শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন
নুপা আলম : মিয়ানমার সীমান্তের নাফনদী তীর ঘেঁষে সীমান্ত সড়কের কাজ এগিয়ে চলছে। স্থানীয়রা বলছেন এ সড়ক শেষ হলে মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি দায়িত্ব পালনে সহায়তা হবে। বিজিবি কর্মকর্তা বলছেন, এ সড়কটি বিজিবির টহল জোরদার করার পাশাপাশি সীমান্ত নজরধারীতে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে আধুনিয়ক করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে টেকনাফ উখিয়ার ৬০ কিলোমিটার এলাকায় সীমান্ত সড়কের কাজ শেষ করা হবে।
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ। ইয়াবা, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মানবপাচারসহ চোরাকারবারিদের অভয়রাণ্য ছিল এই সীমান্ত উপজেলা। নানাভাবে আলোচনায় আসলেও এ অপরাধ রোধ করা সম্ভব হয়নি। তার জন্য বিকল্প পথ খোঁজ ছিলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। তারই অংশ হিসেবে সীমান্ত এলাকা জুড়ে সীমান্ত সড়কের কাজ শুরু করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিনে এ সড়কের কাজ এগিয়ে চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উখিয়া-টেকনাফ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে নাফ নদীর পাড় বরাবর সীমান্তবর্তী দু’টি উপজেলা। উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার পূর্ব দিকে মিয়ানমার অবস্থিত। উক্ত উপজেলা দু’টির কৃষি ফসল রক্ষার লক্ষ্যে সমুদ্রের স্বাভাবিক জোয়ার ও লবনাক্ততা প্রবেশ রোধে বিগত ষাটের দশকে উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের আওতায় নাফ নদীর ডানতীর বরাবর পোল্ডার-৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি, ৬৮ এ বেড়ীবাঁধ এবং পানি নিষ্কাশন অবকাঠামোসমুহ নির্মাণ করা হয়েছিল। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ সমূহ বর্ডার গার্ড বংলাদেশ (বিজিবি) দ্বারা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও টহল দানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্ত দীর্ঘ সময় উল্লেখযোগ্য মেরামত না হওয়ার কারণে পোল্ডার সমুহের কার্যকারিতা μমে μমে হ্রাস পাচ্ছে এবং পোল্ডারের অভ্যন্তরে বসবাসরত জনগণ এর সুফল হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বাঁধ ও অবকাঠামোসমুহ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় থাকায় মোটরযান দ্বারা বিজিবি সদস্যদের সীমান্ত টহল কাজ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমার শরনার্থী এবং অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকদের বিষয়ে প্রনীত জাতীয় কৌশল বাস্তবায়নের নিমিত্তে স্ব-রাষ্ট মন্ত্রনালয়ে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় “সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমুহ বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে” মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতদবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় হতে বাপাউবোকে অনুরোধ জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে বাপাউবোর তরফ হতে গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশের আলোকে সীমান্ত সড়ক প্রকল্পটি প্রস্তত করা হয় ।
প্রকল্পের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি টহল বৃদ্ধি পূর্বক কঠোর সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাতে মিয়ানমার হতে অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করা যায়। এবং এছাড়া বাপাউবোর ৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি, ৬৮ পোল্ডারসমূহ পুর্নবাসন করে প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উনড়বয়ন করা যাতে করে পোল্ডারের অভ্যন্তরের সাধারণ জনগণ সুফল ভোগ করতে পারে। একই সঙ্গে জলাবদ্ধতা হ্রাস করা।
স্থানীয় এলাকাবাসি বলছেন এ সড়ক সীমান্তের নিরাপত্তায় বিজিবিকে সহায়তা করবে। বিশেষ করে ইয়াবা পাচার রোধে টহলে দ্রুতগামি যান ব্যবহার করতে পারবে। সীমান্ত টহল জোরদার করা গেলে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
একই কথা বলেছেন, বিজিবি’র টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান। তিনি বলেন, নাফনদীটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সীমান্ত। যেখান দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা প্রবেশ হচ্ছে। সীমান্ত সড়ক নিমার্ণের পর বিজিবি সহজে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। এতে ইয়াবা পাচার রোধ সম্ভব হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সীমান্ত সড়ক ব্যবহার করা সম্ভব। একই সঙ্গে সীমান্ত সড়কে বসানো হচ্ছে স্মার্ট ডিজিটাল ডিভাইস। এই ডিভাইসের মাধ্যমে নজরদারি আরও সহজ হয়েছে বলে মনে করছেন বিজিবির এই অধিনায়ক।
তিনি জানান, সীমান্ত সড়কে ৪০ ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনের পাশাপাশি কাঁটা তারের বেড়া নিমার্ণের পরিকল্পনার কথাও বলেছেন তিনি।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে উখিয়া পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক বিজিবির প্রস্তাবে এগিয়ে চলছে। ২ হাজার ৬ শত কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এ প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৩ সালের জুন মাসে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply