রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
বিডিনিউজ: করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেও সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’ পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যে এ বিষয়ে কথা বলেন তারা।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, “এই দেশে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এক-এগারোতেও শেখ হাসিনা কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তার সেই মনমানসিকতা, চিন্তা সব কিছুকে বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের সবাই মিলে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনপণ লড়াই করেছেন।
“আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। শেখ হাসিনা অনেক ষড়যন্ত্র ভেদ করে ক্ষমতায় আছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আছেন তিনি।”
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “এই দেশ যখনই কোনো জাতীয় সংকটে পড়ে তখনই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ আমরা পাচ্ছি। বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। দেশ-জাতি ও বিশ্ববাসী যখন করোনায় আক্রান্ত, বাংলাদেশও যেহেতু করোনা আক্রান্ত, তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনামুক্ত হওয়ার জন্য জীবন- জীবিকার লড়াইয়ে যখন বাঙালি জাতি প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই মুহূর্তে আমরা বাতাসে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই।”
এই ‘ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ করে দিয়ে এগিয়ে যেতে দলীয় নেতাকর্মীদের শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে নানক বলেন, “আজকের শপথ হোক সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অব্যাহত অগ্রযাত্রা আমরা রাখবই রাখব।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রকৃতপক্ষে সেদিন শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল। গণতন্ত্রকে বন্দি করার হীন উদ্দেশ্যে প্রকৃতপক্ষে সেদিন শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
“তিনি কোনো আপস জানেন না। সেই কারণেই তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছেন।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “সেদিন যারা ষড়যন্ত্র করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার পটভূমি রচনা করেছিল, সেই ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা আজকেও, জনগণ যখন এই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় আছে, তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনও পর্যন্ত সাত কোটির বেশি মানুষকে সহায়তার আওতায় এনেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন।
“ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরা জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। তারা হারিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা দেশে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয় তখনই তারা ছোবল দেওয়ার অপচেষ্টা দেখায়। বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে কীভাবে গণতন্ত্রকে আবারও নস্যাৎ করা যায়, সেই চেষ্টা তারা এখনও অব্যাহত রেখেছে।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “এখনও আমরা দেখছি, আমরা বুঝতে পারছি যখনই বাংলাদেশের মানুষ সংকটে পড়ে তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং দেশকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর তার পাশাপাশি একটি কুচক্রী মহল যখনই এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় তখনই তারা ষড়যন্ত্র করে। তখনই তারা নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়।
“যখন আমরা দেখি এ দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য সমস্ত শক্তি মেধা দিয়ে প্রণোদনা দিয়ে দেশের মানুষকে জাগিয়ে তোলার আশায় আলোকিত করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করছেন, তখন ষড়যন্ত্রকারীরা নীলনকশা করে এই দুরাবস্থার ভিতরেও। তারা রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে।”
সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আজকে আমরা দেখি রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ সেখানে কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ের মিডিয়া মুঘল থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ের লোকজনের সাথে ওই কুচক্রী মহল নানাভাবে সম্পৃক্ত। তাদের বিষয়টি কিন্তু আলোচিত হয় না, সমালোচিত হয় না। তাদের বিষয়টি দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয় না।
“শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং গণতান্ত্রিক শক্তির পুজারি যারা তাদেরকে চরিত্র হনন করার জন্য, তাদেরকে বিকৃত করার জন্য, খাটো করার জন্য রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতিকে খাটো করে বিতর্কিত করে আবারও সেই বিরাজনীতিকরণের অশুভ শক্তি বিএনপি-জামায়াতসহ আরও অনেক অপশক্তি নানাভাবে সক্রিয় হয়েছে।”
শুদ্ধি অভিযান তৃণমূলেও: কাদের
স্বাস্থ্যখাতে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে তৃণমূলে ছড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “অভিযান চলবে অনিয়মের আবর্তে থাকা অন্যান্য খাতেও। কেউ জবাবদিহির উর্ধ্বে নয়,দলীয় পরিচয় দিয়ে অনিয়ম ঢাকা যাবে না। স্বাস্থ্যখাতে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে তৃণমূলে ছড়িয়ে যাবে।
“শেখ হাসিনা জনগণের মনের ভাষা বোঝেন, তার কাছে কোনো অপরাধীর ছাড় নেই।”
যার যার বিবেকের কাছে নিজেকে পরিশুদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, “অসহায় মানুষের হক নষ্ট না করে তাদের পাশে থাকতে হবে। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আর শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২০০৭ সালের এদিনে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বরকে অবরুদ্ধ করে দীর্ঘ ১১ মাস। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতিকূলতার স্রোত মাড়ানো আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালের ১০ই জুন কারামুক্ত হন বাঙালির আশার বাতিঘর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রুপকার শেখ হাসিনা।”
তিনি বলেন, “করোনার এ সংকটের আঁধার মাড়িয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে বীরজাতি হিসেবে বঙ্গালি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে আবারও গতি সঞ্চার হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।“
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply