মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র স্বজনরা তৃতীয় কোন দেশে যেতে চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : তৃতীয় কোন দেশে যেতে চায় দূর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ’র পরিবার ও ঘনিষ্ট স্বজনদের ১৮টি পরিবার। এই ব্যাপারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করছেন বলে জানিয়েছেন নিহত মুহিবুল্লাহ’র ভাগ্নে মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস (আরএসপিএইচআর) এর ভাইস চেয়ারম্যান। সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ।

মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ রবিবার দুপুরে জানিয়েছেন নিহত মুহিবুল্লাহ’র স্ত্রী, সন্তান, মা, ভাই সহ স্বজনদের ১৮টি পরিবার কুতুপালং ক্যাম্পে নিরাপদ মনে করছেন না। এসব পরিবারের ৯৪ জন সদস্যকে বর্তমানে ক্যাম্পের বাইরে অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। তবে তারা সেখানে থাকতেও রাজি নয়। সমকালকে তিনি বলেন- ‘আমরা বাংলাদেশের বাইরে তৃতীয় কোন দেশে যেতে চাই। আমাদের এই ইচ্ছার কথা শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়েছি।’

উখিয়ার কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ডব্লিউ ব্লকের বাসিন্দা রশিদুল্লাহ। তিনি নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র আপন ভাগ্নে এবং এই হত্যাকান্ডে একজন প্রত্যক্ষদর্শী।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং-১-ইস্ট লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস (আরএসপিএইচআর) এর চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে মাস্টার মুহিবুল্লাহ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

মাস্টার মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এই হত্যার ঘটনায় মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা জড়িত। হত্যাকান্ডের পরেও ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোনে মুহিবুল্লাহ’র পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ট স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে। এ নিয়ে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এরপর তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

রোববার দুপুরে রশিদুল্লাহ বলেন, তার মামা মুহিবুল্লাহ হত্যার পর থেকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। হুমকিদাতারা বলছে, মুহিবুল্লাহ হত্যা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে তাদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ নিয়ে মুহিবুল্লাহ’র পরিবারের সদস্যরা সহ ঘনিষ্ট স্বজনরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।

তিনি বলেন- ‘শুধু আমাকে নয়, মুহিবুল্লাহ’র স্ত্রী, ভাই হাবিবুল্লাহ, আহমদ উল্লাহ, চাচাত ভাই নুরুল আমিন, মুহিবুল্লাহ’র সহকর্মী মো. নকিম, মাস্টার আবদুর রহিম, মাস্টার জুবাইর, ছৈয়দ আলম সহ আরো কয়েকজনকে মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে মুহিবুল্লাহ’র পরিবারের সদস্যসহ ঘনিষ্ট ১৮টি পরিবারের অন্তত ৯৪ জন সদস্যকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখানে আমরা এক প্রকার বন্দি জীবন কাটাচ্ছি। আমরা এখানেও নিরাপদ মনে করছি না।’

রশিদুল্লাহ বলেন, অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হুমকির বিষয়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রশাসন ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সহ আইন-শৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। এরপরই গত ১৩ ও ১৪ অক্টোবর মুহিবুল্লাহ’র পরিবারের সদস্যরা সহ ঘনিষ্ট স্বজনদের ক্যাম্প থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন প্রশাসন। তারা এখন প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অবস্থান করছেন।

আরএসপিএইচআর ভাইস চেয়ারম্যান রশিদুল্লাহ বলেন- ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ছাড়া তৃতীয় কোন দেশে যেতে চাই। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় (আরআরআরসি) কে গত ১০ অক্টোবর বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি। এরপরই আমাদেরকে ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ মো. রেজওয়ান হায়াত বলেন- ‘নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র স্বজনরা অন্যকোন দেশে যেতে চায় কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। তাদের কাছ থেকে এ ধরণের কোন লিখিত আবেদন পাওয়া যায়নি।’ এ ধরণের কোন আবেদন পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর একজন কর্মকর্তা বলেন নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিহত মুহিবুল্লাহ’র স্বজনদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের অনেকে এই হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888