বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : টাকা এবং ক্ষমতার কাছে বেশীদিন স্থায়ী হয়নি জেল জীবন। তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেট চালিয়ে যায় ইয়াবার কারবার। বিপুল টাকার বিনিময়ে এলাকায় অবৈধ ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে লোকজনের বাহিনী নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিরাপত্তা বলয়ও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়ে দুইবার জেলও খেটেছেন। কিন্তু তার অবৈধ ব্যবসা থামেনি। কয়েক বছরের মধ্যে ইয়াবার বদৌলতে জেলে পেশা থেকে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক।
বল ছিলাম, কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নুনিয়ারছড়ার মো. নজরুল ইসলামের পুত্র মো. জহিরুল ইসলাম ফারুক (৩৭) এর কথা।
ফারুক শুধু একা নয়, এ পেশায় যুক্ত করেছে তার পরিবারের সদস্যদেরও। বিশাল ইয়াবার সিন্ডিকেট গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ধরে সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ব্যবসার আড়ালে চালিয়ে আসছিল মাদক ব্যবসা। দীর্ঘ সময় ধরে তার ইয়াবা কারবারের বিষয়টি গোপন ছিল।
অবশেষে মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে বিপুল সংখ্যক ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার হয় ফারুকসহ তার শ্বশুর ও শ্যালক। এতে ইয়াবা বাণিজ্যের অজানা তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। ফারুক যেন আজ পর্যটন শহরের সবচেয়ে ইয়াবার বড় গডফাদার।
স্থানীয়রা ফারুকের গ্রেপ্তার হওয়ার পর নানা তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এমনকি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিরাও ছিল তার কাছে অসহায়।
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান বলেন, “ফারুক একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। এর আগেও মাদকসহ আটক হয়ে দুইবার জেল খেটেছেন। মূলত: ফারুকের রয়েছে ৫-৬টি মাছ ধরার ট্রলার। ওই ট্রলারগুলোকে পুঁজি করে সে নিয়মিত ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। বিশেষ করে; মাদক বহনে ট্রলারগুলোকে কাজে লাগিয়েছে সে।
মিজান তার সম্পদের কথা উল্লেখ করে বলেন, “ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে ফারুক আজ অঢেল সম্পদের মালিক। রয়েছে প্রচুর পরিমাণ নগদ টাকা। কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনে রয়েছে কয়েকটি ফ্ল্যাট। বিভিন্ন জায়গায়ও রয়েছে প্রচুর জমি।”
কাউন্সিলর মিজান আরও বলেন, “দুইবার কারাগারে থাকলেও ধমিয়ে রাখা যায়নি তার মাদক ব্যবসাকে। কারাগারে থাকাকালীন সময়েও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেট এই ব্যবসা চালিয়ে নেন।”
আরেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি বলেন, “ইয়াবা ব্যবসায়ি ফারুকের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তার পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ে কক্সবাজার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। জড়িত রয়েছে, কয়েকজন প্রভাবশালীও।”
শাহেনা আক্তার পাখি আরও বলেন, “ফারুক তার মাদক ব্যবসার নিরাপত্তায় বিপুল টাকার বিনিময়ে এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলেছেন। যারা তার এই অবৈধ ব্যবসার পাহারাদার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিল। তার এই পুরো সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, “ফারুক ফিশিংয়ের আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার সাথে লিপ্ত ছিল। এ রকম আরো বেশকিছু মাদক ব্যবসায়ির সন্ধান পেয়েছি। ইতিপূর্বের তালিকাকেও আমরা আমলে নিচ্ছি। কিন্তু ইয়াবা ব্যবসা তো আর একদিনে হয়না, প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ি পরিবর্তন এবং নতুন নতুন ইয়াবা কারবারি সংযুক্ত হচ্ছে।”
ইয়াবা ব্যবসায়িদের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারির কথা উল্লেখ করেছেন পুলিশ সুপার।
“মাদক কারবারিরা ভিন্নপন্থা এবং কৌশল অবলম্বন করছে। প্রত্যেকটি বিষয় কিন্তু নজরদারির মধ্যে রেখেছি। আমাদের যে গোয়েন্দা ইউনিট আছে তাদের দিয়ে নিয়মিত নজরদারি করছি।”
নতুন করে ৮০ জন মাদক কারবারিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ যাচাই বাছাই করা হচ্ছে বলেও পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
“আমরা ইতিমধ্যে আরো ৮০ জনের তালিকা তৈরী করেছি। তালিকাটি যাচাই বাছাই করছি। বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রস চেক করে সেই তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।”
এসপি বলেন, “মাদক কারবারি কিন্তু একা হয় না। এটা সিন্ডিকেট করে হয়। মাদক কারবারিরা সামনে কাজ করে তেমনি তাদের পেছনে গডফাদারও থাকে। পাশাপাশি যারা কুশীলব আছে তাদেরকে কিন্তু আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে। আমরা শুধু একটি মামলা নয়, যাচাই বাছাই করে সুনির্দিষ্টভাবে আমরা ব্যবস্থা নিব।”
পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, “আমরা এই টাকা মাদক বিক্রির টাকা হলেও যারা এই টাকা জেনে শুনে হেফাজতে রেখেছিল তারাও কিন্তু ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তারাও আইনের আওতায় আসবে।”
অপরদিকে, কক্সবাজারে পৃথক অভিযানে পৌন ১৮ লাখ ইয়াবা, পৌন ২ কোটি টাকা সহ আটক ৫ জনের বিরুদ্ধে ২ টি মামলার দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। যার একটি মাদক আইনে, অপরটি অবৈধ অর্থ মজুদ রাখার দায়ে।
কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনকে আজ কক্সবাজার আদালতে প্রেরণ করা হবে। আদালতে এদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
মঙ্গলবার দিনব্যাপী ৩ টি অভিযানে পৌন ১৮ লাখ ইয়াবা, পৌন ২ কোটি টাকা সহ ৫ জনকে আটক করা হয়।
এতে আটকরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নুনিয়ার ছড়া মো. নজরুল ইসলামের পুত্র মো. জহিরুল ইসলাম ফারুক (৩৭), একই এলাকার মো. মোজ্জাফরের পুত্র মো. নুরুল ইসলাম বাবু (৫৫), ফারুকের শাশুড় আবুল হোসেনের পুত্র আবুল কালাম (৫৫), আবুল কালামের পুত্র শেখ আবদুল্লাহ (২০), ফারুকের মামা শাশুড় আবু সৈয়দের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম (৪৪)।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply