শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

মানব পাচার চক্রের ৬ সদস্য আটক : অস্ত্রের সাথে মিলেছে স্যাটেলাইট ফোন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নাজিরারটেক এলাকা থেকে স্যাটেলাইট ফোন, অস্ত্র ও গুলিসহ ‘সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারি চক্রের’ ছয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে নিন্ম-আয়ের বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের উচ্চ বেতনে চাকুরি আর বিভিন্ন পেশায় নিয়েজিত করার প্রলোভনে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের সাথে জড়িত। যাত্রাপথে পাচারের শিকার ভূক্তভোগী নারীদের জোরপূর্বক ধর্ষণেরও অভিযোগ রয়েছে এসব পাচারকারিদের বিরুদ্ধে। আটকরা পাচারকাজ শেষে ফেরত আসার পথে র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়েছে।

শনিবার বিকাল সাড়ে ৪ টায় র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত অধিনায়ক মেজর শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ।

আটকরা হল, মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহী পাড়ার গোলাম কুদ্দুসের ছেলে মো. শাহজাহান (৩৭), কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা পূর্ব-পাড়ার নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. পারভেজ (২৩) এবং একই এলাকার আমির হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল মজিদ (২৭), ফজল করিমের ছেলে আমির মো. ফয়সাল (২৪), আমির হোসেনের ছেলে মো. শাকের (৩০) ও মো. মীর কাশেমের ছেলে মো. রফিক আলম (৩৫)।

ইউসুফ বলেন, শনিবার ভোররাতে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন ট্রলারসহ কতিপয় মানবপাচারকারি চক্রের লোকজন অবস্থান করছে খবরে র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এতে র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্দেহজনক লোকজন ট্রলারসহ গভীর সাগরে পালানোর চেষ্টা চালায়। পরে ধাওয়া দিয়ে র‌্যাব সদস্যরা ট্রলারটি জব্দ করতে সক্ষম হয়।

“ এসময় ট্রলারটি থেকে ৬ জন মানবপাচারকারিকে আটক করা হয়। পরে আটকদের দেহ ও ট্রলারটি তল্লাশী করে পাওয়া যায় দেশিয় তৈরী ৩ টি বন্দুক, ৪ টি গুলি, ২ টি রামদা, ১ টি স্যাটেলাইট ফোন, ১ টি কম্পাস, ১ টি জিপিএস, পাচারের শিকার ভূক্তভোগীদের ফেলে যাওয়া ১৬ টি মোবাইল ফোন, ১০ টি সিমকার্ড, ১ টি হাতঘড়ি ও নগদ ১ হাজার ২০০ টাকা। ”

আটকদের স্বীকারোক্তির বরাতে র‌্যাবের এ কর্মকর্তার ভাষ্য, “ আটকরা সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারি চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সাথে জড়িত। চক্রের সদস্যরা নিন্ম-আয়ের এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় উচ্চ বেতনে চাকুরি ও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত করার প্রলোভনে পাচার করে আসছিল। তারা পাচারের শিকার লোকজনের কাজ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ এবং বাকী আড়াই লাখ টাকা ট্রলারে তোলার পর স্বজনদের কাছ নেওয়ার চুক্তিতে এ কাজ করছিল। এসব টাকা গ্রহণের ক্ষেত্রে পাচারকারি চক্রের সদস্যরা অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পন্থা অবলম্বন করত। ”

শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “ সাগরপথে যাত্রাকালে পাচারকাজে জড়িতরা ভয়ভীতি দেখিয়ে ভূক্তভোগী নারীদের সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং নগদ টাকা হাতিয়ে নিত। পাচার হওয়া নারীদের কাউকে কাউকে পতিতালয়ের দালালদের কাছেও বিক্রি করে দিত। চক্রটির সদস্যরা এ পর্যন্ত ৩৭ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারীকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে বিক্রি করে দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ”

র‌্যাব জানিয়েছে, র‌্যাবের অভিযানে গত ১০ ফেব্রুয়ারী ৭ জন ভূক্তভোগী উদ্ধারসহ এক পাচারকারিকে আটক করে। এছাড়া গত ২৫ মার্চ ৫৮ জন ভূক্তভোগীকে উদ্ধার এবং ২ পাচারকারিকে আটক করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888