শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন

মৃত তিমিটি কুলে আসার পর মাটিতে পুঁতে দিল প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ১০ ঘন্টা পানিতে ভাসার পর অবশেষে বালিয়াড়িতে এসে আটকা পড়েছে বিশাল আকৃতির মরা তিমিটি। উপকূলে ভেসে আসা ২৫ টন ওজনের তিমিটি দেখার জন্য গভীর রাতেও ভিড় করে উৎসুক জনতার সঙ্গে পর্যটকরাও। এরই মধ্যে মরা তিমির নমুনা সংগ্রহ করেছে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। আর দূর্গন্ধের কারণে তিমিটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

মূলত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দরিয়ানগর পয়েন্টে মঙ্গলবার বেলা ১২টায় হঠাৎ ভেসে উঠে বিশাল আকৃতির একটি তিমি। তবে ভাটার কারণে তিমিটি পানিতে ভেসে চলে যায় হিমছড়ি পয়েন্টে। উপকূল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে পানিতে ভাসে মরা তিমিটি। তিমির গায়ে প্যাঁচানো জাল আর শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন।

জোয়ার আসার পর মরা তিমিটি ১০ ঘন্টার পর মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে ১০ কিলোমিটার দূরে এসে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে আটকা পড়ে। এসময় তিমিটি দেখতে ভিড় লেগে যায় উৎসুক জনতার পাশাপাশি পর্যটকদেরও। দেখার পাশাপাশি তারা তুলেন ছবিও।

তাফিয়া নামের এক পর্যটক বলেন, দেশের বাইরে ছিলাম। দুই বছর পর দেশে ফিরেছি। বাবার সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছি। হোটেলে রাতের খাবার শেষে বাবার সঙ্গে সৈকতে হাটতে গিয়ে উৎসুক জনতা ভিড় দেখি। তখন কাছে গিয়ে দেশি বিশাল আকৃতির একটি তিমি। যা থেকে প্রচন্ড দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে, তিমির গায়ে জাল প্যাচানো ছিল। মনে হয়েছে, জালে আটকে তিমিটি মারা গেছে। আশ্চর্য হলো, এই সামুদ্রিক প্রাণী যেটি উপকার করে থাকে, তাকে এভাবে মেরে ফেলাটা উচিত হয়নি। খুবই খারাপ লাগছে।

লাবু নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তিমি ভেসে উঠেছে শুনে অনেক দূর থেকে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে চলে এলাম দুই কন্যাকে। সাধারণত বই কিংবা টেলিভিশনে তিমি দেখেছি, কিন্তু একই প্রথম আমি আর আমার মেয়েরা স্বচক্ষে তিমি দেখলো। তিমিটি অনেক বড় ছিল, যা দেখতে বিমানের মতো লাগছিল।

মঙ্গলবার বিকেলে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ড্রোনের মাধ্যমে ছবি ও ফুটেজ সংগ্রহ করলেও রাতে হাজির হয় সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে। তারপর সংগ্রহ করে নমুনা। তারা জানিয়েছে; ২৫ টন ওজনের তিমিটি জালে আটকা পড়ে মারা গেছে।

সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, তিমিটির লেজের অংশ পঁচে গেছে। আর পরিমাপ করার পর দেখা গেছে ৪০ ফুটের বেশি এই তিমিটি। তিমিটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, জেলেদের জালে আটকা পড়ে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মোহাম্মদ বেলাল হায়দর বলেন, ভেসে আসা মৃত তিমি ব্রাইডস জাতের। এর বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপেট্রা ইডিনি। ইতোপূর্বে ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল দুইটি তিমি হিমছড়ির ঠিক একই পয়েন্টে ভেসে এসেছিল। যে দুটি তিমি গত বছর ভেসে এসেছিল সেগুলোও বেলিনিওপেট্রা ইডিনি প্রজাতির তিমি ছিল বলে আমরা ডি এন এ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিলাম।

এখন ভেসে আসা তিমিটির শরীরে পঁচন ধরে দু:গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে ধারনা করা যাচ্ছে, যে বেশ কিছুদিন আগেই গভীর সমুদ্রে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে। তিমিটির শরীরে জালের বিশাল রশি পেঁচিয়ে আছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছ ধরার বিশাল জালে আটকা পড়ে এবং গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে কিংবা অন্যকোন কারনে তিমিটি মারা গেছে। তিমি সাধারণত মৎস্য শিকারীদের জালে আটকা পড়ে, জাহাজের সাথে সংঘর্ষে কিংবা সমুদ্র শব্দ দূষণের কারনে পরষ্পর যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে উপকূলের অগভীর জলে এসে আটকা পড়ে মারা যায়। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি খুব সংবেদনশীল, কখনো কখনো সংগীর মৃত্যু হলেও এদেরকে সৈকতের অগভীর জলে আত্মহুতি দিতেও দেখা যায়।এখনো উপকূলের অগভীর জলে ভাসছে বিধায় মৃত তিমিটির পর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ করা ও নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এ প্রজাতির তিমির দাঁত নাই। মুখের মধ্যে চিরুনির মতো একটি অংশ দিয়ে খাবার প্রক্রিয়াজাত করে।

সাঈদ মোহাম্মদ বেলাল হায়দর আরও বলেন, তিমির বিচরণের জন্য গভীর ও ঈষৎউষ্ণ জলের প্রয়োজন। সে কারনে ভারত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে তিমির বিচরনের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে মনে করা হয়।এরা কখনো কখনো একাকী, কখনো যুগলবন্দী কিংবা দল বদ্ধ হয়ে বাস করে। বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্তর প্রান্ত ও এর আশপাশের এলাকা, কক্সবাজারের পশ্চিমে এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণের গভীর সমুদ্রেও ব্রাইডস প্রজাতির তিমির দেখা পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এ তিমির প্রজননক্ষম একটি বড় কলোনি বঙ্গোপসাগরের গভীরে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে বসবাস করছে।এ বিষয়ে আরো নিবিড় গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরওয়ার শামীম বলেন, বালিয়াড়িতে আটকে পড়া তিমিটি বিশাল আকৃতির হওয়ায় কোনোভাবে অন্য কোথাও সরানো যায়নি। আর মৃত তিমি থেকে প্রচন্ড দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ক্রেন এনে বালিয়াড়িতে ১০ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত বিশাল গর্ত করা হয়। তারপর তিমিটিকে মাটি পুঁতে ফেলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888