শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন
জাহাংগীর আলম ছিদ্দিকী
আমাদের দেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নেহায়েত কম নয়। চোখে দেখতে না পারার কারণে তাদের লেখাপড়া করা বেশ কষ্টসাধ্য। বিশ্বে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া করার একটি ভালো মাধ্যম হচ্ছে ব্রেইল পদ্ধতি।
আমাদের দেশেও বেশ কয়েক বছর ধরে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়েলেখা করে আসছেন অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু ব্রেইলের উপকরণ অনেক ব্যয়বহুল ও সহজলভ্য না হওয়ার ফলে অনেকে ইচ্ছে থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারেন না।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যয়বহুল বই প্রতিবন্ধী স্কুলে বিনামূল্যে বিতরণ করছেন। যা এ সরকারের বিরল দৃষ্টান্ত।
একজন প্রতিবন্ধীকে বিভিন্ন বর্ণমালা শেখার জন্য শিক্ষককে আলাদা করে সময় দিতে হয়। প্রতিবন্ধীদের বিনোদনের তেমন কোন মাধ্যম নেই। সাধারণত প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল এর উপকরণ ও ব্রেইলের বই অনেক ব্যয় বহুল।
সার্বজনীন জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এবং বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার বিষয়ক অংশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিংগ, বৈষম্য ব্যতিরেখে সবার জন্য শিক্ষাকে অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
উক্ত অধিকার বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক ভাবে এবং রাস্ট্রীয় ভাবে সুনির্দিষ্ট কর্মসুচিও গ্রহণ করে বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।জন্মগত ভাবে অথবা জন্মের পর বিভিন্ন কারণে অনেক শিশু শারীরিক, মানষিক, শ্রবণ বা বাক্ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীত্ব অর্জন করে। যার দরুন পরিবারে, সমাজে, রাস্তাঘাটে, স্কুল বা সর্বস্তরে তাকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা বা বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়।
এতে করে প্রতিবন্ধী মানসিক ভাবে শিক্ষা গ্রহণে অনুৎসাহি হয়ে উঠে।প্রতিবন্ধী শিশুরা আমাদের পরিবার ও সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ। এদের মূল ধারায় নিয়ে অাসার সবচেয়ে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারেন একজন নিবেদিত প্রাণ প্রাথমিক শিক্ষক। কেন না স্থানীয় ভাবে আমাদের সমাজে এখনও প্রাথমিক শিক্ষকদের সম্মানিত ও পথ প্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
একজন শিক্ষক হিসেবে নিজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচম্যান্ট এলাকায় কোন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করা। এছাড়া স্থানীয় ভাবে কর্মরত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সমাজ সেবার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। অতপর তাদের বের করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হবে। তারাও অন্যান্য শিশুর মতো।
প্রতিবন্ধীতার জন্য তাদের শিক্ষা যেন ব্যাহত না হয় সুদৃষ্টি রাখতে হবে।বিউটি দে। আমার হাতে উঠা অাসা কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুল ইউনিয়নের একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। বায়তুশ শরফ হাসপাতালের সিপিঅার প্রকল্পের সাইটসেভার্সের সহযোগিতায় সে এসএসসি পাশ করেছে সে। মেধাবি এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন।# বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা :দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুল। বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি প্রতিবন্ধীদের জন্য মাত্র।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়বেন। আধুনিক ও উন্নত শিক্ষায় তারা গড়ে উঠবেন।বিশেষ এই স্কুলের শিক্ষকরাও বিশেষ শিক্ষক নিশ্চয়। তারা সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হবেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন উন্নত দেশে এর উপর প্রশিক্ষণে যাবেন। কারণ শিক্ষাসহ যে কোন কাজে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান সহজতর হবে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ, ব্রেইল বই, বড় ছাপার বই, স্পর্শ ও স্পষ্ট করে দেখার জন্য যা দরকার সবই থাকতে হবে। সর্বোপরি তাদের গড়ে তোলার পাশাপাশি মানষিক বিকাশ ঘটাতে হবে। ফলে সকল সুযোগ সুবিধা হাতের নাগালে রাখতে হবে।# সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম :সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা এবং পরিবারের মায়া-মমতায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
গড়া উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা হবেন তাদের শিক্ষা অভিভাবক। শিক্ষকদের সঠিক শিক্ষায় সমন্বিত প্রয়াসে তাদের অাগামির লক্ষ্য ও চিন্তাধারা তৈরি হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে তাদের পিছিয়ে রাখলে বা অবহেলা করলে হবে না। এরাও শিক্ষা গ্রহণ করে নানা ভাবে আলোকিত মানুষ হতে পারে। পরিবার, সমাজ ও দেশে আলো ছড়াতে পারে।তারও উদাহরণ আছে আমাদের দেশে অনেক।
প্রতিবন্ধী হয়ে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ায় অবদান রাখছে।# একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা :দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের উপযোগি শিক্ষা পদ্ধতি বিশেষ একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থায় সাফল্য আনবে। এই শিক্ষা পদ্ধতি প্রতিবন্ধী ছাড়াও সব শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এ শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য শিক্ষকদের সচেতনতা ও দৃষ্টিভংগি পরিবর্তন প্রয়োজন। শিশুদের শিক্ষায় সবার শিশুবান্ধব হতে হবে।
শিক্ষকদেরকে বিশেষ শিক্ষা ও দক্ষতার উপর যেমন ব্রেইল, ইশারার ভাষায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হবে।# ‘লুই ব্রেইল’ ইতিহাসে অমর এক ব্যক্তিত্ব :লুই ব্রেইল জগত সাড়া জাগানো ব্যক্তিত্ব। একটি নাম, একটি ইতিহাস। যার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। তিনি তাঁর কর্মের ভেতর দিয়ে সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের বাস্তব জীবনে চলার পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের মাঝে মরেও অমর হয়ে রইবেন।
লুই ব্রেইলের আবিষ্কৃত ব্রেইল পদ্ধতি প্রমাণ করে মানুষের অসাধ্য কিছু নেই। মনে রাখতে হবে লুই এর কর্ম জীবন অমূল্য এক সম্পদ।# আমাদের অহংকার সায়মা ওয়াজেদ পুতুল :পরিশেষে বলি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আমাদের গর্ব, অহংকার। তিনি দেশে-বিদেশে অটিজম রোধ, স্বাস্থ্য সেবা ও সচেতনতায় ব্যাপক কাজ করে চলেছেন। তার আদর্শ আমাদের অনুসরণ করতে হবে। অটিজম সচেতনতায় যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে দৃষ্টি বা যে কোন প্রতিবন্ধীরাও মানুষ, তাই মানবের কল্যাণ সাধনই হোক আমাদের শিক্ষা।
লেখক : জাহাংগীর আলম ছিদ্দিকী # সিনিয়র সহকারি শিক্ষকদক্ষিণ খুরুস্কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়# সংযুক্তিপিটিআই পরীক্ষণ বিদ্যালয়, কক্সবাজার।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply