শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইনানী সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিরাপদ পর্যটনের জন্য ‘সমুদ্র সন্ধ্যা’ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে জি থ্রি রাইফেল সহ আরসা কমান্ডার আটক টেকনাফের পাহাড়ে জেল ফেরত যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার টেকনাফে ৭ লাখ টাকা মালামাল নিলামে সর্বোচ্চ ডাককারি স্থল বন্দরের বিশিষ্ট আমদানি ও রপ্তানি কারক সিআইপি ওমর ফারুক টেকনাফের নিকটবর্তী মিয়ানমারের ‘লালদিয়া’ নিয়ন্ত্রণে তীব্র সংঘাত : গুলি আসছে স্থলবন্দর ও আশে-পাশের এলাকায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রামুতে বড় ভাই হত্যা মামলায় ছোট্ট ভাই গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ এক রোহিঙ্গা আটক সৈকতে নারী হেনস্তাকারি ফারুকুলের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

প্লাজমা থেরাপি: অ্যান্টিবডির মাত্রা ও সংক্রমণের পর্যায় যেখানে গুরুত্বপূর্ণ

বিডিনিউজ: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বাইরে প্লাজমা থেরাপি দিতে নিরুৎসাহিত করা হলেও স্বজনদের আগ্রহে বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অনেককে এ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তাদের একটি অংশকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এ পদ্ধতির কার্যকারিতা এখনও পরীক্ষাধীন। তাছাড়া সংক্রমণের শুরুর পর্যায়ে রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত ঘনত্বের অ্যান্টিবডিসমৃদ্ধ প্লাজমা দিতে না পারলে এ চিকিৎসায় সাফল্যের আশা কম।

অভূতপূর্ব এই বৈশ্বিক মহামারীতে লাখ লাখ রোগী সামলাতে হিমশিম খাওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উন্নত দেশ আক্রান্তদের চিকিৎসায় সেরে ওঠা ব্যক্তিদের রক্তের প্লাজমা (কনভালেসেন্ট প্লাজমা) প্রয়োগ করছে।

বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করার সম্ভাব্যতা দেখতে এপ্রিলের শুরুতে আগ্রহের কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা. এম এ খান।

এরপর ১৯ এপ্রিল তাকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই কমিটির অধীনে প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।

এই কমিটি নির্ধারিত প্রোটোকল মেনে পরীক্ষামূলকভাবে ৯০ জন রোগীর শরীরে প্লাজমা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগে এর ফলাফল তারা প্রকাশ করতে চান না।

তবে প্লাজমা কোন পর্যায়ে প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতাল আলাদা একটি গবেষণা চালাচ্ছে।

এই দলের সদস্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের গবেষণাকাজের বাইরেও এ পর্যন্ত ১৪৪ জনের ওপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের তথ্য তারা পেয়েছেন। প্লাজমা দেওয়ার পরও তাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্লাজমায় অ্যান্টিবডির ঘনত্ব না জেনে সঠিক সময়ে ও সঠিক রোগীর শরীরে তা প্রয়োগ না করায় অনেক ক্ষেত্রে এই থেরাপির সুফল মিলছে না বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।  তাছাড়া সবার যে এটা কাজে লাগবে, সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

“শতভাগ নিশ্চিত নয় বলেই বিষয়টা নিয়ে প্রায় একশো বছর ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এটা কখনোই ফার্স্ট লাইন ট্রিটমেন্ট হিসেবে ডিক্লেয়ার করা হয়নি। এটা সবাইকেই নিরাপদ করতে পারবে না।

রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা করতে প্রয়োজন হয় অ্যাফেরেসিস মেশিন। ছবি: রয়টার্স “যদি আমরা উপযুক্ত সময়ে প্লাজমা প্রয়োগ করতে পারি তাহলে ওই রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু এমন নয় যে তিনি একশভাগ নিরাপদ হয়ে যাবেন। এমনও হতে পারে তিনি অন্য কোনো সমস্যায় ভুগতে পারেন।”

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে এ পর্যন্ত ৩১৩ জনকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৫ জন পুলিশ সদস্য বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের পরিচালক ড. হাসান উল হায়দার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, প্লাজমা দেওয়া ৪৫ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন, তাদের অবস্থা খুব সঙ্কটজনক ছিল। তাদের ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল, তারা ভেন্টিলেশনে ছিলেন এবং প্রচুর অক্সিজেনের দরকার হয়েছিল।

“প্লাজমা থেরাপি আগেভাগে দিলে আউটপুট ভালো পাওয়া যায় বলে আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছি। আর যারা বেঁচে যাচ্ছেন, সেটা যে প্লাজমার কারণে বিষয়টি এমন নাও হতে পারে। কারণ প্লাজমার সঙ্গে আমরা অন্যান্য ওষুধও দিচ্ছি। এটা এখনও গবেষণালব্ধ নয়, এগুলো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।”

গত ১৫ জুন রাতে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান। সিএমএইচে ভর্তি কামরানকে ২০০ মিলিলিটার প্লাজমা দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ডা. শিপলু কামরান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শিপলু বলেন, “আব্বার ফুসফুসের প্রায় ৭০ শতাংশ আক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে প্লাজমা থেরাপির ফল আসলে বুঝতে পারি নাই।”

১৪ জুন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানের স্ত্রী। তাকেও প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছিল।

৩১ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাকিল উদ্দিন আহমেদ মারা যান। রাজধানীর গ্রিনলাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যাপক শাকিল উদ্দিন আহমেদকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছিল।

প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করলেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠবেন- বিষয়টি এমন নয় বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক এম এ খান।

বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ নিয়ে গঠিত কমিটির প্রধান ডা. খান বলেন, “আমাদের দেশে বেশিরভাগ রোগীকে প্লাজমা দিচ্ছে ভেন্টিলেশনে যাওয়ার পর, আইসিইউতে যাওয়ার পর। তখন আসলে প্লাজমার কোনো গুরুত্ব বা সুবিধা নাই। প্লাজমা দিতে হয় রোগটি ধরা পড়ার শুরুতে, যেটাকে ভাইরাল ফেইজ বলি। প্লাজমা যেহেতু ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদি সময়মত দেওয়া যায়।”

ডা. খান বলেন, থেরাপির আগে প্লাজমায় অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরিমাপ করা জরুরি হলেও বাংলাদেশে তা করা হয় না। প্লাজমায় সঠিক ঘনত্বের অ্যান্টিবডি না থাকলে তেমন কাজ হবে না।

রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশকে প্লাজমা বা রক্তরস বলে। তিন ধরনের কণিকা ছাড়া রক্তের বাকি অংশই রক্তরস। মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরের রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশই রক্তরস।

অ্যান্টিবডি, যা ইমিউনোগ্লোবলিন নামে পরিচিত, এমন এক ধরনের সুরক্ষা প্রোটিন, যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকে তৈরি হয়। প্লাজমায় এই অ্যান্টিবডির ঘনত্ব কী মাত্রায় আছে তা আইজিজি (Immunoglobulin G-IgG) পরীক্ষায় পরিমাপ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) বলছে, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা রোগীর প্লাজমা (কনভালেসেন্ট প্লাজমা) আক্রান্তের শরীরের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির ঘনত্ব বা আইজিজির মাত্রা ১:৩২০ এর বেশি হতে হবে।

ডা. আশরাফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে মানুষের শরীরে আইজিজি ১:৩২০ পর্যন্ত পাওয়া খুবই কঠিন। এ কারণে আইজিজি ১:১৬০ মাত্রায় পেলেই আমরা রোগীদের প্রয়োগ করছি।”

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888