সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন
রাত বাড়ছে, রাতের পায়ে নেমে আসে মহার্ঘ ঘুম
চোখের তৃপ্তিজুড়ে বেহিসাবী ঘোর, অন্ধ চিৎকার;
দয়াহীন দীর্ঘশ্বাসের খিলানে উৎকীর্ণ থাকে অসুখ
পাশ-দেয়ালে দ্বৈবাৎ সেঁটে আছে ভয়ানক বিকার।
জানালার কাঁচে আতিপাতি করে আঙুলের অহং—
কিছু সুখ শিমুল তুলোর বালিশে নিত্য জমা থাকে;
কিছু সুখ অভিশপ্ত-মশারির হাহাকারে মরে যায়
এক ছিনাল তবুও গতায়ত দিনের করুণা মাখে।
রাত শেষ হয় না, ছায়ার ভেতরে খুন হয় আগুন
কিছু ভুল এনে দেয়—পাঁজরের পরিতৃপ্তি হাসি,
কিছু সত্য মেলে দেয়—বিব্রত বুকে ভয়ের ডানা
অথচ ঘুম আসে, ঘুমের আড়ালে জমে কান্নারাশি।
এই তো, রাতের নিশ্বাসে অন্তঃশীল আয়ুর সংসার
এই তো, হননপিয়াসী ঘুমের গ্লানিতে জগৎ অসার।
চলে যেতে চাই, কে আমাকে আটকে রাখে?
প্রান্তরের ঢেউ হয়ে নিঃসীম মেঘের নীলিমায়;
আমি তো বেঁধেছি আপন সত্তায় সহস্র জীবন,
পায়ের প্রতীতি নিয়ে পালাব স্বপ্নের সীমানায়।
ভুলে যাব মায়াজাল—সুপ্ত নীরব নিদ্রাকুসুম
ভুলে যাব জলশয্যা—ঘুমের ভেতর গুপ্তধ্বনি;
দেখব না স্বর্ণশোভা, প্রভাত পালকের গুঞ্জরণ
বিস্ময়ের বাঁকে বিহ্বল থাকুক যত সুপ্তখনি।
আমারও আছে কষ্টকীর্তন, মৌন ভেজাচোখ
আমারও আছে অজ্ঞাত আঁধারের গোপন শিস;
পুড়েছি প্রার্থনায়, ভেঙেছি পরিমিত সুন্দরে
প্রাত্যহিক প্রশ্রয়ে প্রতিক্ষণ সয়ে গেছি নীলবিষ।
চলে যাব দূর দেশে—বাসনাপীড়িত আলয়ে
থাকবো না অন্ধকারে, পারস্পর্যহীন প্রণয়ে।
কে ভীষণ একা, কার কূলে বাঁধা ফুলের তরী
ঊরুর উত্তাপে কাঁপে কার চোখ, সতত শরীর;
যুবকেরা ঘামে দেহের দ্বৈরথে, যুবতি পালকে,
আকাঙ্ক্ষার অসীমে বিঁধে কামনার কোমল তির!
অনিঃশ্বেষ আঁধারে জাগে সন্নিহিত চুমুর চর
সমগ্র শয়নজুড়ে মেধাবী মোষের বুনোমর্মর;
জলসায় সঘন রাত্রি, দেহের ভূ-ভাগে নামে
আদিম প্রশান্তি; পাঁজরে বাজে কামার্ত স্বর।
কার শাপে দেখা—কার বুকে প্রাণাধিক টান
সমুদ্রের ক্ষুধা নিয়ে কে আছে কার কাছাকাছি;
চৈত্রের খরায় পুড়ে পুড়ে গড়েছি অগ্নি খামার
সংগোপনের ছায়ায় সুপ্ত মধু বড় ভালোবাসি।
সুখে-সংগমে, সংবর্ত সংরাগে সন্তানের লোভ
নিপুণ নিড়ানি তলে আঁকি আনত সংক্ষোভ।
অনন্ত তোমার সঙ্গে রয়ে যাব যমজ শপথে
আয়োজনে পূর্ণ করব অজস্র আনন্দের রাত;
যে কথা গুঞ্জরিত, মর্মের অধিক মখমল,
সেখানে সন্তর্পণে রেখে যাব হৃদয়ের বরাত।
সমর্পণের সবটুকু নিয়ে যে-তুমি সদা আকুল
নিঃশব্দ রাতে শুনিয়ে যাও কোনো শীর্ষবৃন্ত সুখ;
ঢেউয়ের দৌরাত্ম্যে আমিই অবাক জলরাশি—
সুরের স্বরগ্রামে পেতে দিই সান্ধ্য-গীতল বুক।
তোমার সুন্দরে এঁকে যাব শিল্পশিহরিত ঘুম
সামান্য সংঘাতে মিলে যদি অসামান্য ভোর;
খননের প্রস্তুতিযোগে মেলে দিয়ে অপার ডানা
চেনা সাম্পানে পাড়ি দেব অচেনা সমুদ্দুর।
ভুল ইচ্ছেয় জন্মায় আমরা, ইচ্ছেসুখে পুড়ি
প্রণয় পরাণে বাঁধা বৃন্দআকাশে পরস্পর উড়ি।
কথারা ভেসে আসছে প্রাচীন পৃথিবী থেকে
কথারা বয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিশ্রুত শব্দের সত্য;
অতপর মিশে যাচ্ছে কত মানুষের জনপদে
আর পাহাড়,নদী-নিসর্গ, স্বর্গ-পাতাল-মর্ত্য।
উজ্জ্বল আলোকরশ্মি বেয়ে কথারা নামছে
বিচ্ছুরণের ভঙ্গিতে ছড়িয়ে পড়ছে দিকবিদিক;
কোনো কোনো কথারা শ্বেত পাথরে উৎকীর্ণ
অবাক শুয়ে আছে আজানুলম্বিত পারস্পরিক।
কথারা আসছে আমূল নৈঃশব্দ্য ছেদ করে
মহাশূন্যের গহ্বর থেকে অলৌকিক ইশারায়;
প্রান্তরের রেখা ছুঁয়ে অখণ্ড কথারা হাসছে
আর সহসা বিকশিত হচ্ছে বিপুল প্রজ্ঞায়।
কথারা আসছে, কথারা আসবে গূঢ়চিরন্তন
জ্যোতির জগতে থামবে না কথার গুঞ্জরণ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply