শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও ক্ষমতাসীন দলে জেষ্ঠ্য নেতাদের আটক করে জরুরি অবস্থা জারির মধ্য দিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী; আর এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এদের কেউ বলছেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আরো বিলম্বিত হবে। তারা ঘটনার নিন্দার পাশাপাশি দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, অং সান সু চি ক্ষমতায় এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতারনা করেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেছেন। বেঈমানের পতন হওয়ায় এ ঘটনায় তারা খুশি হয়েছেন। তবে তাদের সবারই দাবি, নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশটিতে প্রত্যাবাসনের। এই মুহুর্তে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি সচেতন মহলের। আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার আগ-মুহুর্তে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাবাসনকে বিলম্বিত করবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে দ্বন্ধ ও উত্তেজনা চলে আসছিল। এই প্রেক্ষাপটে সোমবার ভোরে রাজধানী নেপিডোতে অভিযান চালিয়ে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি এবং দলটির জেষ্ঠ্য নেতাদের আটক করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এরপরই জরুরি অবস্থা জারি করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী।
এ ঘটনায় দেশটির রাখাইন রাজ্য (আরাকান) থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যেসব রোহিঙ্গা সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সহ এর আগে বিভিন্ন সময়ে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসেছিল। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্পে এখন বসবাস করছে প্রায় ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গা নাগরিক। সোমবার ভোরে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি এবং তার দলের জেষ্ঠ্য নেতাদের আটকের ঘটনায় এসব রোহিঙ্গাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় কক্সবাজারে বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ খুশি হয়েছেন বলে অভিমত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এর আগে ক্ষমতায় এসে অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতারনা করেছেন। রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেছেন।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানিয়ে বলছেন, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্টার ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অনিশ্চিতের মুখে পড়েছে। এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি আরো বিলম্বিত হবে।
তবে এ নিয়ে বান্দরবান জেলার নাইক্ষংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের শুণ্যরেখার ক্যাম্পে বসবাসকারি রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সম্প্রদায় মিয়ানমারে গণতন্ত্র হত্যার জঘণ্য চেষ্টা নিন্দা জানাই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তার আহবান, যে কোন মূল্যে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, মিয়ানমারে ফের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করা এদেশের জন্য শংকার বিষয়। ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন উখিয়া টেকনাফে অবস্থান করছে। এদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি প্রক্রিয়া চলছে। চীন এবং ভারতের মধ্যস্ততায় প্রত্যাবাসনের কাজ এগিয়ে চলছে। সামরিক অভ্যুত্থান নতুন করে শংকা তৈরী করেছে। পাশাপাশি সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সেনা ক্ষমতায় থাকলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের নেতা মাহামুদুল হক চৌধুরী জানান, সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়া অনিশ্চিয়তার পথে ধাবিত হল। সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাদের পররাষ্ট্রনীতি, রোহিঙ্গাদের প্রতি মনোভাব না জানা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। এর জন্য আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব তাঁর।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply