শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফে ৫ কোটি টাকার মূল্যের ১ কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার ১ পেকুয়ায় শহীদ ওয়াসিমের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাত করলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ ইনানী সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরাপদ পর্যটনের জন্য ‘সমুদ্র সন্ধ্যা’ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে জি থ্রি রাইফেল সহ আরসা কমান্ডার আটক টেকনাফের পাহাড়ে জেল ফেরত যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার টেকনাফে ৭ লাখ টাকা মালামাল নিলামে সর্বোচ্চ ডাককারি স্থল বন্দরের বিশিষ্ট আমদানি ও রপ্তানি কারক সিআইপি ওমর ফারুক টেকনাফের নিকটবর্তী মিয়ানমারের ‘লালদিয়া’ নিয়ন্ত্রণে তীব্র সংঘাত : গুলি আসছে স্থলবন্দর ও আশে-পাশের এলাকায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রামুতে বড় ভাই হত্যা মামলায় ছোট্ট ভাই গ্রেপ্তার

উখিয়ায় লুটপাট ও হামলার মামলায় মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা এলাকায় প্রায় এক বছর আগে দিবালোকে একদল দূর্বৃত্ত কর্তৃক বাড়ীতে ঢুকে ‘ফিল্মি কায়দায় লুটপাট ও হামলার ঘটনায়’ থানায় দায়ের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রতিবেদন জমার অভিযোগ উঠেছে।

বাদীর অভিযোগ, আসামীদের নাম, ঠিকানা ও সবধরণের তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সহযোগিতার পরও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যোগসাজশ পূর্বক মিথ্যা প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছেন। এতে ন্যায়-বিচার বঞ্চিত হবার আশংকা বাদীর।

মামলার বাদী মিলন বড়ুয়া উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা এলাকার অরুন বড়ুয়ার ছেলে।

বিগত ২০২০ সালের ৭ আগস্ট ‘বাড়ীতে অনাধিকার প্রবেশ, মারধর, লুটপাট ও হুমকীদানের’ অভিযোগে অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামী করে মিলন বড়ুয়া বাদী হয়ে উখিয়া থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় উখিয়া থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রভাত চন্দ্র কর্মকারকে। পরে গত বছর জেলা পুলিশের সব সদস্যকে একযোগে বদলীর পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোজাম্মেল হক।

তদন্ত কর্মকর্তার বরাতে বাদী জানিয়েছেন, বাদীর সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ না করে প্রায় এক মাস আগে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

তবে এ নিয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাদী যেভাবে দাবি করেছেন বিষয়টি আসলে সেই রকম নয়।

এজাহারের বরাতে জানা যায়, গত ২০২০ সালের ২৩ জুলাই সকাল ৮ টার দিকে উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা এলাকায় একটি প্রাইভেট মাইক্রোকার যোগে আসে অজ্ঞাত পাঁচজন দূর্বৃত্ত। তারা স্থানীয় বাসিন্দা অরুন বড়ুয়ার বাড়ীতে অনাধিকার প্রবেশ করে ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিশেষ দলের সদস্য’ বলে জানায়। অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা বাড়ীর লোকজনের কাছে অরুন বড়ুয়ার ছেলে মিলন বড়ুয়ার সন্ধান চান। এসময় মিলন বাড়ীর বাথরুমে ছিলেন।

পরে মিলন বড়ুয়া বাথরুম থেকে বের হয়ে দূর্বৃত্তদের কাছে কি কারণে খুঁজছেন বলে জানতে চান। এসময় দূর্বৃত্তরা তার বুকে ও মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে নড়াছড়া না করার জন্য হুমকী প্রদান করে এবং তাকে এলোপাতাড়ী কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে দূর্বৃত্ত বাড়ীতে অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা মজুদ থাকার কথা বলে আলমিরা এবং বাসার বিভিন্ন মালামাল তছনছ করতে থাকে। এসময় তারা আলমিরায় রক্ষিত মিলন বড়ুয়ার মায়ের ব্যবহার্য্য ১ ভরি ৪ আনা ওজনের স্বর্ণের একটি চেইন ও নগদ ১৫ হাজার লুট করে। পরে চলে যাওয়ার সময় বাড়ী থেকে মিলন বড়ুয়াকে টেনে হিচড়ে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় বাবা অরুন বড়ুয়া ও মা প্রমিতা বড়ুয়াসহ স্বজনরা দূর্বৃত্তদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলে মিলনকে ছেড়ে দেয়।

দূর্বৃত্তরা চলে যাওয়া সময় মামলার বাদী মিলন বড়ুয়ার ছোট ভাই শেখর বড়ুয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে জানায়, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুঁমখা হাতিরঘোনা এলাকার বকুল বড়ুয়ার স্ত্রী অচু বালা বড়ুয়া এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থানরত পশ্চিম মরিচ্যা এলাকার শশাংক মোহন বড়ুয়ার ছেলে প্রদীপ বড়ুয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা চালান উদ্ধারের জন্য এসেছে।

অচু বালা বড়ুয়া ও প্রদীপ বড়ুয়ার সঙ্গে জায়গা-জমির বিরোধ নিষ্পত্তি না করলে মিলন বড়ুয়াকে তুলে নিয়ে হত্যার হুমকী দিয়ে দূর্বৃত্তরা চলে যায়। এসময় বাড়ীর লোকজনের কান্নাকাটি আর শোর-চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে দূর্বৃত্তরা গাড়ী নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।

এরপরও ঘটনার দিন সকাল ১০ টা ১১ মিনিটে অজ্ঞাতনামা একজন দূর্বৃত্ত ০১৭৯৩-৬৩৭০৪৯ নম্বর মোবাইল ফোন থেকে শেখর বড়ুয়ার ব্যক্তিগত ০১৭৬৪-১১৬৪৫৯ নম্বর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মিলন বড়ুয়াসহ পরিবারের লোকজনকে বাড়ী থেকে বের না হবার জন্য হুমকী দেন। পরে মিলন বড়ুয়াকে নিতে দূর্বৃত্তরা আবারো আসবে বলে জানায়।

ঘটনার দিনই মিলন বড়ুয়া বিষয়টি উখিয়া থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করেন। পরদিন ২৪ জুলাই তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্তের পর পুলিশ গত ২০২০ সালের ৭ আগস্ট মামলাটি পুলিশ নথিভূক্ত করেছে।

মামলার বাদী মিলন বড়ুয়া বলেন, মামলাটি নথিভূক্ত হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় তৎকালীন এসআই প্রভাত চন্দ্র কর্মকারকে। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্তে এসে তার (মিলন) ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন সেট জব্দ করে নিয়ে যান। তার (তদন্ত কর্মকর্তা) কাছে ঘটনার দিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দূর্বৃত্তদের ধারণকৃত নিজেদের ফেইসবুক আইডিতে আপলোড করা ভিডিও চিত্রসহ সম্ভাব্য আসামীদের (স্থানীয়রাসহ) নাম, ঠিকানা ও নানা তথ্য জমা দিয়েছি।

“ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্থানীয় আসামীদের সাথে যোগসাজশ করে প্রতিবেদন জমা দিতে কালবিলম্ব করেন। পরে জেলা পুলিশের সব সদস্য একযোগে বদলীর আদেশ আসলে প্রভাত চন্দ্র কর্মকারও বদলী হয়ে যান। পরে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) বদলী হওয়ার সময় তার (মিলন) ফোনটিও ফেরত দেননি। ”

বাদী বলেন, “ প্রভাত চন্দ্র কর্মকার বদলী হওয়ার পর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান উখিয়ার ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোজাম্মেল হোসেন। তার ( মোজাম্মেল ) কাছেও আসামীদের নাম, ঠিকানা, ফেইসবুক আইডি, ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্রসহ নানা তথ্য-প্রমান জমা দিয়েছি। ”

“ শুধু তা-ই নয়, আমি ও পরিবারের সদস্যরা নানা মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে দূর্বৃত্তরা কিভাবে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা চুক্তিতে দূর্বৃত্তদের ভাড়া করেছে; সেইসব তথ্যও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি। মৌখিকভাবেও বেশ কয়েকবার এ নিয়ে অমি তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। ”

মিলনের অভিযোগ, নিজের স্ব-উদ্যোগে এতগুলো তথ্য-প্রমান দিয়ে সহযোগিতার পরও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নানা কারণ দেখিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে কালবিলম্ব করছিল। বার বার যোগাযোগ করা হলে তদন্তকারি কর্মকর্তা বাদীকে এড়িয়ে চলছিল।

বাদী বলেন, শুক্রবার (১১ জুন) বিকালে মামলা তদন্তকারি কর্মকর্তা তাকে মোবাইলে ফোন করে জানায় শনিবার সকালে ইনানী পুলিশ ফাঁড়িতে স্ব-শরীরে দেখা করতে। তার (তদন্ত কর্মকর্তা) কথা মত তিনি (বাদী) শনিবার সকালে সেখানে যান। পরে তাকে (বাদী) প্রায় এক মাস আগে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলে জানায় মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা।

“ এসময় তদন্তকারি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটির সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে প্রায় এক মাস আগে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। থানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) প্রতিবেদন জমা দিতে বাধ্য হয়েছেন ” বলেন মিলন বড়ুয়া।

মিলন জানান, তার বাড়ীতে লুটপাট ও মারধরকারি দূর্বৃত্তরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। চক্রটির সদস্যরা সারাদেশে এ ধরণের অপরাধমূলক নানা ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। গত বছর ২৬ আগস্ট চক্রটির সদস্যরা যশোরের অভয়নগর ও মনিরাপুর উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট, বিএসটিআই কর্মকর্তা ও সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের কাছে আটক হয়েছিল। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে তাদের সাজা হয়েছিল। এ খবরটি যশোরের স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছিল।

তিনি জানান, যশোরে চাঁদাবাজি করতে আটক হওয়াদের মধ্যে তার (মিলন) বাড়ীতে লুটপাট ও মারধরকারিরাও ছিল। যশোরের গণমাধ্যমে সচিত্র প্রচারিত খবরের ফটোকপি ও নিউজ লিংক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোজাম্মেল হকের কাছে জমা দিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোজাম্মেল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে জানিয়েছেন, বাদী যেভাবে অভিযোগ তুলেছেন বিষয়টি সেই রকম নয়। পরে কথা বলবেন জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

পরে তদন্ত কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888