শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
বাংলা ট্রিবিউন : আফরান নিশো। টিভি নাটকের তুমুল ব্যস্ত অভিনেতা। চরিত্রের বৈচিত্র্য আর জনপ্রিয়তা মিলিয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন নিয়মিত। যদিও চলমান করোনাকাল বদলে দিলো সব দৃশ্যপট।
সময়ের সর্বোচ্চ ব্যস্ত তারকার ফেসবুক দেয়ালজুড়ে ভাসছে পুরনো দিনের নাটক-সিনেমার ক্লিপ আর নিজের কাঁচা-পাকা চুল-দাড়ির নানামাত্রিক ছবি।
অথচ গেল ক’বছর ধরে কাজের চাপে দম ফেলারও ফুরসত মেলেনি আফরানের। তাই তাকে ফোনে পাওয়াটাও অন্যরকম এক আশ্চর্য। সেই নিশোকে এবার পাওয়া গেলো।
খবর দিলেন কাজে ফেরার। সাড়ে চার মাসের লম্বা বিরতি ভেঙে গতকাল (২২ জুলাই) উত্তরার একটি শুটিং বাড়ি থেকে কাজ শুরু করেছেন। শুরুটা পরিচালক রুবেল হাসানকে দিয়ে। আরও করবেন মাহমুদুর রহমান হিমির সঙ্গে।
প্রথম নাটকে সহশিল্পী মেহজাবীন চৌধুরী আর দ্বিতীয়টিতে তাসনিয়া ফারিন। মিজানুর রহমান আরিয়ান আর জাকারিয়া সৌখিনের কাজও করবেন মাঝে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি’র তত্ত্বাবধানে ঈদের আগে টানা পাঁচটি নাটকের কাজ করার কথা রয়েছে এই বহুমাত্রিক অভিনেতার।
আফরান নিশোর ইচ্ছে টানা পাঁচটি কাজ করে নির্মাতা ও প্রযোজকদের ঈদের বাজারে পুষিয়ে দেওয়া। অবশ্যই সেটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আর সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়েই করছেন।
নিশো বললেন, ‘আমরা যেটা করেছি, যে শুটিং বাড়িতে কাজ হচ্ছে, পুরোটা জীবাণুমুক্ত করে নিচ্ছি। পাশাপাশি দুটি হাউজে কাজ করবো। এখানে ২০ জন কলাকুশলী আছেন। প্রত্যেকের টেস্ট করা হয়েছে। শিল্পীদেরও তাই। টেকনিক্যাল টিমের সবাই হাউজেই থাকছেন। আমার বাসা পাশে, তাই রাতে ফিরে যাচ্ছি। তবে আমার জন্য আলাদা একটি রুম রেখেছি বাসায়। আবার কাজের সময় বের হয়ে আসছি। এভাবেই চলছে।’
প্রশ্ন করা হয়েছিল, শুটিং করতে কেমন লাগছে এখন! প্রত্যুত্তরে এই তারকা বলেন, ‘সত্যি বলতে, একদমই ভালো লাগছে না। কিন্তু করতে হচ্ছে। বাসা থেকে যখন বের হচ্ছিলাম, আমার ছেলে বললো কোথায় যাচ্ছ বাবা? বললাম, করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে। যদি হারাতে পারি তাহলে তুমি এরপর থেকে আমার সঙ্গে যেতে পারবে। সে মনে মনে চাইছে আমি যেন করোনাকে হারিয়ে বাসায় ফিরতে পারি। আমি মনে মনে শঙ্কায় থাকি, এই বাইরে আসার ফলে কেউ না যেন হারিয়ে যান। আসলে অনেকে মনে করছেন দরিদ্রদের জন্য করোনা খুব ভয়াবহ হিসেবে এসেছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা উচ্চ-মধ্যবিত্তদের জন্যও এটা ভয়াবহ। যার মাসের আয় ১০ হাজার টাকা, মাস শেষে তার কিছু থাকে না। আবার যার আয় ৫০ হাজার টাকা তারও মাস শেষে কিছু থাকে না। কারণটা আয় অনুযায়ী আমরা খরচ করি বা জীবনযাপন করি। যেটা গত চার মাস বন্ধ।’
নিশো চাইছেন এই করোনাযুদ্ধে অল্প অল্প করে কাজ করে যেতে। এও চাইছেন, তার কারণে যেন কোনও কলাকুশলী বিপদে না পড়েন। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও।
নিশোর ভাষ্য, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা বাসায় থেকেও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলাম। স্ট্রেসে ফেলে দিচ্ছিলাম নিজেদের। এটা থেকে মুক্তির জন্যও কাজ করা দরকার। আমরা মানুষরা খুব স্বার্থপর। প্রকৃতির ওপর অনেক জুলুম করেছি। শান্ত থাকা, সুস্থির থাকা, নমনীয় হওয়া- এগুলো ভুলে গিয়েছিলাম। প্রকৃতির গায়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলেই গেছি। সবকিছু আমাদের কাছে ইউজলেস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি পাশের মানুষ, কাছের মানুষও। আমি বরাবরই বলি, আমরা স্বার্থপর। প্রতিদিন আড়াই হাজার মানুষ আমাদের দেশে মারা যায়। আতঙ্কিত হই না। কিন্তু করোনায় ৪০ জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে আতঙ্কিত হচ্ছি। কারণ আমরা বুঝতে পারছি, পরের দিনের এই ৪০ জনের মধ্যে আমি বা আমার প্রিয়জন থাকতে পারে। তাই করোনা শুধু আমাদের নিজেদের চেনায়নি, জীবনবোধও তৈরি করেছে। প্রিয়জনের পাশে থাকা, ভালো সময় কাটানো যেন বোনাস কিছু। এই করোনাতে এ একটি জিনিসই খুব উপলব্ধি হয়েছে।’
নিশো জানান, এই পর্বের শুটিং শেষ করে তিনি ১৪ দিনের জন্য সেলফ কোয়ারেন্টিনে যাবেন। এরপর আবার কাজে নামবেন। এরপর আবারও কোয়ারেন্টিন। করোনাকালে ঘরে বসে না থেকে, এভাবেই এগিয়ে যেতে চান ছোট পর্দার এই বড় তারকা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply