শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

আমাদের বেড়ে ওঠা এবং গরীবের রবিন হুড মুজিব ভাই

রিদওয়ান আলী

আমরা তখোন টগবগে যু্বক তরুন। সতেরো আঠারো বয়েস সবে মাত্র। পড়া লেখা, ঘর বাড়ি কিছু ভালো লাগে না। আকাশে উড়ি। বাতাসে ভাসি এ অবস্থা। প্রেমে পড়ি, প্রেম করি, প্রেমিকাকে মনের কথা বলতে পারি না। এভাবেই দিন কাটে।

বড় বোন অবিবাহিত ছিলো। খুব কঠিন করে গাইড করতো। মেট্রিক পরীক্ষা কোন রকমে দিয়েছিলাম। তখোন কঠিন ছিলো। এখনো কঠিন কিনা জানি না। তারপরেও সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ দিলাম।

একদিন শুনি ইলেকশান আসতেছে। সবাই মিছিল সভা ডাক দিচ্ছে। ককসবাজার বিমান বন্দর সড়কে হট্টিটি পাড়া আমাদের গ্রাম। আওয়ামী লীগের ঘাটি। এ কে এম মোজাম্মেল হক সাহেবের এলাকা। ককসবাজার এরকম নেতা আর শত বছরেও পাবে না।

খেলাঘর, সামাজিক সংগঠন করতাম। খুব ছোট বয়সেই রাজনীতিটা বুঝতে শিখি। মাহবুব ভাই তখন ককসবাজার জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারী। হট্টিটি পাড়ায় এ কে এম মোজাম্মেল হক সাহেবের বাসায় আসতেন। বর্তমান ককসবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহবুব ভাই এলাকার আনসারী ভাইকে ছাত্রলীগে নিয়ে আসেন। এলাকার বড় ভাই আনসারী আমাদের মিছিলে নিয়ে যান। মিছিলে প্রথম শ্লোগান শিখি জয় বাংলা। এক বারুদ আগুন নিয়ে মিছিলে নেমে পড়তাম। গোলাম আজমের কুশপুত্তলিকা দাহ করতাম। এগুলো ভাবলে গা শিউরে ওঠে। মামলা, শিবিরের নৃশংসতার কারণে দীর্ঘ পাঁচটি বছর ককসবাজার সরকারি কলেজে পড়ালেখা করা হয়নি। টাকার অভাবে ককসবাজারের বাইরে গিয়ে স্টাডিটা সামনে নিয়ে যেতে পারেনি।

পরে দুই হাজার সাত সালে কেয়ারটেকার সরকার আসলে ককসবাজার সরকারি কলেজে আবার ভর্তি হয়ে ডিগ্রি অর্জন করে পরবর্তীতে ককসবাজার আইন কলেজ থেকে আইন পড়া শেষ করে ককসবাজার কোর্টে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাক্টিস করছি। আমারও অনেক মামলা ছিলো।পরে সবগুলো থেকে খালাস পাই।

যাক ইলেকশানের কথা বলছিলাম। এ কে এম মোজাম্মেল হক তার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে মুজিবুর রহমানকে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। সাতানব্বই আটানববই সালে ককসবাজার ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান পদে মুজিব ভাই জামাতের প্রার্থী মাওলানা গফুর আহমদের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিজয় লাভ করেন। এটিই ছিলো মুজিব ভাইয়ের রাজনীতিতে বড় টার্নিং পয়েন্ট।

কয়েকটা কথা লেখা হয়নি। ইলেকশানের আগেই জামাত শিবিরের ক্যাডাররা বেশ কয়েকবার মুজিব ভাই কে হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো। পরে যখন মুজিব ভাই ইলেকশানে জেতেন। জামাত শিবির হরতাল জ্বালাও পোড়াও শুরু করে দেয়।

এখনকার মতো জামাত শিবিরের এতো নরম সংঘটন ছিলো না তখন। হরতালে ব্যাপক সহিংসতায় তখনকার ককসবাজর সরকারি কলেজ শিবিরের সভাপতি আবু নাছের পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। এরপরে জামাত শিবিরের সন্ত্রাসীরা আরো মারমুখী হয়ে উঠে।

ঐ সময়ই একদিন মুজিব ভাই ঝাউতলায় ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের ভেতরে চা খাচ্ছিলেন। হত্যার মিশন সাকসেস করার জন্য গোপন ভাবে হঠাৎ একে ফোরটি সেভেন সহ ভারী অস্ত্র নিয়ে একটি খোলা জীপে করে বিশ থেকে পঁচিশ জন শিবিরের ক্যাডার ডায়মন্ড রেস্টুরেন্টের সামনে নামে। যে ই ডায়মন্ডে ঢুকবে তখনই ভুল বশত বন্দুক থেকে একটি গুলি মিশ ফায়ার হয়ে যায়।

গুলির আওয়াজ শোনে ডায়মন্ড হোটেলের ভেতর থেকে মুজিব ভাইয়েরা সেখানে যে কজন ছিলেন নিরাপদে সরে পড়েন। ঐদিনই এলাকার যুবক কামালকে কাছে পেয়ে শিবিরের সন্ত্রাসীরা উপুর্যপুরী গুলি করে পালিয়ে যায়। সেদিন এলাকার শত শত মানুষ ককসবাজার হসপিটাল রোড়ে অবস্থিত জামাত শিবিরের অফিস পুড়িয়ে দেয়।

ভাগ্য গুনে মুজিব ভাই সেদিন বেঁচে যান। মুজিব ভাই পরে ককসবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পাড়ায় পাড়ায় শহর আওয়ামী লীগের শক্ত ভিত তৈরি করেন। এখন সে দায়িত্ব পালন করছে নজীব ভাই আর উজ্জ্বল দা।

মুজিব ভাই ককসবাজার আওয়ামী লীগে নিজের অবস্থানকে অনেক উপরে নিয়ে যান।
সহ্য করতে না পেরে আওয়ামী লীগেই ঘাপটি মেরে থাকা একটি গ্রুপ ককসবাজার শহীদ মিনারে রাতে ফুল দেওয়ার সময় মুজিব ভাইকে গুলি করেন। সেদিনও মুজিব ভাই অলৌকিক ভাবে বেঁচে যান।

২০১৩ সালের হেফাজতের তান্ডব শুরু হয়। পরিকল্পনা করে ককসবাজার শহরে ব্যপক সহিংসতা চালাবে। মুজিব ভাই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেতা কর্মীদের নিয়ে ককসবাজার শহরকে হেফাজতের তান্ডব থেকে রক্ষা করেন।

আলী আহমদ কিছুদিন আগে ককসবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। ককসবাজার থানায় পুলিশ তাকে নির্যাতন করছে খবর পেয়েই মুজিব ভাই ছুটে যান। সেখানে পুলিশ অকস্মাৎ গুলি করা শুরু করে দেয়।মুজিব ভাই সেদিনও প্রাণে বেঁচে যান।

গত বছর ভয়াবহ করোনা যখন শুরু হয়ে গেলো চারিদিকে সব কিছু বন্ধ। আতংক। মানুষের ঘরে আগুন জ্বলছে না।খাবে কি? মুজিব ভাই সাধ্যমত নিজের কাছে যা কিছু আছে তা নিয়েই সবাইকে সহযোগীতা করতে লাগলেন।

ফলে নিজে করোনায় আক্রান্ত হলেন। মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। ফিরে এসেছেন মানুষের ভালবাসায়। মুজিব ভাই ককসবাজার পৌর মেয়র। ককসবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। অনেক মিছিল, আন্দোলন, সংগ্রাম থেকে পোড় খেয়ে খেয়ে এ পর্যায়ে এসেছেন।

মুজিব ভাইয়ের পিতা মরহুম ছিদ্দিক আহমদ ককসবাজারের একজন অনেক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। অনেকের কাছে শোনেছি মুজিব ভাইয়ের পিতা সত্তর আশির দশকেই আওয়ামী লীগের ঘোর দুঃসময়ে অর্থ কড়ি দিয়ে নিরবে নিবৃত্তে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করতেন।
মুজিব ভাই ককসবাজার সরকারি কলেজে পড়ালেখা করতেন।সরাসরি ভোটে ককসবাজার কলেজে জি এস নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কলেজে পাপিয়া ভাবীর সাথে পরিচয় তারপর প্রেম। স্ত্রী চাইতেন স্বামী একটু সংসারের প্রতি মনোযোগী হবে। মুজিব ভাই তেমন সময় দিতে পারতেন না।সব সময় মানুষ নিয়ে থাকতেন।মানুষও লেগে থাকতো। মুজিব ভাই অনেক চেস্টা করেছিলেন সংসার ধরে রাখার। পারেন নি।ভাবী ডিভোর্স নিয়ে ঢাকায় চলে যান।

মুজিব ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রীও হঠাৎ দুরারোগ্য ব্যধীতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
রাজনীতি করলে ব্যক্তি জীবনের অভিমান, কস্টও পাথরের নিচে আসলে চাপা পড়ে যায়।
আমার বড় ভাইকে ও নিজের আপন বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতেন। একদিন বলছিলেন- তিনি পৌর মেয়র।কউক প্রধান সড়ক সংস্কার করছে।কাজের ধীরগতিতে মানুষ সীমাহীন কস্টে পাচ্ছে।কস্টে যেনো তার বুকটাও ভেঙে যাচ্ছে।

কদিন আগেই ককসবাজার শহরের পরিচিত মানসিক প্রতিবন্ধী নুর মোহাম্মদ কে মোটর সাইকেল সজোরে আঘাত করে। নুর মোহাম্মদের হাত ভেঙে যায়।মুজিব ভাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। খবর পেয়েই করোনায় ভারতে মৃত্যুবরণ করা বকসী ভাইয়ের স্ত্রীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। নিজের পিতার রেখে যাওয়া কোটি কোটি টাকার ব্যবসা রাজনীতি করার জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন।

কথিত আছে অনেক সচ্ছল মানুষও করেনায় সব হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন।তাদের ও গোপন ভাবে মুজিব ভাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকের তো সাধ্য থাকেনা।মুজিব ভাই নিজের খরচেই শত শত যুবকের, মেয়ের বিয়ের অনুস্টানে সহযোগিতা করে যান।

হেফাজতের তান্ডবের সময় গণজাগরণ মঞ্চের আমাদের সাহসের বাতিঘর ছিলেন মুজিব ভাই। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে ক্ষমতাসীনদের নামে বেনামে বিভিন্ন গ্রুপ সৃস্টি হয়েছে। ককসবাজারের বিভিন্ন জায়গায় এদের দখলে বেদখলে মানুষ অতিস্ট।
ভুক্ত ভোগী মানুষ মুজিব ভাইয়ের কাছে আসলে মুজিব ভাই তাদের পাশে দাঁড়ান।রক্ষা করে দেন বিভিন্ন জায়গা জমি।

ফলে নাখোশ একটি গ্রুপ মুজিব ভাইয়ের পিছু ছাড়ছেনা।বিভিন্ন ভাবে ফেসবুকে, অনলাইনে অপপ্রচার করেই যাচ্ছে। তারপরেও হাজার সমালোচনা আসলেও সাধারণ মানুষ যখন মুজিব ভাইয়ের কাছে আসেন তখন তিনি সত্যিকারের রবিন হুড হয়ে যান।

এখানেই আমাদের ভরষা।ককসবাজারে একজন মুজিব আছে।আছেন আমাদের একজন রূপকথার রবিন হুড!!

লেখক : আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888