বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

৫ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষ লকডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায়’ উখিয়া ও টেকনাফের পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন।

শুক্রবার থেকে উখিয়া ও টেকনাফের এ পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন জানিয়েছেন, যা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

এগুলো হল, উখিয়ার ২-ডব্লিউ, ৩, ৪, ১৫ এবং টেকনাফের ২৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, বুধবার পর্যন্ত কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬৩ জন এবং এদের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন রোহিঙ্গা। এ পর্যন্ত করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪১ হাজার ৪৭৭ জনের।

আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৬৩৯ জন রোহিঙ্গা। এখনো আইসোলেশনে রয়েছে ২১১ জন।

আক্রান্ত ও মারা যাওয়াদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় প্রকোপ শুরু হওয়ার পর তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই। এখন ক্যাম্পগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার উর্ধ্বমুখি রয়েছে।

এতে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আগেভাগেই লকডাউন ঘোষণা দিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে উখিয়ার ৪ টি এবং টেকনাফের ১ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লডাউন ঘোষণা করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা বলেন, করোনা মহামারির দ্বিতীয় প্রকোপকালে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সংক্রমণের হার বেড়েই চলছে। যা প্রথম প্রকোপকালেরই চাইতে আশংকাজনক। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে করোনা সংক্রমণের হার উর্ধ্বগতিতে থাকা ক্যাম্পগুলোতে লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

” ইতিমধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের ৫ টি ক্যাম্পে লকডাউন ঘোষণার ব্যাপারে ক্যাম্প প্রশাসনসহ রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। এতে লকডাউন কার্যকরে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। “

নির্দেশনার তথ্য উল্লেখ করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, ” লকডাউন ঘোষিত ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা নিজেদের ক্যাম্পের বাইরে যাতায়ত করতে পারবে না। চিকিৎসা ও খাদ্যসহ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যে কারো চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। “
এছাড়া একান্ত প্রয়োজন ছাড়া লকডাউন ঘোষিত ক্যাম্পগুলোতে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সীমিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেন সামছু-দৌজা।

তিনি জানান, সংক্রমণ হার বাড়াতে থাকা উখিয়া ও টেকনাফের এই পাঁচটি ক্যাম্পে শুক্রবার থেকে লকডাউন কার্যকর শুরু হবে। যা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক শাখার সমন্বয়ক ডা. তোহা ভূঁইয়া বলেন, এমনিতেই গত ৩/৪ মাস ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। যা গত এক বছরের আক্রান্তের সংখ্যা তুলনায় বেশি।

” সম্প্রতি গত এক মাস ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে করোনা আক্রান্তের বেড়েই চলছে। মারাও গেছে ৩ জন। গত এক বছরে যে পরিমাণ আক্রান্ত হয়েছে তার প্রায় অর্ধের কাছাকাছি হচ্ছে গত ৩/৪ মাসের মধ্যে। “

তোহা বলেন, ” স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে প্রাথমিকভাবে ধারণা হচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় প্রকোপকালে গত এক মাস রমজানে ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সামাজিকভাবে জনসমাগম হয়েছে বেশি। রোজার মাসে প্রতিদিনই ক্যাম্পের মসজিদগুলোতে তারাবির নামাজ আদায় এবং ঈদের দিনগুলোতে ঘিঞ্জির মত বসতির বাসিন্দা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার সমাগম ঘটেছে। এতে সংক্রমণের হারও প্রতিদিনই উর্ধ্বমুখি। “

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেই প্রশাসন লকডাউন ঘোষণার নির্দেশনা জারি করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888