শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন
শংকর বড়ুয়া রুমি : মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে টেকনাফ স্থল বন্দরে ২ দিন বন্ধ থাকার পর এখন পণ্যবাহি ট্রলার আসতে শুরু করেছে; এতে বন্দরের পরিস্থিতি ও কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
এ নিয়ে খুশি বন্দরের ব্যবসায়ি ও শ্রমিকরা। আর বন্দরের আমদানি-রপ্তানি অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আদায়ও স্বাভাবিক থাকবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
টেকনাফ স্থল বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ ভট্টার্চায্য জানিয়েছেন, বুধবার ২ টি ও বৃহস্পতিবার ১ টি পন্যবাহি ট্রলার বন্দরে এসেছে।
গত ২ দিনে মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে আসা এসব ট্রলারে আসে বিভিন্ন ধরণের আচার ও শুটকি পন্য।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বেসামরিক সরকারের সাথে সেনাবাহিনীর মধ্যে দ্বন্ধ ও উত্তেজনা চলছিল। এরই মধ্যে গত সোমবার ভোরে ঘটে যায় সামরিক অভ্যুত্থান। এতে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন নির্বাচনে নিরংকুশভাবে জয়ী ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এর নেত্রী অং সান সু চি ও দলটির বেশ কয়েকজন জেষ্ঠ্য নেতা। এছাড়া রাজধানী নেপিদোর একটি ভবনে নজরবন্দি রাখা হয় দেশটির পার্লামেন্টের ১০০ শতাধিক সদস্যকে। ঘোষণা করা ১ বছরের জন্য জরুরি অবস্থার।
রাজধানী নেপিদো ও ইয়াঙ্গুনসহ দেশটির বড় শহরগুলো ভারী অস্ত্র হাতে টহলে নামে সেনাবাহিনীরা সদস্য। এরই মধ্যে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি শহরের ৭০ টি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মিরা অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় নেমে ধর্মঘট শুরু করেছে। নেপিদোসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও সামরিক জান্তার ক্ষমতা গ্রহণের বিরোধীতার পাশাপাশি অং সান সু চি’র মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এনএলডি’র কর্মিরা সহ গণতন্ত্রকামীরা। এতে পুরো মিয়ানমার জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে কোন ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে প্রথম ধাক্কা লাগে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্যের উপর। এর জের ধরে গত সোমবার ও মঙ্গলবার বন্ধ ছিল টেকনাফ স্থল বন্দর আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্য। এই দুইদিন মিয়ানমার থেকে কোন পন্যবাহি ট্রলার টেকনাফ আসেনি। টেকনাফ থেকেও মিয়ানমার যায়নি কোন ট্রলার। এতে জীবন-জীবিকা নিয়ে বন্দরের শ্রমিকদের মধ্যে তৈরী হয় হতাশার। অন্যদিকে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ব্যবসায়িদের মাঝেও তৈরী হয় শংকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমনিতেই করোনা মহামারির কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বন্দরে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ টি পন্যবাহি ট্রলার আসা যাওয়া করত। কিন্তু করোনার প্রভাবে এখন প্রতিদিন ২/৩ টির ট্রলার আমদানি-রপ্তানি পন্য বহন করছে।
টেকনাফ বন্দরে পন্য উঠা-নামার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আব্দুল করিম বলেন, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে বন্দরে ২ দিন পন্যবাহি ট্রলার আসা-যাওয়া বন্ধ ছিল। এই দুইদিন কোন ট্রলার বন্দরে না আসায় এবং বন্দর থেকে কোন ট্রলার না ছাড়ায় শ্রমিকরা বেকার ছিল। এতে তারা ( শ্রমিকরা ) দুর্ভোগে পড়েন।
এখন দুইদিন বন্ধ থাকার পর মিয়ানমার থেকে পন্যবাহি ট্রলার আসতে শুরু করায় শ্রমিকরা আবারো কাজে যোগ দিতে পেরে খুশি বলে জানান বন্দরের এ শ্রমিক।
বন্দরের ব্যবসায়ি অং ক্য নাং বলেন, গত সোমবার টেকনাফ বন্দরে রপ্তানির জন্য মজুদ করা বেশ কিছু পরিমান কুঁচিয়া। কিন্তু ওইদিন ভোরে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে হঠাৎ করে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়ে। দুইদিন বন্দর থেকে কোন ট্রলার মিয়ানমার যেতে পারেনি। এতে বেশ কিছু সংখ্যক কুঁচিয়া মারা যাওয়ায় তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টম ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট (সিএন্ডএফ) ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এহেতাশামুল হক বাহাদুর বলেন, মিয়ানমারের উদ্ভুদ পরিস্থিতির কারণে বন্দরে দুইদিন পন্যবাহি ট্রলার আসা-যাওয়া বন্ধ ছিল। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে ব্যবসায়িদের মধ্যে শংকার সৃষ্টি হয়।
“ কিন্তু মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও গত বুধবার পন্যবাহি দুইটি ট্রলার টেকনাফ বন্দরে এসেছে। এসব ট্রলার যোগে টেকনাফ থেকে রপ্তানি পন্য পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যবসায়িদের মাঝে সৃষ্ট শংকা অনেকটা কেটে গেছে। ”
যদি মিয়ানমারের সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অবসান ঘটে তাহলে বন্দরের কার্যক্রম আরো স্বাভাবিক হবে বলে মন্তব্য করেন টেকনাফ বন্দরের ব্যবসায়ি সংগঠনের এ নেতা।
টেকনাফ স্থল বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য্য বলেন, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে মঙ্গলবার পর্যন্ত পন্যবাহি কোন ট্রলার টেকনাফ বন্দরে আসেনি। কিন্তু উদ্ভুদ পরিস্থিতির মধ্যেও বিভিন্ন ধরণের আচার ও শুটকিবাহি গত বুধবার ২ টি এবং বৃহস্পতিবার ১ টি ট্রলার বন্দরে এসেছে। এতে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
“ মিয়ানমার থেকে আসা এসব ট্রলার যোগে টেকনাফ বন্দর থেকে বেশ কিছু পরিমান পন্যও রপ্তানি হয়েছে। ”
বন্দরের এ কর্মকর্তা বলেন, “ করোনা মহামারির কারণে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এই পরিস্থিতি চলছে গত প্রায় এক বছর ধরে। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রাজস্ব আদায়ও কিছুটা কমে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হচ্ছে না। ”
“টেকনাফ স্থল বন্দরে গত জানুয়ারি মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ কোটি ২৯ লাখ ৭৪ হাজার ১৫৬ টাকা। যা মাসিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ কোটি ৩১ লাখ ৭৪ হাজার ১৫৬ টাকা কম ” বলেন বন্দরটির শুল্ক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য্য।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply