শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ন
বাংলা ট্রিবিউন : রাজধানীসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর হাট এখনও না বসলেও এরই মধ্যে জমে উঠেছে ডিজিটাল হাট। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (মার্কেটপ্লেস), ই-কমার্স সাইট, ওয়েবসাইট, ফেসবুকভিত্তিক সাইটগুলোতে এরইমধ্যে কোরবানির পশুর বুকিং ও বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। দেশের ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও ক্রেতারা কোরবানির পশুর বুকিং দিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদের এক বা দু’দিন আগে ক্রেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে কোরবানির পশু পৌঁছে দেবে।
এবারের কোরবানির ঈদ অন্য সময়ের মতো নয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। তাই অনলাইনে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এবার সরকারও এগিয়ে এসেছে। রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশে বসিয়েছে ডিজিটাল হাট। ‘ফুড ফর নেশন’ ও ‘একশপ’-এর মাধ্যমে এবার সরকারিভাবে কোরবানি পশু বিক্রি করা হচ্ছে। বিভাগীয় কমিশনার, অনেক জেলার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এবার স্থানীয়ভাবেও অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইট, অ্যাপস ইত্যাদি। অন্যদিকে ফেসবুকনির্ভর পেজ তো আছেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সোমবার (২০ জুলাই) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা (আইসিটি বিভাগ) এটুআই, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ই-ক্যাবের সহযোগিতায় অনলাইন পশুর হাট ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ চালু করেছি। ভালো সাড়াও মিলেছে। দেশব্যাপী চালু করা আমাদের ফুড ফর নেশন (foodfornation.gov.bd) সাইটের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চার হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। আরও চার হাজার গরু সাইটে নিবন্ধিত হয়েছে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে (এটুআই) ‘একশপ’ (ekshop.gov.bd) এরই মধ্যে দুই হাজার গরু নিবন্ধিত হয়েছে। এখনও হাতে সময় আছে। কোরবানির আরও পশু এ সাইটে নিবন্ধিত হবে।’
তিনি জানান, রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে এসব ডিজিটাল হাট জমে উঠেছে। করোনাকালে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এসব ডিজিটাল মাধ্যম পরিবর্তনের মূলে কাজ করছে। মানুষ এখন ঘরে বসেই, কোনও ধরনের আতঙ্ক ছাড়াই কোরবানির পশু কিনতে পারছেন। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, স্মার্টফোন সেটের ব্যবহার বৃদ্ধি, পেমেন্ট পদ্ধতি সহজ হওয়া এবং পেমেন্ট গেটওয়েগুলো জটিলতামুক্ত হওয়ায় এসব মাধ্যম ব্যবহার করে লোকজন অনলাইন থেকে কোরবানির পশু কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, এরইমধ্যে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যেখানে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। যারা গ্রুপ তৈরি করেছেন তারাই ক্রেতা তারাই বিক্রেতা। গ্রুপের সদস্যরা কোরবানির পশু সংগ্রহ করছেন, আবার তারাই নিজেদের জন্য কিনে নিচ্ছেন। পলক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন কোরবানির পশুময় হয়ে উঠেছে। তিনি আশা করেন, শুধু এখনই নয়, করোনা পরবর্তী সময়েও এই অনলাইন হাটগুলো তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখবে।
কোরবানি পশুর ডিজিটাল হাট
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কোরবানির পশু বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডিজিটাল হাট (www.digitalhaat.net) চালু হয়েছে। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, আইসিটি বিভাগ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থা করেছে। ক্রেতারা চাইলে ডিজিটাল হাট থেকে ন্যায্যমূল্যে কোরবানির পশু কিনে ঢাকার পাঁচটি এলাকা থেকে মাংস প্রক্রিয়া করে নিজ নিজ ঠিকানায় ডেলিভারি নিতে পারবেন। গত ১১ জুলাই এই ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করা হয়। এসময় জানানো হয়, ডিজিটাল হাটের আওতায় গরু বিক্রি ছাড়াও প্রায় ২ হাজার গরু জবাই করে এবং মাংস প্রক্রিয়া করে বাসায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঈদের দিন ৪০০, দ্বিতীয় দিন এক হাজার ও তৃতীয় দিন ৬০০ গরু কোরবানি করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
উদ্বোধনের দিন এই হাট থেকে গরু কেনেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে তিনি গরুটা একটা মানবতাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে দান করেন।
বেঙ্গল মিট (qurbani.bengalmeat.com) এবারও কোরবানির পশুর আয়োজন করেছে। তাদের সাইটে গরুর ছবি, ওজন, উচ্চতা, জাত, কী খায়, ভ্যাকসিন কবে দেওয়া হয়েছে, ডেলিভারি কীভাবে পাওয়া যাবে ইত্যাদি সব তথ্য দেওয়া আছে। আছে দাম পরিশোধের পদ্ধতিও।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আজকেরডিল ডট কম (ajkerdeal.com) গরুর ক্রেতা আর ব্যাপারী ও কৃষকদের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, ‘কোনও পক্ষ থেকেই আমরা পেমেন্ট নিচ্ছি না। আমাদের প্ল্যাটফর্মে ১০০ এর বেশি গরুর খামার তালিকাভুক্ত আছে।’
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান প্রিয়শপ ডট কমের (priyoshop.com) প্রধান নির্বাহী আশিকুল আলম খান বলেন, ‘গরুর ওজন অনুযায়ী কেজিপ্রতি দামের ভিত্তিতে একদামে গরু বিক্রি করা হচ্ছে। কোরবানির পশু কেনামাত্র ক্রেতাকে এসএমএস দিয়ে নিশ্চিত করা হবে। আর যারা বুকিং দিচ্ছেন, ঈদের এক বা দু’দিন আগে তাদের বাসায় গরু পৌঁছে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রিয়শপ ডট কমে ক্রেতারা গরু দেখতে এবং কিনতে পারবেন। এখানে পশুর ছবিসহ দাম, উচ্চতা ও ওজন দেওয়া আছে। প্রবাসীরাও পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে পছন্দের পশু কিনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করলে তাদের দেওয়া নির্ধারিত ঠিকানায় গরু পৌঁছে দেবে প্রিয়শপ।’
তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে ‘ফুল প্রসেস সার্ভিস’ দেবে প্রিয়শপ। কোরবানি সম্পন্ন হলে এসএমএসের মাধ্যমে ক্রেতাকে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং প্রক্রিয়া করে মাংস বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’’
এদিকে মাদল সাতক্ষীরার বিভিন্ন গৃহস্থবাড়ি থেকে কোরবানির গরু সংগ্রহ করে তাদের সাইটে বিক্রি করছে। মাদলের ফেসবুক পেজে দেওয়া রয়েছে গরুর ছবি, দাম, সম্ভাব্য মাংসের পরিমাণ ইত্যাদি। কসাই খরচ ও ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিলে কোরবানি সম্পন্ন করে মাংস প্রক্রিয়া করে কোরবানিদাতার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে মাদল।
কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এসেছে ই-বাজার। ইকমার্সভিত্তিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইভ্যালির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ই-বাজার সম্পর্কে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘‘কোরবানির পশু বিক্রির এখন যেসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে সেগুলোর সঙ্গে ই-বাজারের পার্থক্য রয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে ক্রেতা-বিক্রেতার উভয়ের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের একটি সুযোগ রেখেছি আমরা। পশু অনলাইনে দেখার পর কেনার সিদ্ধান্ত নিলে ক্রেতা চাইলে পশুর মূল্য ই-বাজারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন। এই মূল্য ই-বাজারে ‘হোল্ড’ অবস্থায় থাকবে। বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রেতা পশু বুঝে পেয়ে আমাদের সিস্টেমে জানালেই কেবল আমরা বিক্রেতাকে তার মূল্য পরিশোধ করে দেবো। আবার বিক্রেতা পশু ডেলিভারি করে তার জন্য নিরাপদ এমন অবস্থানে গিয়ে ই-বাজারে তার অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা উঠিয়ে নিতে পারবেন।’’
বিক্রয় ডট কমেও (bikroy.com) পাওয়া যাচ্ছে কোরবানির গরু ও ছাগল। সাইটে গরু ও ছাগলের ছবি, দাম, ওজন, প্রজাতি ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে।
কোরবানির পশুর ভার্চুয়াল হাটের আয়োজন করেছে দেশিগরুবিডি ডট কম (http://deshigorubd.com)
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী টিটো রহমান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমরা সম্পূর্ণ অর্গানিক গরু সংগ্রহ করছি। যারা বুকিং দিচ্ছেন, ঈদের দু’দিন আগে তাদের বাসায় গরু পৌঁছে দেওয়া হবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে দেশিগরুবিডি ডট কমে পশুর দামের ৫০ ভাগ অগ্রিম দিয়ে বুকিং দিলে ডেলিভারি দেওয়ার সময় অবশিষ্ট টাকা দিয়ে গরু বুঝে নিতে পারবেন।’ তিনি দাবি করেন, আমরাই দেশের একমাত্র অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবচেয়ে বেশি দেশি গরু থাকছে, যাতে গ্রাহক তার সাধ আর সাধ্যের মধ্যে কিনতে পারেন।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply