শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন

শহরে অটোরিকশা থেকে মাসিক আড়াই কোটি টাকা চাঁদা আদায়কারি এরা কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার শহরে পরিবহন খাতে সক্রিয় ১৫ জনের সংঘবদ্ধ একটি চক্র বৈধ-অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার চালকদের কাছ থেকে কথিত পার্কিং ও টোলের নামে প্রায় আড়াই কোটি টাকা চাঁদা আদায় পূর্বক হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আর প্রতি মাসে আদায় করা এ বিশাল অংকের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত কথিত পরিবহন নেতা ও টাকা আদায়ের সাথে জড়িত লোকজনের মধ্যে। মাঠ পর্যায়ে টাকা আদায়ের জন্য ১৫ জনের সংঘবদ্ধ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে শেখ সেলিম নামের জনৈক এক ব্যক্তি।

দীর্ঘ এক মাস ধরে কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা সিএনজি অটোরিক্সা পাকিং এলাকাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরে প্রতিদিনই চলাচল করছে বৈধ-অবৈধ অন্তত ১০ হাজার সিএনজি অটোরিকশা। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার গাড়ীর লাইসেন্সসহ বৈধ অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে। এছাড়া প্রায় ২ হাজারের বেশী গাড়ীর বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ওইগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। পাশাপাশি লাইসেন্সসহ বৈধ কোন ধরণের কাগজপত্র ছাড়াই চলাচল করছে অন্তত ৩ হাজার অটোরিকশা।

আর এসব অটোরিকশাগুলো শহরের অভ্যন্তরে অন্তত ১০ টির বেশী অনুমোদনহীন জায়গায় পাকিং করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প, বাজারঘাটা, পৌরসভা মার্কেট, হাসপাতাল সড়ক, কোর্ট বিল্ডিং এলাকা, কেন্দ্রিয় ঈদগাহ মাঠ, লালদিঘীর পাড়, কলাতলী মোড়, বাস টার্মিনালের আশপাশের এলাকা ও লিংকরোড। এতে যত্রতত্র পাকিং গড়ে উঠায় শহরের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজটের। এটিকেই পুঁজি করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়াও কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পয়েন্টে এসব সিএনজি অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে পৌরসভার টোকেন দিয়ে আদায় করা হচ্ছে টোল।

অন্যদিকে প্রতিমাসে আদায় করা বিশাল অংকের এই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে, চাঁদা আদায়কারিসহ পুলিশ ও কথিত পরিবহন শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে। আর কথিত পরিবহন নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে বিভাজন থাকলেও চাঁদার ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্রে রয়েছে মতৈক্য। মূলত: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের পরিবহন নেতারা চাঁদার ভা-বাটোয়ারা পেয়ে থাকে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পরিবহন নেতারা চাঁদার অংকটা বেশী পেলেও বিএনপি-জামায়াতের নেতারা কিছুটা কম পেয়ে থাকে। চাঁদা পাওয়ার এই চিত্র সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে যায়। তখন চাঁদার অংকটা বেশী পেয়ে থাকে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার পরিবহন নেতারা।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে শেখ সেলিম নামের এক ব্যক্তি। মাঠে বিভিন্ন পাকিং স্পটে তার সহযোগী হিসেবে চাঁদা আদায়ে জড়িত রয়েছে তোহা, কবির, জয়নাল, আমিন, দিদার, রাসেল, রুবেল, বেলাল, জসিম, কাদের, জলিল, মোহাম্মদ ও হেলালসহ আরো কয়েকজন। তারা আদায়কৃত চাঁদা তুলে দেন শেখ সেলিমের কাছে। আর নির্ধারিত হারে ওই টাকা চুক্তি মোতাবেক শেখ সেলিম তুলে দেন ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে থাকা কথিত পরিবহন নেতাদের হাতে।

জানা গেছে, সংঘবদ্ধ চক্রটির সদস্যরা অটোরিকশার লাইসেন্স থাকা অন্তত ৫ হাজার চালকদের কাছ থেকে প্রতিদিন গাড়ী প্রতি ৫০ টাকা হারে আদায় করে। এতে ওই চক্রটি প্রতিমাসে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে।

আর লাইসেন্স বিহীন অটোরিকশা রয়েছে অন্তত ৩ হাজার। এই গাড়ী প্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা হারে প্রতিমাসে টাকা আদায় করা হয়। এতে ওই গাড়ীগুলো থেকে আদায় করা হয় ৬৬ লাখ টাকা।

এছাড়া লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাগজপত্রের মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ী রয়েছে অন্তত ২ হাজার। এই গাড়ীগুলো থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে প্রতিমাসে আদায় করা হয় ৩০ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি মো. আব্দুর রউফ বলেন, পুলিশের নামে কথিত চাঁদা আদায়ের বিষয়টি সত্য নয়। তাছাড়া সংঘবদ্ধ চক্রের ব্যাপারেও পুলিশ অবহিত নয়। তিনি মাত্র ২০ দিন আগে রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানা পুলিশে যোগদান করেছেন। তাছাড়া কথিত শেখ সেলিম নামের কোন ব্যক্তিকে তিনি চিনেনও না।

তারপরও বিষয়টির ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যতা পেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ নিয়ে কথিত চাঁদা আদায়ের সাথে পুলিশের কেউ জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) এম এম রকীব ঊর রাজা।

রকীব বলেন, পুলিশের নামে সংঘবদ্ধ চক্র কর্তৃক চাঁদা আদায়ের বিষয়টি তারা (পুলিশ) অবহিত নন। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সড়কের উন্নয়নকাজ অব্যাহত থাকায় অবৈধ পার্কিং এবং দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।

তারপরও শহরের অভ্যন্তরে অনুমোদনহীন এবং অবৈধ যানবাহনের প্রবেশ রোধে পুলিশ আরো কঠোরতা অবলম্বন করবে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888