রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার সদরের খুরুশকূলের তেতৈয়ায় জমি দখলের উদ্দ্যেশে হামলা চালিয়ে এক ব্যক্তির বসত বাড়ী উচ্ছেদ ও লুট করার অভিযোগে থানায় এজাহার দায়ের হয়েছে।
এ নিয়ে ভূক্তভোগী পরিবার হামলাকারিদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে ভিন্ন এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো হামলাকারিরা নানাভাবে হুমকী-ধমকী দিচ্ছে বলে ভূক্তভোগী পরিবারটির অভিযোগ।
গত ৩ জানুয়ারী রাতের আঁধারে সদর উপজেলার খুরুশকূল ইউনিয়নের তেতৈয়া সওদাগর পাড়ায় সংঘটিত এ ঘটনায় পরদিন কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন স্থানীয় ভূক্তভোগী সুলতান আহমদের ছেলে দিদারুল ইসলাম ওরফে চাষী দিদারুল।
থানায় দায়ের এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামের জনৈক মোহাম্মদ মিয়ার কাছ থেকে ২ একরের বেশী জমি কিনেন চাষী দিদারুলের বাবা সুলতান আহমদ। সেই সূত্রে উল্লেখিত জমির লাগোয়া আরো আরো ২ একর খাস জমি তিনি অধ্যাবদি ভোগদখল করে আসছেন। ওই জমিতে গত ৫/৬ বছর আগে বসত বাড়ী তৈরী করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন চাষী দিদারুল আলম। কিন্তু কালের বিবর্তনে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ওই জমির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ভূমিদূস্য চক্রের।
চাষী দিদারুল অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে জনৈক জাহাঙ্গীর কাশেমের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ ভূমিগ্রাসী চক্র তার ( চাষী দিদারুল ) ভোগদখলীয় জমি দখলের জন্য নানা অপচেষ্টা শুরু করে। তাকে বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদের জন্য নানা সময় হুমকী-ধমকীও প্রদান করে ভূমিগ্রাসী চক্রটি।
” এ নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর বিকালে জমি দখল ছেড়ে দিতে সংঘবদ্ধ চক্রের ৫০/৬০ জন লোক বাড়ী ঘেরাও করে আমার ( চাষী দিদারুল ) পরিবারে হুমকী দেয়। এসময় হামলকারি লাঠিসোটা নিয়ে বাড়ী ঘেরা-বেড়ায় ভাংচুর শুরু করে। এক পর্যায়ে হামলার উপক্রম হলে ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশকে অবহিত করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। “
ভূক্তভোগী দিদারুল বলেন, ” হামলাকারিদের ভয়ে আমি প্রায় এক মাস যাবত পালিয়ে বেড়াই। পরে গত ৩ জানুয়ারী বিকালে এলাকায় ফিরলে ভূমিগ্রাসী চক্রের লোকজন হামলা করার জন্য আবারো তেড়ে আসে। এসময় ঘটনার ব্যাপারে পুলিশকে কেন জানানো হয়েছে তা জানতে চেয়ে হুমকী দিয়ে চলে যায়। এ বিষয়টি আবারো ৯৯৯ নম্বর কল দিয়ে অভিযোগ করা হলে কক্সবাজার সদর থানার এসআই বিপ্লব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। “
” ওই দিন ( ৩ জানুয়ারী ) রাতে ভূমিদূস্য চক্রের স্থানীয় ইমতিয়াজ, আবছার মিয়া, সরওয়ার কামাল, রবিউল্লাহ ও সাবেক মেম্বার ফয়েজ উল্লাহ সহ অন্তত শতাধিক লোকজন জড়ো হয়ে আবারো হামলা চালায়। এসময় আমার ( চাষী দিদারুল ) স্ত্রী-সন্তানদের বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে বসত বাড়ী ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ ঘটনা থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে রাতেই এসআই জমিরুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। “
সেই থেকে হামলাকারিদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে খুরুশকূলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান ভূক্তভোগী এ ব্যক্তি।
দিদারুল জানান, এ ঘটনায় গত ৪ জানুয়ারী ৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত১৫/২০ জনকে আসামী করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
গত ৩ জানুয়ারী বিকালে ভূক্তভোগী দিদারুলের ৯৯৯ নম্বরের ফোন কলের সূত্রে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারি এসআই বিপ্লব বলেন, ফোনে ঘটনার খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় ঘটনাস্থলে প্রতিপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বসত বাড়ীটি অক্ষতাবস্থায় থাকলেও সীমানার ঘেরা-বেড়ায় কিছুটা ভাংচুরের আলামত দেখতে পাওয়া গেছে।
ওইদিন রাতে আবারো হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজার সদর থানার এসআই জমিরুল।
এ নিয়ে জমিরুল বলেন, হামলা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কোন কোন বাড়ীর স্থিতি দেখা যায়নি। পুলিশ পৌঁছার আগে বাড়ীর ঘেরা-বেড়া ও অবকাঠামো উপড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, ” ঘটনাস্থলের ছবি তোলা হয়। সেখানে আগে থেকে বাড়ী থাকার আলামত লক্ষ্য করা গেছে। তবে এ ব্যাপার সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। “
এ ব্যাপারে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠা ইমতিয়াজ ঘটনার অস্বীকার করে বলেন, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে প্রতিপক্ষ। নিজের ( চাষী দিদারুল ) বসত বাড়ী নিজে উপড়ে ফেলে তাদের ( ইমতিয়াজ ) উপর দোষ চাপানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ” বিরোধীয় জমি প্রতিপক্ষের ( দিদারুল ) লোকজন গত ৩০ বছরের বেশী সময় ধরে ভোগদখলে থাকার তথ্যটিও সত্য নয়। মূলত ওই জমি বাপ-দাদাদের ভোগদখলীয় ছিল। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘তেতৈয়া আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ওই জমি আমার পূর্ব-পুরুষরা দান করেন। “
গত ৩/৪ বছর আগে দিদারুলের পরিবার ওই জমি মাছ চাষের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছে বলে উল্টো অভিযোগ তুলে ইমতিয়াজ বলেন, ” এখন স্কুলের জমি কুক্ষিগত করার কুমানসে দিদারুলের বাড়ী ভাংচুরের জন্য আমাদের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। “
এ নিয়ে খুরুশকূল ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ কামাল বলেন, গত ৫/৬ বছর ধরে বিরোধীয় জমিতে বসত বাড়ী তৈরী করে দিদারুল আলম পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছে। তবে জমিটির মালিকানার ব্যাপারে তিনি সার্বিক অবগত নন।
থানায় ভূক্তভোগী দিদারুলের দায়ের এজাহারটির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই আমজাদ হোসেন বলেন, এজাহারের অভিযোগের ঘটনাটির তদন্ত চলছে। এ নিয়ে তিনি ঘটনার তদন্তের জন্য শনিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঘটনার আরো ব্যাপক তদন্তের পর প্রাথমিক সত্যতা পেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এসআই আমজাদ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply