর্বক। সে নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করেছেন। তা ( বাংলাদেশি নাগরিক ) দেখেই তো মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব দিয়েছেন। ”

“ গ্রামের মসজিদ। গ্রামের মসজিদে তো কমিটি-তমিটি থাকে না। ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেখানটা তো গ্রাম। সে (নুরুল আমিন) হলফ পূর্বক সাক্ষি দিয়েছে। অনেক জেরার পরেও মূল ঘটনা থেকে তাখে এক সূঁতাও নাড়তে পারেনি ” বলেন বাদীপক্ষের এ আইনজীবী।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় র‌্যাবকে।

ঘটনার ৬ দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্য আত্মসমপর্ণ করেন।

ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

পরে র‌্যাব পুলিশের দায়ের মামলার ৩ সাক্ষি এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) এর ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।

গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারি পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষি করা হয় ৮৩ জনকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888