শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রথম দফায় তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে পরবর্তীতে সাক্ষ্য নিতে আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এতে তিনদিনে সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা হয়েছে মামলার বাদী ও ২ নম্বর সাক্ষীর। বাকি রয়েছে আরো ৮১ জনের।
বুধবার সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে দ্বিতীয় দিনে আংশিক জবানবন্দি দেওয়া মামলার ২ নম্বর সাক্ষী ও ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়ীতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
এর আগে সকাল পৌণে ১০ টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে একটি প্রিজেন ভ্যানে করে মামলার ১৫ আসামীকে পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য প্রথম দিনে সোমবার আদালতে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকাল ৫ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ১৫ আসামীর আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। এরপর আদালতে সাক্ষ্য দেন ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়ীতে থাকা সঙ্গী ষাহেদুল ইসলাম সিফাত। মঙ্গলবার সিফাতের সম্পূর্ণ সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। এতে পরদিন তার (সিফাত) সাক্ষ্য নেওয়ার আদেশ দিয়ে আদালতের কার্যক্রম মূলতবী করা হয়।
ফরিদুল বলেন, বুধবার সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে সিফাতের অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার তৃতীয় দিনের বিচারিক কার্যক্রম। তার জবানবন্দি দেওয়া শেষ হয় বেলা ১২ টা ১০ মিনিটে। এরপর আসামীদের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন। দুপুর পৌণে ২ টায় আদালতের কার্যক্রম এক ঘন্টার জন্য বিরতি দেয়া হয়। পরে বিকাল ৩ টায় বিচারকাজ আবারো শুরু করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় শেষ হয় ১৫ আসামীর আইনজীবীদের জেরা।
এসময় আদালত মামলার বাকি সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আগামী ৫, ৬, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে আদেশ দেয় বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।
ফরিদুল জানান, প্রথম দফায় তিনদিনে সাক্ষ্যদানের জন্য মামলার ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনকে আদালতে উপস্থিত থাকতে সমন জারি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রথম দিন সাক্ষ্যদানের জন্য বাদী ও মামলার ২ নম্বর সাক্ষীসহ চারজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে তৃতীয় দিন পর্যন্ত শুধু দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়। পরে ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় সে সময় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে।
সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামী টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আসামীদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত শেষে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালীন র্যাব ১৫-এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাস ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলার আসামীরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পরির্দশক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএন এর তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচার মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply