শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
করোনাকালীন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পাঠগ্রহণ কার্যক্রমে বিরাজ করছে স্থবিরতা। আর এ সংকট কাটাতে সরকারের নেয়া ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার মত মহতি উদ্যোগও নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও সমস্যার কারণে অনেকটা আলোরমুখ দেখছে। ফলে সরকারের এ মহতি কিছু ক্ষেত্রে ফলপ্রুস হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অকার্যকরে পরিণত হয়েছে। এটি নিয়ে ভাবনার এবং কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ অতীব জরুরী।
চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ইতিমধ্যে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ছুটির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে, এই সম্ভাবনাই প্রবল।
এমন বাস্তবতায় বন্ধ রয়েছে একাদশ শ্রেনির ভর্তি কার্যক্রম এবং স্থগিত করা হয়েছে চলতি সনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রাথমিকের সাময়িক ও মাধ্যমিকের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষাও স্থগিত রাখা হয়েছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষ ও সেমিস্টারের পরীক্ষাও কার্যত বন্ধ রয়েছে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারনে। শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মার্চ থেকে সরকার এটুআই প্রকল্পের সহযোগিতায় নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
শিক্ষকদের রেকর্ড করা ক্লাস সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার শুরু করে। পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক স্তর, মাদ্রাসা ও সর্বশেষ কারিগরি শিক্ষার ক্লাসও সম্প্রচারিত হচ্ছে।
কিন্তু প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সিলেবাসের ভিন্নতা, ক্লাসের ধারাবাহিকতার অভাব, বিষয় ভিত্তিক পর্যাপ্ত ক্লাস না নেয়া, ঘোষিত রুটিনে ক্লাস না হওয়া, সংসদ টিভি চ্যানেলটি দেখতে না পাওয়া ইত্যাদি কারনে শুরু থেকে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনীহা পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। ইউটিউব, ফেসবুকে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা মূলক চ্যানেল গুলোও করোনার এই সময়ে অ্যাপসভিত্তিক অনলাইন প্লাটফর্মে ক্লাস নিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় বেশ কিছু প্রশ্ন এসেছে সচেতন মহলে।
প্রথমত গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই অনলাইন ক্লাসের। গ্রাম ও শহর ভেদে নেটের গতি
সমান না হওয়া, স্মার্ট ডিভাইস না থাকা, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের তথ্য প্রযুক্তি সম্বন্ধে অজ্ঞতা ইত্যাদি কারণেও গ্রামীণ জনপদ, উপকূলীয় এলাকা, পাহাড়ি দূর্গম এলাকা ও হাওড় অঞ্চলগুলোর শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসের সুফল হতে বঞ্চিত হচ্ছে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। সুবিধা বিবেচনায় এখানে একটা বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
দ্বিতীয়তঃ মোবাইল অপারেটরগুলোর ডাটা কানেকশনে যে ব্যয় হয় তা বহনে সক্ষমতার একটা বিষয় রয়েছে। আর সদ্য ঘোষিত বাজেটে এই ব্যয় আরও বেড়েছে। এ নিয়ে গরীব ও নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পড়েছে বিপাকে।
তাছাড়া অনলাইনে ক্লাস নিলে বেশি সমস্যায় পড়বে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে তো আর ল্যাবের ক্লাস করা সম্ভব না। তারপরও আশার কথা হলো বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সুবিধা ও করোনার ঝুঁকি বিবেচনায় আপাতদৃষ্টিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের বিকল্প নেই।
ফলে সরকারের নেয়া এ মহতি উদ্যোগ যাতে ভেস্তে না যায় উদ্ভুদ পরিস্থিতি করণীয় নির্ধারণ সমস্যা, সংকট আর সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া আজ সময়েরই দাবি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply