বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
তৌহিদুল কাদের: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কক্সবাজার শহরের অন্তত ১০ সহস্রাধিক ‘টিউশন টিচার বা হাউজ টিউটর’ চরম সংকটে দিননিপাত করছে; বলা যায়, খন্ডকালীন এ পেশার সঙ্গে জড়িত এসব মানুষের জীবনযাত্রা কাটছে এখন মানবেতরভাবে।
চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাব পড়েছে টিউশন পেশায়ও। গত মধ্য মার্চ থেকে স্কুল-কলেজসহ প্রাতিষ্ঠানিক সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে বন্ধ ঘোষণার করা হলে প্রভাব পড়ে টিউশন পেশায়ও। এতে অভিভাবকদের অপারগতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় প্রাইভেট টিউশন তথা হাউজ টিউশনও। এ নিয়ে কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক যেসব হাউস টিউটররা বাসায় গিয়ে পড়াতো তাদের বেশির ভাগেরই টিউশনি মোটামুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
অথচ এ পেশার জড়িতদের অনেকে টিউশনি করে নিজেদের পড়ালেখার খরচ নিজেরাই নির্বাহ করতো। অনেকে আবার নিজের খরচ মিটিয়ে পরিবারের আর্থিক সংস্থানেও সহায়তা করতো। এদের মধ্যে কারো কারো কাছে এ পেশা খন্ডকালীন নয়, পূর্ণকালীন চাকরির মতই ছিল; যারা সরকারি বা বেসরকারি কোন ধরণের চাকুরিই করতো না।
মূলত করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় অভিভাবকগণ অনেকটা বাধ্য হয়ে হাউস টিউটরদের কাছে নিজের ছেলেমেয়েকে পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে বিপাকে পড়েন টিউশন টিচাররা। তারা অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও অনেকটা বাধ্য হন টিউশন বন্ধ রাখতে।
নানা সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় টিউশনি পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে অন্তত ১০ সহস্রাধিক মানুষ। এদের অধিকাংশই কলেজ-মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী হলেও কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে এ পেশা ছিল জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম। সবচেয়ে বেশী বিপাকে আছেন এ পেশার এসব মানুষই।
টিউশন মাস্টার, টিউশন টিচার বা হালের হাউস টিউটর যে নামে আখ্যায়িত করা হোক না কেন নির্দ্বিধায় বলা চলে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের সাময়িক কর্মসংস্থানের যোগান দেয় এই পেশা। আমাদের দেশের নিম্ন/মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বেশির ভাগ সন্তান এই টিউশন পেশায় জড়িত।
ছাত্র জীবনে খন্ডকালীন পেশা হিসেবে এটির জনপ্রিয়তা বিগত কয়েক দশকে আরও বেড়েছে। বিশেষত মফস্বল এলাকাগুলো থেকে উঠে আসা মেধাবী শিক্ষার্থী যারা শহরে থেকে পড়ালেখা করে তাদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য বেছে নিতে হয় এই টিউশন পেশা। অনেকে চাকরির প্রস্তুতির জন্য বেছে নেয় এই পেশা। আবার অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়ে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়ে টিউশন পেশায়।
প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় টিউশন পেশার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের।
তারা জানিয়েছেন, করোনাকালীন অভিভাবকদের অনীহার কারণে অধিকাংশ টিউশন টিচাররা আপাতত বেকার হয়ে পড়েছে। আবার অনেক অভিভাবকদের ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও বাসার ভবন মালিক ও প্রতিবেশীদের আপত্তিতে নিষেধ করে দেয়া হচ্ছে টিউটরদের। উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে টিউশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়ে গেছে এই টিউশন টিচাররা। গ্রামে ভাইরাসের প্রকোপ কম থাকার পাশাপাশি লকডাউনের কড়াকড়ি না থাকায় গ্রামে টিউশন করা গেলেও শহরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় অবস্থানকারি আব্দুল মুবিন নামের এক হাউজ টিউশন টিচার বলেন, লকডাউনের কড়াকড়ি, অভিভাবকদের অনিচ্ছা, ভবন মালিকদের বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা সহ বিভিন্ন কারনে টিউশন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। আবার অনেক অভিভাবকের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারাও টিউটরদের নিষেধ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ খন্ডকালীন এই পেশা হারিয়ে বর্তমানে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বাসা ভাড়া, বাজার খরচ, দৈনন্দিন খরচ ইত্যাদির জন্য টিউশনির বেতনের উপর নির্ভরশীল ছিল।”
এখন টিউশনি বন্ধ থাকায় ধারদেনা করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি মানবেতর দিন কাটছে বলে মন্তব্য করেন এ হাউজ টিউটর।
কলেজ পড়ুয়া সাইফুল ইসলাম নামের এক টিউটর বলেন, পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই যোগাড় করতাম। অন্যদিকে নিজের খরচ মিটিয়ে পরিবারকেও প্রতিমাসে কিছুটা আর্থিকা সহায়তা দিতে হত।
“ গ্রামে থাকা মায়ের ঔষধ খরচ, ছোট ভাইয়ের পড়া লেখার খরচ, বোনের প্রয়োজনীয় আবদার মেটাতাম এই টিউশনির বেতন দিয়ে। কিন্তু টিউশনি বন্ধ থাকায় মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছি। ”
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply