রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন
বাংকার,গুহা কিংবা ধ্যানাগার যেটাই বলিনা কেন, এটা যে একটা ঐতিহাসিক স্থাপনা এতে কোন সন্দেহ নেই। টেকনাফের নেটং পাহাড়ের ভূমি থেকে ২০০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা তিন প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট এই স্থাপনাটি আপনার অনিসন্ধিৎসু মনকে ইতিহাসের সন্ধানে তাড়া করবে।
গুহাটির তিনটি প্রবেশ পথের মোট প্রস্থ ২৫ ফুট। পাথর কেটে বানানো এধরণের গুহা বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। রবার্ট ব্রুশের গুহায় আত্মগোপনের গল্পটি যারা পড়েছি তাদের কৌতুহলি মন গুহা আবিস্কারের ভাবনায় আনন্দ পাবে। যাদের স্মৃতিতে কিংবা জ্ঞানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার চিত্র তারা তাদের চিন্তা চেতনায় ব্রিটিশ সৈনিকদের অস্ত্র সজ্জিত বাংকার বলে ভাবতে পারেন। তবে বাংকারের সংজ্ঞানুযায়ী এটির কোন লক্ষণ দেখা যায়না।বাংকার সাধারণত প্রশস্ত হয়। বসবাসের উপযোগী থাকে এবং বিপদের সময় অন্যত্র চলে যেতে পারার মতো পেছনে পথ থাকে। কিংবা সুড়ঙ্গ থাকে। যার কোন চিহ্ন এখানে পরিলক্ষিত নয়।
একেকজনের ভাবনায় একেক রকম চিত্র ফুটে উঠলেও স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন এটি অনেক দিনের প্রাচীন ধ্যানাগার। যার কিছুটা বাস্তবতা প্রকোষ্ঠের ভেতরে পরিলক্ষিত হয়। ধ্যান করার জন্য প্রয়োজনীয় বসার পাঠাতন মাঝখানের প্রকোষ্ঠে সুস্পষ্ট। ঐখানে বসে কোন সাধক কিংবা মনীষী তার আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন ছিলেন।
দেশ বিভাগের পূর্বে নাইট্যংপাড়া অঞ্চলটি ছিলো রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা।১৯৪৭ সালে ব্রিটিশের কবল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ মুক্ত হাওয়ার আনুমানিক এক বছর পর বার্মা ব্রিটিশের হাত থেকে মুক্ত হয়। এরপরই এ অঞ্চলের রাখাইনরা বার্মায় পাড়ি জমায়।
ইতিহাস ঐতিহ্যের সংস্করণ ও সংরক্ষণের আওতায় এনে প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাখার পরিপ্রেক্ষিতে নেটং বা দেবতার পাহাড়ের এই স্থানটি পর্যটক এবং ঐতিহাসিকদের নজর কাড়বে। মাটির খচিত শিল্পের ছোঁয়ায় প্রাচীন এই গুহাটি বন্যপ্রাণী থেকে অনেকটা মুক্ত।
টেকনাফের নাইট্যংপাড়ার কোস্টাল ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন পাহাড়ি পথ বেয়ে উঠলেই গুহাটি দৃশ্যমান হবে। গুহার সামনে দাঁড়িয়ে নাফ নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ্য। ধারনা করা হয় বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী কোন ভিক্ষু হয়তো ধ্যানে মগ্ন থাকার নিমিত্তে এ গুহার অবতারণা করেন। উল্লেখ্য যে গুহার পাহাড়ের নিচে বেশ কিছু জায়গা জুড়ে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মৃতদেহ সৎকার করার শশ্মান । তবে এই শশ্মান সাধারণ মানুষের জন্য উম্মুক্ত ছিলোনা। শুধুমাত্র বৌদ্ধদের ধর্মীয় গুরুদের মৃতদেহ সৎকারের জন্য সংরক্ষিত ছিলো।পাহাড়ের শীর্ষে গৌতম বুদ্ধের সুবিশাল মুর্তি ছিলো বলে স্থানীয় জনগনের অভিমত। এখানে একটি বৌদ্ধদের কেয়াং বা প্যাগোডাও ছিলো। প্যাগোডার ঘরটি ছিলো টিনের চাউনি সেমি পাকা ঘর। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে প্যাগোডায় অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং ভান্তের বসবাস ছিল। তবে কালের বিবর্তনে সেই সুদৃশ্য বৌদ্ধ মুর্তি ও প্যাগোডা আর নেই।
পাহাড় আর নদীর প্রতি যাদের প্রবল আগ্রহ, ভ্রমণ বিলাসী সেই মানুষ গুলো এ স্থানটি ভ্রমণে আসতে পারেন। পাহাড় আর নদীর যে গভীর মিতালি তা এখানে এলেই উপলব্ধি করতে পারবেন।নদীর কিনারায় সবুজ প্যারাবন আপনাকে স্বাগত জানাবে। নদীর ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দে আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য এক ভুবনে। পাহাড় আর নদী একসাথে মিলেমিশে একাকার। এতে রথ দেখা এবং কলা বেচা দুটোই একসাথে সম্পন্ন হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply