শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ অপরাহ্ন
বিডিনিউজ : ইসরায়েল প্রশ্নে বাংলাদেশের নীতি আগের মতোই থাকার উদাহরণ হিসেবে দেশটিকে এখনও স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েলের নাম বাদ পড়া নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছেন, “আমরা এখনও ওদেরকে স্বীকৃতি দিইনি, যদিও তারা বারবার আমাদেরকে অ্যাপ্রোচ করেছেন।”
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য ওষুধ সহায়তা প্রদান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন মোমেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যতদিন স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হবে, আমরা ততদিন তাদের সাথে আছি। আমরা দখলদার সেনাবাহিনীকে কখনও গ্রহণ করব না।
“আমরা আমাদের (ফিলিস্তিনি) ভাইদের জন্য, এই যে অত্যাচার তাদের উপরে হচ্ছে তার জন্য … এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওদের (ইসরায়েল) সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে না।”
আট দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে জিইয়ে থাকা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে সমর্থন দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
অনেক মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশ স্বীকৃতিক দেয়নি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্রকে। ফলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। বিপরীতে ফিলিস্তিনকে দূতাবাস করতেও ঢাকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে, যদিও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি এখনও পায়নি।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে আগে লেখা ছিল- ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’। গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে পাসপোর্টের সেই লেখা থেকে ইসরায়েল বাদ পড়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইসরায়েল নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোনো নাগরিক অনুমতি ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে সফরে গেলে তাকে ‘বিচারের মুখোমুখি’ হতে হবে।
ঢাকায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদানের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে সরকারের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকার কথাই পুনর্বার জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে। আমরা দুই রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাস করি, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র পাশাপাশি, আল কুদস আল শরিফ হবে ফিলিস্তিনের রাজধানী এবং ১৯৬৭ সালের সীমানার আলোকে হবে। সেটা আমাদের একান্ত কামনা।”
“আমরা আশা করি, আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা যে দুর্গতির মধ্যে আছেন, একদিন তাদের দুর্গতি দূর হবে,” বলেন মোমেন।
অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ওষুধপত্র হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরও বলেন, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কুয়েত, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানসহ বন্ধুপ্রতীম বিভিন্ন দেশকে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে বাংলাদেশে। তবে ফিলিস্তিনের জন্য সাহায্যের ‘একটি ভিন্ন আঙ্গিক আছে।’
“অন্য দেশগুলোকে আমরা যে সাহায্য পাঠিয়েছি, সরকার সাহায্য পাঠিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে সরকার এবং জনগণ উভয়ে সাহায্য পাঠাচ্ছে। আজকে ওষুধ শিল্প সমিতি পাঠাচ্ছে, ইতোমধ্যে তাদের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্যরাও পাঠিয়েছে। জনগণের ভালোবাসা হিসাবে এগুলো পাঠানো হচ্ছে।”
মোমেন বলেন, “দখলদার বাহিনীর বলপ্রয়োগের কারণে আমরা বেদনাহত। ফিলিস্তিনিদের জন্য ভালোবাসা ও সহমর্মিতা হিসাবে সরকার ও সাধারণ জনগণ এগিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের ৫০ হাজার ডলার পাঠিয়েছেন। তাছাড়া আমরা সরকারিভাবে আরও সাহায্য পাঠিয়েছি।”
অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রামাদান বলেন, “গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে সাহায্য করেছে, আমরা ফিলিস্তিনিরা এটা কোনোদিন ভুলব না। আপনাদের জায়গা কেবল আমাদের ইতিহাসে নয়, আমাদের হৃদয়েও রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি এবং সংগ্রাম চালাচ্ছি। এমন এক সময় আসবে, আমরা আপনাদের প্রতিদান দিতে পারব।”
অনুষ্ঠানে ওষুধ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম শফিউজ্জামান বক্তব্য দেন।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply